৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ: ড. ইউনূসকে চিঠিতে আরো যা লিখলেন ট্রাম্প
অনলাইন ডেস্ক

তিন মাস ধরে চলা আলোচনা ও বাণিজ্য মূল্যায়নের পর অবশেষে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। শুল্ক কার্যকর হবে আগামী ১ আগস্ট ২০২৫ থেকে।
এর আগে বাংলাদেশের পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক আরোপ করে আলোচনার জন্ম দিয়েছিল ট্রাম্প প্রশাসন। সে সময় বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টকে চিঠি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস।
চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশসহ একাধিক দেশকে তিন মাস সময় দিয়েছিলেন ট্রাম্প, যেন তারা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়। তিনি আহ্বান জানিয়েছিলেন, আলোচনা ও চুক্তির মাধ্যমে এই ঘাটতি নিরসন করতে।
এই সময়সীমার মধ্যে কেবল যুক্তরাজ্য ও ভিয়েতনামের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তি সম্পাদন করতে পেরেছে। ভারতের সঙ্গে চুক্তির আলোচনাও প্রায় চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে বলে জানিয়েছেন মার্কিন কর্মকর্তারা।
তবে সময়সীমা শেষ হওয়ার একদিন আগে হোয়াইট হাউজ থেকে জানানো হয়, এই সময়সীমা ১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। একই সঙ্গে ট্রাম্প ১৪টি দেশের সরকারপ্রধানদের উদ্দেশ্যে ব্যক্তিগতভাবে চিঠি পাঠিয়েছেন এবং চিঠিগুলোর কপি তিনি নিজের সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম Truth Social–এ প্রকাশ করেছেন।
বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টাকে লেখা চিঠির বাংলা অনুবাদ নিচে দেওয়া হলো—
দ্য হোয়াইট হাউস
ওয়াশিংটন
জুলাই ৭, ২০২৫
মাননীয়
মুহাম্মদ ইউনূস
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা
ঢাকা
প্রিয় জনাব ইউনূস,
আপনাকে এই চিঠি পাঠানো আমার জন্য অনেক সম্মানের, যাতে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্কের দৃঢ়তা ও অঙ্গীকারের প্রতিফলন রয়েছে। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কার্যক্রম চালিয়ে যেতে সম্মত হয়েছে, যদিও আপনার মহান দেশের সঙ্গে উল্লেখযোগ্য বাণিজ্য ঘাটতি রয়েছে। তথাপি, আমরা আপনার সঙ্গে সামনে এগিয়ে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তবে তা হবে আরো ভারসাম্যপূর্ণ ও ন্যায্য বাণিজ্যের ভিত্তিতে। সে কারণে আমরা আপনাকে বিশ্বের এক নম্বর বাজার যুক্তরাষ্ট্রের অসাধারণ অর্থনীতিতে অংশগ্রহণ করতে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি। আমরা বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের বাণিজ্যিক সম্পর্ক নিয়ে অনেক বছর আলোচনা করেছি এবং এই সিদ্ধান্তে পৌঁছেছি যে, বাংলাদেশের শুল্ক ও অশুল্ক, নীতিসমূহ এবং বাণিজ্যিক প্রতিবন্ধকতার কারণে যে দীর্ঘমেয়াদি ও স্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতি তৈরি হয়েছে, তা থেকে আমাদের অবশ্যই সরে আসতে হবে। দুঃখজনকভাবে, আমাদের সম্পর্ক একে অপরের সমকক্ষ থেকে অনেক দূরে।
২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো বাংলাদেশের যে কোনো ও সব ধরনের পণ্যের ওপর আমরা মাত্র ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করব। এই শুল্ক সব খাতভিত্তিক শুল্কের অতিরিক্ত হিসেবে প্রযোজ্য হবে। উচ্চ শুল্ক এড়ানোর উদ্দেশ্যে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে পণ্য পাঠানো হলে সেগুলোর ওপরও সেই উচ্চ শুল্ক আরোপ হবে। অনুগ্রহ করে এটা অনুধাবন করেন যে, ৩৫ শতাংশ সংখ্যাটি আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের যে বাণিজ্য ঘাটতি বৈষম্য রয়েছে, তা দূর করার জন্য যা প্রয়োজন তার থেকে অনেক কম। আপনি অবগত যে, যদি বাংলাদেশ বা আপনার দেশের বিভিন্ন কোম্পানি যুক্তরাষ্ট্রে পণ্য উৎপাদন বা তৈরি করার সিদ্ধান্ত নেয়, তাহলে কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। বস্তুত আমরা সম্ভাব্য সব কিছু করব যাতে দ্রুত, পেশাদারত্বের সঙ্গে ও নিয়মিতভাবে অনুমোদন পাওয়া যায়, অন্যভাবে বললে কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই সেই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে।
যদি কোনো কারণে আপনি আপনার শুল্ক বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নেন, তখন আপনি যে পরিমাণ শুল্ক বাড়াবেন, তা আমাদের আরোপিত ৩৫ শতাংশ শুল্কের ওপর যোগ করা হবে। অনুগ্রহ করে এটা উপলব্ধি করুন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি, যেটা স্থায়ী হওয়ার নয়, সেটা তৈরির পেছনে ভূমিকা রাখা বাংলাদেশের অনেক বছরের শুল্ক ও অশুল্ক নীতিসমূহ এবং বাণিজ্য বাধা সংশোধন করার লক্ষ্যে এসব শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এই ঘাটতি আমাদের অর্থনীতির জন্য একটি গুরুতর হুমকি এবং সত্যিকার অর্থে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার জন্যও বড় হুমকি!
আপনার বাণিজ্যিক অংশীদার হিসেবে আমরা আগামী বছরগুলোতে আপনার সঙ্গে একসঙ্গে কাজ করতে চাই। আপনি যদি এখন পর্যন্ত বন্ধ রাখা আপনার বাণিজ্য বাজার যুক্তরাষ্ট্রের জন্য উন্মুক্ত করতে চান এবং শুল্ক, অশুল্ক নীতি ও বাণিজ্য প্রতিবন্ধকতা দূর করেন তাহলে আমরা সম্ভবত এই চিঠির কিছু অংশ পুনর্বিবেচনা করতে পারি। এই শুল্কহার আপনার দেশের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের ওপর ভিত্তি করে বাড়ানো বা কমানো হতে পারে। আপনি কখনোই যুক্তরাষ্ট্রের ওপর হতাশ হবেন না।
এই বিষয়ে মনোযোগ দেওয়ার জন্য আপনাকে ধন্যবাদ।
শুভ কামনাসহ, আমি
বিনীত,
ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প
আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

ওয়াচ লিস্টে লাখ লাখ ন্যাচারালাইজড সিটিজেন / আমেরিকান নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে যেসব কারণে

ক্যাশ রেমিট্যান্স পাঠাতে দিতে হবে ১% ট্যাক্স

আশ্রয়প্রার্থীদের অশনিসংকেত: দ্রত বিতাড়নে ‘ফাস্ট ট্র্যাক’ পরিকল্পনা

৫ মাস পর আইস আটককেন্দ্র থেকে মুক্ত হয়ে ওয়ার্দ সাকেইক / “শুধু জন্মসূত্রে রাষ্ট্রহীন এটাই ‘অপরাধ’ ছিল”

রুশ সেনাবাহিনীতে বিদেশিদের যোগদানের সুযোগ: আইনে সই করলেন পুতিন
