শক্তি কি? শক্তির ফর্ম, প্রকার ইত্যাদিঃ একটুখানি বিজ্ঞানমনস্কতা
পদার্থবিজ্ঞানে, শক্তি বলতে কাজ করার ক্ষমতাকে বোঝায়। শক্তি বিভিন্ন আকারে বিদ্যমান থাকতে পারে, যেমন তাপ শক্তি, গতিশক্তি, আলোক শক্তি ইত্যাদি। এই শক্তিগুলি তৈরি বা ধ্বংস করা যায় না শুধুমাত্র এক ফর্ম থেকে অন্য ফর্মে রূপান্তরিত হয়। এই নিবন্ধে, শক্তির সংজ্ঞা, প্রকার এবং শক্তির বিভিন্ন রূপ, ব্যাখ্যা করা হয়েছে।
পদার্থবিজ্ঞানের ভাষায়, শক্তি বলতে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর কাজ করার ক্ষমতা বোঝায়। মূলত, শক্তি হল পদার্থের একটি রূপ যা সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না, এক রূপ থেকে অন্য রূপ পরিবর্তিত হতে পারে এবং এক বস্তু থেকে অন্য বস্তুতে যেতে পারে। বিখ্যাত E=mc² সূত্র মতে শক্তি পদার্থের অন্তর্নিহিত হতে পারে। যেমন বিদারণ বা ফিশন প্রতিক্রিয়া শক্তি পরিমাপ করা হয় কাজের পরিমাণ দ্বারা। কাজ বা কার্য হচ্ছে বল ও বলের দিকে সরণের গুণফল। অর্থাৎ, বস্তুর শক্তি হল বস্তুটি যে পরিমাণ কাজ করতে পারে তার মোট পরিমাণ। সুতরাং কাজের একক এবং শক্তির একক একই – জুল। ১ জুল = ১ নিউটন Х ১ মিটার। শক্তি একটি অদিক রাশি।
কোন কিছু সরাতে বা পরিবর্তন করার জন্য মূলত বলপ্রয়োগ হয়। এই পরিবর্তনের সময়, শক্তি এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যায় বা ফর্ম পরিবর্তন করে। শক্তি অনেক আকারে বিদ্যমান থাকতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ, তাপ হল গতিশক্তির একটি রূপ যা পদার্থের কণাগুলো উত্তপ্ত হওয়ার সময় কম্পনশীল আকারে গতিতে বিদ্যমান থাকে।
সুতরাং, সহজভাবে বললে, ‘শক্তি হল কাজ করার ক্ষমতা’। শক্তির SI একক হল জুল।
শক্তি সংরক্ষণের নীতি
- যে কোন প্রকার শক্তিকে অন্য কোন রূপে রূপান্তরিত করা যায়, কিন্তু শক্তির মোট পরিমাণ একই থাকে। একে শক্তি সংরক্ষণের আইন বা শক্তি সংরক্ষণের আইন বলা হয়।
- শক্তি সৃষ্টি বা ধ্বংস হয় না, শক্তি শুধুমাত্র এক ফর্ম থেকে অন্য ফর্ম বা একাধিক ফর্ম পরিবর্তিত হতে পারে। মহাবিশ্বে মোট শক্তির পরিমাণ স্থির এবং অপরিবর্তনীয়।
- শক্তি যখন এক রূপ থেকে অন্য রূপ পরিবর্তিত হয় তখন শক্তির কোন ক্ষতি হয় না। এক বা একাধিক বস্তু যেমন শক্তি হারায়, তেমনি এক বা একাধিক বস্তু ঠিক একই পরিমাণ শক্তি লাভ করে। কোন নতুন শক্তি সৃষ্টি হয় না এবং কোন শক্তি ধ্বংস হয় না। তাই এই মহাবিশ্ব সৃষ্টির মুহূর্তে যে পরিমাণ শক্তির অস্তিত্ব ছিল, এখনও সেই পরিমাণ শক্তিই রয়েছে।
শক্তির রূপঃ
শক্তির বিভিন্ন রূপ বা প্রকার রয়েছে। শক্তির প্রধান রূপগুলি হল:
- যান্ত্রিক শক্তি
- তাপ শক্তি
- আলোক শক্তি
- চৌম্বক বল
- বিদ্যুৎ শক্তি
- পারমাণবিক শক্তি
- শব্দ শক্তি
- রাসায়নিক শক্তি
- সৌরশক্তি
নিম্নে উপরের লিখিত শক্তির প্রকার গুলোর আলোচনা করা হলোঃ
১. যান্ত্রিক শক্তি:
যান্ত্রিক শক্তি হল সেই শক্তি যা একটি বস্তু তার স্থির অবস্থান বা গতির অবস্থার জন্য গ্রহণ করে। উদাহরণস্বরূপ, যখন জল একটি উচ্চ স্থান থেকে নেমে আসে, এটি যান্ত্রিক শক্তি অর্জন করে।
২. তাপ শক্তি:
তাপ শক্তির একটি রূপ। তাপ অনেক কিছু করতে পারে। যেমন পেট্রোল, ডিজেল ইত্যাদি জ্বালানি পোড়ানোর তাপ থেকে মোটর গাড়ি, বিমান ইত্যাদি চালানো হয়।
৩. আলোক শক্তি:
সূর্যের আলো বা তাপ কোনো বস্তুর ওপর পড়লে বস্তুটি উত্তপ্ত হয় এবং বস্তুর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়। এই রূপান্তরে, আলোক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়। এছাড়াও, আলোক শক্তি আমাদের চোখে প্রবেশ করে এবং দৃষ্টিশক্তির অনুভূতি জাগায়।
৪. বৈদ্যুতিক শক্তি:
বিদ্যুতের সাহায্যে পাখা ঘোরে, বাতি জ্বলে। বৈদ্যুতিক শক্তির মাধ্যমে বৈদ্যুতিক মোটর ঘুরিয়ে যান্ত্রিক শক্তি পাওয়া যায়। বৈদ্যুতিক শক্তি এখন পৃথিবীর মাদার শক্তিতে রূপান্তরিত হচ্ছে।
৫. রাসায়নিক শক্তি:
রাসায়নিক সংমিশ্রণ বা রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে শক্তি উৎপন্ন হয় তাকে রাসায়নিক শক্তি বলে। উদাহরণস্বরূপ, চুনের সাথে জল মেশানো হলে, চুন ফুটতে শুরু করে এবং তাপ উৎপন্ন হয়। এখানে চুন ও পানির রাসায়নিক বিক্রিয়ায় চুন উৎপন্ন হয় এবং রাসায়নিক শক্তি তাপ শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
যে আকর্ষণ বল একটি পদার্থের একটি পরমাণুকে অন্য পরমাণুর সাথে বা একটি অণুকে অন্য অণুর সাথে আবদ্ধ করে তাকে রাসায়নিক শক্তি বলে।
৬. পারমাণবিক শক্তি:
পরমাণুর নিউক্লিয়াস ভাঙার পর যে শক্তি পাওয়া যায় বা তার ভিতরে সঞ্চিত শক্তি পুঞ্জিভূত থাকলে তাকে পারমাণবিক শক্তি বলে। পারমাণবিক শক্তি প্রধানত পারমাণবিক বিভাজন এবং ফিউশন প্রক্রিয়া দ্বারা উত্পাদিত হয়।
৭. শব্দ শক্তি:
অর্থাৎ শব্দ শক্তি হল এক ধরনের কম্পন যা গ্যাস, তরল বা কঠিন মাধ্যমে শব্দ তরঙ্গ হিসাবে সঞ্চালিত হয়। যেমন অনেক সময় বিকট শব্দে জানালার কাঁচ ভেঙে যায়। শব্দ শক্তিকে যান্ত্রিক শক্তিতে রূপান্তরের কারণে এটি ঘটে।
৮. চৌম্বক শক্তি:
যে শক্তির বলে একটি পদার্থ অন্য পদার্থকে আকর্ষণ বা বিকর্ষণ করে। তখনই তা চৌম্বক শক্তি।
৯. সৌর শক্তি:
সূর্য সকল শক্তির বড় উৎস। আর সূর্য থেকে পাওয়া শক্তি হল সৌরশক্তি। উদ্ভিদ সূর্য থেকে শক্তি বা শর্করা ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব খাদ্য তৈরি করে। অর্থাৎ সৌর শক্তি মূলত সূর্য থেকে প্রাপ্ত শক্তি। কিন্তু আমরা যখন সূর্য থেকে শক্তি ব্যবহার করি, তখন তা সৌরশক্তি হিসাবে বিবেচিত হয়।