বিশাল বাজেট আর রেকর্ড অফিসার নিয়োগ
ব্যাপক আকারে অবৈধ অভিবাসী ধরপাকড়ে প্রস্তুত হচ্ছে আইস
নিজস্ব প্রতিবেদক

যুক্তরাষ্ট্রে ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর ইমিগ্রেশন ক্র্যাকডাউনে উদ্বেগ- উৎকণ্ঠার মধ্যেই আরো ব্যাপক আকারে অবৈধ অভিবাসী ধরপাকড় ও বহিষ্কারের প্রস্তুতি নিচ্ছে ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)। প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসী বহিষ্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে আইস এর নতুন জনবল নিয়োগ, প্রশিক্ষণসহ গ্রেপ্তার প্রক্রিয়া ও যাবতীয় লজিস্টিক ব্যবস্থাপনা সাজানো হচ্ছে জোরেসোরে। অবৈধ অভিবাসী বিতাড়নে এসব নিয়োগ ও আইসের যাবতীয় লজিস্টিক ব্যবস্থাপনায় বিশাল বাজেটও বরাদ্দ করা হয়েছে। যা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সর্বোচ্চ।
আদালতের নির্দেশে বহিষ্কৃত ব্যক্তি, অপরাধে জড়িত কিংবা একাধিকবার অবৈধভাবে প্রবেশ ও ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়া অভিবাসীদে সন্ধান ও গ্রেপ্তার কার্যক্রম দ্রুত করতে ব্যাপকহারে অভিযানে নামবে আইস। এদিকে আইস ডিটেনশন সেন্টার সম্প্রসারণ করা হচ্ছে।
এপি নিউজের প্রতিবেদনে বলা হয়, বছরের পর বছর ধরে আইস কর্মীসংখ্যা প্রায় একই জায়গায় স্থির ছিল। কিন্তু এবার ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি বাস্তবায়নে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। কংগ্রেস সম্প্রতি যে বরাদ্দ অনুমোদন করেছে, তা আইস এর জন্য এক বিশাল বরাদ্দ ৭৬.৫ বিলিয়ন ডলার। সংস্থাটির বর্তমান বার্ষিক বাজেটের তুলনায় এটি প্রায় দশ গুণ বেশি। এর মধ্যে প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার কেবল নতুন কর্মী নিয়োগে ব্যয় হবে। বর্তমানে ৬,৫০০ ডিপোর্টেশন অফিসার থাকলেও সংস্থার অস্থায়ী প্রধান টড লায়ন্সের ঘোষণা অনুযায়ী বছরের শেষ নাগাদ আরও ১০ হাজার অফিসার নিয়োগ দেওয়ার লক্ষ্য নেওয়া হয়েছে।
এই বিশাল নিয়োগ প্রক্রিয়া চালাতে ইতিমধ্যেই নতুন রিক্রুটিং ওয়েবসাইট চালু করা হয়েছে, ক্যারিয়ার এক্সপোতে আইস এর র উপস্থিতি বাড়ানো হয়েছে এবং সর্বোচ্চ ৫০ হাজার ডলার পর্যন্ত সাইনিং বোনাস ঘোষণা করা হয়েছে। এতে সাড়া পড়েছে ব্যাপকভাবে মাত্র কয়েক মাসে ১ লাখ ২১ হাজার আবেদন জমা পড়েছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য অংশই সাবেক আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য। নতুন নিয়োগপ্রাপ্তরা প্রশিক্ষণ নিচ্ছে জর্জিয়ার ব্রান্সউইক শহরে অবস্থিত ফেডারেল ল’ এনফোর্সমেন্ট ট্রেনিং সেন্টারে, যেখানে শুধু আইস নয়, বিভিন্ন ফেডারেল সংস্থার কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। প্রশিক্ষক সংখ্যা দ্বিগুণ করার পরিকল্পনা চলছে এবং প্রশিক্ষণের সময় কমানোর জন্য নেয়া হয়েছে বিশেষ পদক্ষেপ।
এপির এ প্রতিবেদনে আরো বলা হয় আইস এর বর্তমান অভিযান কার্যক্রম নিয়ে সবচেয়ে বড় বিতর্ক হচ্ছে গ্রেফতার অভিযানে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগ। সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্টের শুরু পর্যন্ত তাদের কর্মকর্তাদের ওপর ১২১টি হামলা হয়েছে, যেখানে গত বছর একই সময়ে এ সংখ্যা ছিল মাত্র ১১। বিশেষ করে লস অ্যাঞ্জেলেসে সাম্প্রতিক অভিযানে সংঘর্ষের পর আইস নতুন নীতি নিয়েছে। এখন থেকে নতুন অফিসারদের গ্যাস মাস্ক ও হেলমেট দেওয়া হবে এবং গ্রেফতার অভিযানে নিরাপত্তা টিম থাকবে। সংস্থার প্রধান লায়ন্স বলেছেন, “আমরা আর কাউকে আমাদের কর্মকর্তাদের দিকে পাথর ছোড়ার সুযোগ দেব না। মাঠে যারা গ্রেফতার করছে, তাদের সুরক্ষা দিতে আলাদা টিম থাকবে।”
এ ছাড়া ঝুঁকিপূর্ণ অভিযানের জন্য বিশেষ ব্যাকআপ টিম গড়ে তোলা হয়েছে। যারা সোয়াট দলের মতো প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। এসব কর্মকর্তারা সামরিক পোশাক, হেলমেট ও আধুনিক অস্ত্রে সজ্জিত এই দলগুলো উচ্চ ঝুঁকির পরোয়ানা বাস্তবায়ন করে এবং বিপজ্জনক আটককৃতদের বহিষ্কার কার্যক্রমে অংশ নেয়। বর্তমানে প্রায় ৪৫০ জন অফিসার বিশেষ এই প্রশিক্ষণ পেয়েছেন। লস অ্যাঞ্জেলেস, পোর্টল্যান্ড ও ওয়াশিংটনে তাদের ব্যবহার করা হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এই টিম আরও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা রয়েছে।
প্রশিক্ষণের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো আইনগত সীমা ও অধিকার সম্পর্কে শিক্ষা। নতুন কর্মকর্তাদের অভিবাসন আইন ও যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী নিয়ে পড়ানো হচ্ছে। প্রশাসনিক পরোয়ানা নিয়ে সাধারণত আইস অভিযান চালায়, তবে এটি দিয়ে কোনো বাড়িতে জোর করে প্রবেশের অধিকার নেই। বাসিন্দা যদি প্রবেশের অনুমতি না দেন, তবে অফিসারদের সেখান থেকে চলে যেতে হয়। গাড়ির ভেতর থেকে কাউকে আটক করার অধিকার আইসিই নিজেদের রয়েছে বলে মনে করে, তবে মোটরহোমের মতো ক্ষেত্রে তারা আইনজীবীদের পরামর্শ নেয়। এই বিষয়গুলো নিয়ে দীর্ঘদিন ধরেই সরকারের সঙ্গে অভিবাসন অধিকারকর্মীদের মতপার্থক্য রয়েছে।
প্রশিক্ষণ, আধুনিক সরঞ্জাম, বিশেষ টিম এবং আইনগত কৌশল সবকিছু মিলিয়ে আইস এখন এক নতুন রূপে এগোচ্ছে, যা অভিবাসীদের উদ্বেগকে আরও তীব্র করে তুলছে।
আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

ট্রাম্পের বেশিরভাগ শুল্কই অবৈধ, ফেডারেল আদালতের রায়

স্থানীয় করোনারের বিরুদ্ধে তদন্ত, পদত্যাগের দাবি / কলোরাডোয় ফিউনারেল হোম থেকে ২৪টি পচা মৃতদেহ উদ্ধার

পাসপোর্ট ছাড়াও ভোটার হতে পারবেন প্রবাসীরা

ভুয়া কাগজ দিয়ে ভিসা আবেদন করলে ব্যবস্থা নেবে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাস

বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত শিশু কাইরান কাজী মাস্কের স্পেসএক্স ছেড়ে নিতে যাচ্ছে নতুন চ্যালেঞ্জ
