আন্তর্জাতিক

৫ মাস পর আইস আটককেন্দ্র থেকে মুক্ত হয়ে ওয়ার্দ সাকেইক

“শুধু জন্মসূত্রে রাষ্ট্রহীন এটাই ‘অপরাধ’ ছিল”

সোমবার, জুলাই ৭, ২০২৫, ৮:০৭ রাত সর্বশেষ আপডেট: রবিবার, জুলাই ২০, ২০২৫, ৮:৪৮ পূর্বাহ্ন
“শুধু জন্মসূত্রে রাষ্ট্রহীন এটাই ‘অপরাধ’ ছিল”

যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘদিন থেকে বসবাস করেও আইসের হাতে আটক ছিলেন ফিলিস্তিনি নারী ওয়ার্দ সাকেইক। দীর্ঘ পাঁচ মাসের বন্দিদশার পর ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইস)-এর হেফাজত থেকে মুক্ত হয়ে গণমাধ্যমে বলেন, “আমি কোনো অপরাধ করিনি। আমি শুধু জন্মসূত্রে রাষ্ট্রহীন এটাই আমার 'অপরাধ' ছিল। জীবনের পাঁচটি মাস হারিয়ে ফেলেছি।”
তিনি বলেন “আমি আট বছর বয়স থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আছি। কলেজে পড়েছি, ব্যবসা চালাই, সম্প্রতি বিয়ে করেছি। তবু হানিমুন শেষে ফেরার পথে আমাকে আটক করে নিয়ে যাওয়া হয় আইসিই ডিটেনশনে।”

বৃহস্পতিবার এক সংবাদ সম্মেলনে সাকেইক বলেন, “আমি পাঁচ মাস হারিয়েছি, কারণ আমাকে অপরাধী বানানো হয়েছিল কেবল রাষ্ট্রহীন হওয়ার জন্য যেটা আমার নিয়ন্ত্রণে ছিল না। আমি কখনো তা বেছে নিইনি। কোনো অপরাধ করে রাষ্ট্রহীন হইনি। আমি কেবল জন্মসূত্রে রাষ্ট্রহীন।”
২২ বছর বয়সী সাকেইক জানান, তিনি  ডালাস-ফোর্ট ওয়ার্থ এলাকায় সফল ফটোগ্রাফি ব্যবসা গড়ে তুলেছেন, এবং সম্প্রতি তাহির নামের এক ইউএস নাগরিককে বিয়ে করেছেন।

তবে ফেব্রুয়ারিতে হানিমুন শেষে ইউএস ভার্জিন আইল্যান্ডস থেকে ফেরার পথে তাকে আটক করে আইসিই। এরপর টেক্সাসের অ্যালভারাডোতে প্রেইরিল্যান্ড ডিটেনশন সেন্টারে দীর্ঘ পাঁচ মাস আটক রাখা হয় তাকে। তাকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে দ্বিতীয়বারের মতো নির্বাসিত করার চেষ্টা করে সরকার, যদিও তার দেশে ফেরত পাঠানোর বিরুদ্ধে আদালতের আদেশ ছিল।
আটকের দুই দিন পরেই তিনি গ্রিন কার্ডের আবেদন জমা দেন। তার আবেদনের প্রথম ধাপ সম্প্রতি অনুমোদিত হয়েছে। 
২২ বছর বয়সী সাকেইক এর পিতা-মাতা ফিলিস্তিনী, তবে সৌদি আরবে জন্মগ্রহণ করেন সাকেইক। সে দেশে জন্মসূত্রে নাগরিকত্বের বিধান না  থাকায় সাকেইক রাষ্ট্রহীন। অর্থাৎ তাঁর কোনো দেশেরই নাগরিকত্ব নেই। সাকেইকের পরিবার যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিল পর্যটক ভিসায় এবং এরপর আশ্রয় প্রার্থনা করে। যদিও এক দশক আগে তার বিরুদ্ধে ডিপোর্টেশনের আদেশ জারি হয়, তবুও ‘সুপারভিশনের শর্তে’ তাকে থাকতে দেওয়া হয় নিয়মিত চেক-ইন এবং কাজের অনুমতি সহ।

আট বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রে আসেন এবং জীবনের বেশির ভাগ সময় এখানেই কাটিয়েছেন।
ডিটেনশনের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতে গিয়ে ওয়ার্দ বলেন, “মানবিকতা কেড়ে নেওয়া হয়েছিল আমার কাছ থেকে। আমাকে পশুর মতো এদিক-ওদিক ঘুরিয়ে বেড়ানো হয়েছে। এমন এক জায়গায় পাঠাতে চেয়েছিল, যেখানে আমি কিছুই চিনি না।”
তিনি জানান, তাঁকে তিনটি আটককেন্দ্রে স্থানান্তরিত করা হয়েছিল এবং প্রতিটি স্থানেই কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে। প্রথম স্থানান্তরের সময়, রমজানে রোজা রেখেছিলেন। তিনি ১৬ ঘণ্টা বাসে খাবার ছাড়াই কাটিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘আমাদের পানি বা খাবার দেওয়া হয়নি। আমরা চালকের কাছে পানির জন্য চাইতাম, খাবারের জন্য দরজায় আঘাত করতাম, কিন্তু সে শুধু রেডিওর ভলিউম বাড়িয়ে দিত এবং এমন ভান করত যেন সে আমাদের কথা শুনছে না।’
ভয়াবহ পরিস্থিতির কারণে তিনি শেষ পর্যন্ত শৌচাগারের কাছেই রোজা ভাঙেন। প্রেইরিল্যান্ড আটককেন্দ্রে ধুলাবালিময় পরিবেশের কারণে নারী বন্দীদের মধ্যে ব্যাপকভাবে অসুস্থতা ছড়িয়ে পড়েছিল বলে জানান সাকেইক।
তিনি জানান, ডিটেনশন সেন্টারের পরিবেশ ছিল ‘ভয়াবহ, অপরিচ্ছন্ন এবং অবমাননাকর’। 
“শৌচাগারগুলো একেবারেই অস্বাস্থ্যকর। বিছানাগুলোতে মরিচা, পোকার উপদ্রব, তেলাপোকা, মাকড়সা, পিঁপড়া সবকিছুই আছে। মেয়েরা মাঝরাতে পোকায় কামড়ে জেগে উঠত।”

তিনি বলেন, এখন থেকে তিনি আইস এর হাতে আটক থাকা নারীদের পক্ষে সোচ্চার হবেন। “যেসব নারী এখানে আসে, তারা ভালো জীবনের আশায় আসে। কিন্তু তাদের অপরাধী বানানো হয়, তাদের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়, মানুষ হিসেবে বিবেচনাই করা হয় না। আমরা শুধু ভালো জীবন চাই বলেই ‘কম-মানুষ’ হিসেবে আচরণ পেয়েছি।”
সাকেইকের মুক্তির বিষয়ে মন্তব্য চাইলে হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগে এবিসি নিউজকে জানায়, “তার স্বামীর নাগরিকত্ব এবং আইনি আবেদন জমা দেওয়ার পর তাকে মুক্তি দেওয়া হয়।” তবে তার আইনজীবী মারিয়া কারি এই বক্তব্য ‘ভিত্তিহীন’ বলে দাবি করেন।
কারি বলেন, “গ্রিন কার্ডের ও-১৩০ আবেদন জমা দেওয়ার পরেও সরকার তাকে ডিপোর্ট করার চেষ্টা করেছে। আমরা সেই অনুমোদিত আবেদন সরকারের সঙ্গে ভাগাভাগি করি—তবুও তারা থামেনি।”

কারি জানান, বাইডেন প্রশাসনের ‘ডিফার্ড অ্যান্ড ফোর্সড ডিপারচার’ প্রোগ্রামে ফিলিস্তিনিদের ডিপোর্ট করা নিষিদ্ধ—তবুও ওয়ার্দকে আটকে রাখা হয়েছিল। “তাদের হানিমুন পরিকল্পনা ছিল ঘরোয়া ভ্রমণ—তবুও সেই ফ্লাইটই তাকে বন্দিদশায় ঠেলে দেয়।”
সাকেইকের আরেক আইনজীবী এরিক লি বলেন, “আমরা জানি, আমেরিকা ফিলিস্তিনকে দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় না। তবুও তারা ওয়ার্দকে সেখানে পাঠাতে চেয়েছে। 
টেক্সাসের প্রতিনিধি টেরি মেজাও এ ঘটনার সমালোচনা করে  বলেন, “সরকার এখন যাকে পারে তাকেই ধরছে। ওয়ার্দের চেয়ে সম্মানজনক মানুষকে টার্গেট করা সত্যিই দুঃখজনক। আমি মুসলিম সম্প্রদায়ের পাশে আছি, কারণ সংবিধানবিরোধী এসব কাজের বিরুদ্ধে আমাদের একসঙ্গে দাঁড়াতে হবে।”

আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

ভারতীয় এক পরিবারকে বানিয়ে দেওয়া হলো 'বাংলাদেশি'

ভারতীয় এক পরিবারকে বানিয়ে দেওয়া হলো 'বাংলাদেশি'

৫ দিন আগে
আন্তর্জাতিক
গত ১৫ বছরে আওয়ামী সন্ত্রাসে নিহতদের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ

গত ১৫ বছরে আওয়ামী সন্ত্রাসে নিহতদের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ

৫ দিন আগে
আন্তর্জাতিক
উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত ৩২, শিশুসহ দগ্ধ ১৬৫

উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত ৩২, শিশুসহ দগ্ধ ১৬৫

১ সপ্তাহ আগে
আন্তর্জাতিক
সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতির কমিটি গঠন

সভাপতি আবুল কালাম, সম্পাদক রহিম শেখ / সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতির কমিটি গঠন

১ সপ্তাহ আগে
আন্তর্জাতিক
গণ ডিপোর্টেশনের গতি বৃদ্ধিতে ‘অপারেশন রিটার্ন টু মিশন’

সাবেক আইস কর্মকর্তাদের ফেরাতে ৫০ হাজার ডলার বোনাস ঘোষণা / গণ ডিপোর্টেশনের গতি বৃদ্ধিতে ‘অপারেশন রিটার্ন টু মিশন’

১ সপ্তাহ আগে
আন্তর্জাতিক
গণ ডিপোর্টেশনের আগ্রাসী পদক্ষেপে ট্রাম্প প্রশাসন

গণ ডিপোর্টেশনের আগ্রাসী পদক্ষেপে ট্রাম্প প্রশাসন

১ সপ্তাহ আগে
আন্তর্জাতিক
সর্বশেষ
নিউ ইয়র্কের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ আইনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের মামলা

নিউ ইয়র্কের ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ আইনের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের মামলা

নিউ ইয়র্ক সিটির ‘স্যাঙ্কচুয়ারি’ নীতি ও আইনকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করেছে যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসন। বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) বিকেলে ৩৭ পৃষ্ঠার...

ভারতীয় এক পরিবারকে বানিয়ে দেওয়া হলো 'বাংলাদেশি'

দিল্লিতে প্রায় দেড় দশক ধরে ভাঙ্গারির কাজ করা দুটি পরিবারের...

ভারতীয় এক পরিবারকে বানিয়ে দেওয়া হলো 'বাংলাদেশি'

গত ১৫ বছরে আওয়ামী সন্ত্রাসে নিহতদের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ

ঢাকা: চব্বিশের জুলাইয়ে ছাত্র-শ্রমিক-জনতার গণ-অভ্যুত্থানের আগের ১৫ বছরে ছাত্রলীগসহ আওয়ামী...

গত ১৫ বছরে আওয়ামী সন্ত্রাসে নিহতদের তালিকা প্রস্তুতের নির্দেশ

উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত ৩২, শিশুসহ দগ্ধ ১৬৫

ঢাকা: রাজধানীর উত্তরার মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর একটি...

উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে নিহত ৩২, শিশুসহ দগ্ধ ১৬৫

সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতির কমিটি গঠন

ঢাকা: ঢাকায় কর্মরত সিলেট বিভাগের সাংবাদিকদের সংগঠন সিলেট বিভাগ সাংবাদিক...

সিলেট বিভাগ সাংবাদিক সমিতির কমিটি গঠন

গণ ডিপোর্টেশনের গতি বৃদ্ধিতে ‘অপারেশন রিটার্ন টু মিশন’

যুক্তরাষ্ট্র থেকে অবৈধ অভিবাসন বিতাড়ন বা গণ ডিপোটেশন অভিযানকে দ্রত...

গণ ডিপোর্টেশনের গতি বৃদ্ধিতে ‘অপারেশন রিটার্ন টু মিশন’