November 23, 2024
কম্পিউটার আবিষ্কারের একাল সেকাল পর্ব-১

কম্পিউটার আবিষ্কারের একাল সেকাল পর্ব-১

কম্পিউটার আবিষ্কারের একাল সেকাল পর্ব-১

কম্পিউটার আবিষ্কারের একাল সেকাল পর্ব-১

কম্পিউটার বিজ্ঞানের যুগান্তকারী বিস্ময় এবং আধুনিক আবিষ্কারগুলির মধ্যে একটি। শিল্প বিপ্লবের পর থেকে, যান্ত্রিক প্রকৌশলের জয় অব্যাহত রয়েছে। যে যন্ত্র মানুষের কর্মময় জীবনে অনুগত ভৃত্যের মতো আদেশ পালনের জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকে তাকে কম্পিউটার বলে। ‘কম্পিউটার’ শব্দটি ল্যাটিন শব্দ ‘কম্পিউট’ (compute) থেকে এসেছে।

আক্ষরিক অর্থে, কম্পিউটার হল এক ধরনের কম্পিউটিং ডিভাইস গণনাকারী যন্ত্র । কিন্তু এখন কম্পিউটার শুধু গণনাকারী যন্ত্র বা ক্যালকুলেটর নয়। এখন কম্পিউটার বলতে এমন একটি ইলেকট্রনিক যন্ত্রকে বোঝায় যা অগণিত তথ্য বা উপাত্ত সংগ্রহ করে খুব দ্রুত ও নির্ভুলভাবে সংরক্ষণ, গণনা, বিশ্লেষণ ইত্যাদি করতে পারে এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারে।

আমরা সবাই আধুনিক বিজ্ঞানের যুগের অন্তর্গত। এই যুগের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় কম্পিউটার নামক এই মেশিনের আধুনিক রূপ একদিনে পাওয়া যায়নি। এ জন্য বিশেষজ্ঞদের যুগ যুগ ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করতে হয়েছে । ইতিমধ্যে, এই ডিভাইসটি অনেকবার পরিবর্তিত হয়েছে। অবশেষে আজকের আধুনিক রূপ পাওয়া গেছে এবং এর ব্যবহারও সহজ হয়েছে। কম্পিউটার নামক এই যন্ত্রটি কোথা থেকে এবং কীভাবে এসেছে তা জানার জন্য সবাই নিশ্চয়ই আগ্রহী, তাছাড়া এটা জানা একান্ত প্রয়োজন।  কম্পিউটারের জন্ম থেকে এই সময়কালকে মোটামুটিভাবে তিনটি যুগে ভাগ করা যায়, যথা:

  • প্রাচীন যুগ,
  • মধ্যযুগ এবং
  • বর্তমান বা আধুনিক যুগ।

আমরা পর্যায়ক্রমে কম্পিউটারের এই ইতিহাসের যুগ বিবর্তন নিয়ে আলোচনা করব।.

১প্রাচীন যুগ:

মূলত: কম্পিউটারের জন্ম হাজার হাজার বছর আগে। খ্রিস্টের প্রায় ৩,০০০ বছর আগে, চীনে এক ধরণের গণনা যন্ত্র ব্যবহার করা হয়েছিল। যার নাম ছিল অ্যাবাকাস (অ্যাবাকাস)। অ্যাবাকাস নামক এই যন্ত্রের সাহায্যে প্রাচীনকালে বিভিন্নভাবে  গণনা করা হত। এটা অনস্বীকার্য যে আধুনিক ক্যালকুলেটর তৈরির ধারণা এই অ্যাবাকাস থেকেই এসেছে। এই মেশিনে গণনার জন্য বেশ কিছু গোলাকার ডিস্ক ব্যবহার করা হয়েছিল। এই ডিস্ক ঘুরিয়ে গণনার কাজ করা হতো। কম্পিউটারকে যদি বড় মাপের গণনার যন্ত্র হিসেবে ধরা হয়, তাহলে এই অ্যাবাকাসই কম্পিউটারের প্রথম চিন্তার সূচনা।

২.মধ্যযুগ:

অ্যাবাকাস আবিষ্কারের পর হাজার হাজার বছর কেটে গেছে। সভ্যতার অগ্রগতির সাথে সাথে মানুষের চিন্তা চেতনা, জ্ঞান ও জ্ঞানের ক্ষেত্রও বড় ও উন্নত হয়। ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের দিকে চীনে অ্যাবাকাস তৈরি হয়েছিল।

এবং প্রথম যান্ত্রিক গণনা যন্ত্রটি ১৬৪৫ খ্রিস্টাব্দে তৈরি হয়েছিল। স্যার ব্লেইস পাস্কাল নামে একজন ফরাসি বিজ্ঞানী এটি তৈরি করেন। বিজ্ঞানীর নামানুসারে যন্ত্রটির নামকরণ করা হয় প্যাসকেলাইন। এর মেকানিজম অ্যাবাকাসের মতোই ছিল, তবে চাকতির পরিবর্তে এটি দাঁতযুক্ত চাকা বা গিয়ার ব্যবহার করত। মানুষ প্রায় পঞ্চাশ বছর ধরে এই ডিভাইসটি ব্যবহার করে আসছে।

১৯৬৪ সালের দিকে গটফ্রিড উইলহেম ভন লিবনিজ প্যাসকেলাইন যন্ত্রের একটি সামান্য উন্নত সংস্করণ তৈরি করেছিলেন। তিনি এই যন্ত্রটির নাম দেন স্টেপড রেকনার। সে অবস্থায়  প্রায় আরো দেড়শ বছর পেরিয়ে গেছে। ১৮২০ -এর দশকের মাঝামাঝি, টমাস ডি কমার স্টেপড রেকনারকে উন্নত করেছিলেন। ততদিনে মানুষও বেশ আধুনিক হয়ে উঠেছে। নতুন প্রযুক্তির জন্য তাদের অনুসন্ধান অব্যাহত রয়েছে। এবং এর ফলস্বরূপ, ১৮২১ সালে একটি বিপ্লব ঘটেছিল।

চার্লস ব্যাবেজ নামে একজন ইংরেজ গণিতবিদ বিভিন্ন সংখ্যাসূচক তথ্যের সহজ সমাধানের জন্য একটি মেশিন তৈরি করেছিলেন। যার নাম ডিফারেন্স ইঞ্জিন। পরবর্তীতে এই যন্ত্রটিকে আধুনিকায়ন করা হয় এবং নামকরণ করা হয় এনালাইটিক্যাল ইঞ্জিন বা  বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিন। ১৮২১ সালের আগে যে মেশিনগুলি তৈরি করা হয়েছিল সেগুলি কেবল সংখ্যা এবং সংখ্যা দিয়ে কাজ করেছিল, তবে চার্লস ব্যাবেজের উদ্ভাবিত এই মেশিনটি সংখ্যার পাশাপাশি ডেটা নিয়েও কাজ করতে পারে। কিন্তু এই মেশিনেরও কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। মেশিনটিকে একটি ছিদ্রযুক্ত পাঞ্চ কার্ড দিয়ে পরিচালনা করতে হত এবং এই পাঞ্চ কার্ডটি শুধুমাত্র একবার ব্যবহার করা যেতো। এটি দ্বিতীয়বার ব্যবহার করার জন্য একটি নতুন কার্ডের প্রয়োজন হতো । Bavege এর মেশিনের তিনটি অংশ ছিল। তা হল-

  • তথ্য বা নির্দেশ অংশ – এই অংশ মেশিন পরিচালনার জন্য সমস্ত তথ্য বা নির্দেশাবলী এবং বিভিন্ন পর্যায়ের ফলাফল থাকতো ।
  • ফলাফল অংশ – এই অংশটি গণনার উপযুক্ত ফলাফল প্রদান করতো ।
  • ডেটা স্টোরেজ – এই বিভাগে ডেটা সংরক্ষণ করা যেতো।

চার্লস ব্যাবেজের বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিনে এমন সমস্ত অংশ ছিল যা একটি আধুনিক কম্পিউটারে দেখা যায় বা বিদ্যমান। তদুপরি, এটিই ছিল প্রথম মেশিন যা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সমস্ত গণনা করতে পারত। তাই নিশ্চিতভাবে বলা যায় চার্লস ব্যাবেজই কম্পিউটারের জনক।

১৮৯০ ডঃ হারম্যান হলরিথ, একজন যান্ত্রিক প্রকৌশলী, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আদমশুমারি ব্যুরোর জন্য কাজ করেছিলেন। সে সময় আমেরিকান সেন্সাস ব্যুরো নামে একটি সরকারি সংস্থা লোক গণনার কাজ হাতে নেয়। তারা নিশ্চিতভাবে জানত যে এই গণনার কাজে যেমন প্রচুর লোকবল লাগবে, তেমনি অনেক সময়ও লাগবে। প্রায় দশ বছরের আগে গণনা শেষ করা যাবে না, তারা ভেবেছিল।

ড. হারম্যান এই ধারণা ভেঙ্গে দেন । তিনি চার্লস ব্যাবেজের মেশিনকে ট্যাবুলেটরের সাথে একত্রিত করেন। এবং এই মেশিনের বৈশিষ্ট্য হল এটি কাগজের তৈরি পাঞ্চ কার্ড ব্যবহার করতে পারে আর এই পাঞ্চকার্ডে ছিদ্রও করতে পারতো তার এই নতুন যন্ত্র টেবুলেটর।। সে সময় ডিভাইসটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিল।

এই যন্ত্র আবিষ্কারের সঙ্গে সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে অবিশ্বাস্যভাবে তোলপাড় শুরু হয়। ডঃ হারমান মাত্র তিন বছরে এই মেশিন দিয়ে দশ বছরের আদমশুমারির কাজ শেষ করেছেন। এই অসাধারণ সাফল্য ডঃ হারম্যানকে নিজেই একটি কোম্পানি শুরু করতে অনুপ্রাণিত করেছিল। নাম ট্যাবুলেটিং মেশিন কোম্পানি। এই কোম্পানিটি পরবর্তীতে বিশ্বের বৃহত্তম কম্পিউটার কোম্পানি আইবিএম নামে পরিচিতি লাভ করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X