খামেনিকে চিঠি দিয়ে শান্তি প্রস্তাবের চেষ্টা ট্রাম্পের: কোনো চিঠি পায়নি বলছে ইরান
প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তি নিয়ে আলোচনা করতে চান। তিনি এই বিষয়ে ইরানকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন এবং আশা প্রকাশ করেছেন যে, দীর্ঘদিনের ইউএস মিত্র এবং ইসরায়েলের চিরশত্রু ইরান আলোচনায় বসতে রাজি হবে। শুক্রবার স্থানীয় সময় ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প এই কথাগুলি বলেছেন। তবে ইরানের পররাষ্ট্র দপ্তর বলছে খামিনির কাছে ট্রাম্প এর পক্ষ থেকে কোন চিঠি পৌঁছেই নাই।
ট্রাম্প বলেন, “গত বৃহস্পতিবার আমি তাদের একটি চিঠি পাঠিয়েছি। চিঠিতে আমি লিখেছি, আমি আশা করি আপনারা আলোচনা করবেন। কারণ এটি ইরানের জন্য ভালো হবে।”
ট্রাম্প আরও বলেন, “আমি মনে করি তারা আলোচনা করতে চায়। এবং যদি তারা তা না করে, তাহলে আমাদের অন্য কিছু করতে হবে। কারণ আপনি পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে পারবেন না।”
ধারণা করা হচ্ছে যে চিঠিটি ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির কাছে পাঠানো হয়েছে। এদিকে, হোয়াইট হাউস তাৎক্ষণিকভাবে এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করেনি।
ট্রাম্প বলেন “ইরানের সাথে মোকাবিলা করার দুটি উপায় আছে – একটি বলপ্রয়োগ; অন্যটি চুক্তির মাধ্যমে।” “আমি চুক্তি করতে পছন্দ করি কারণ আমি ইরানকে আঘাত করতে চাই না। তারা ভালো মানুষ,” ট্রাম্প বলেন।
জানুয়ারিতে ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকে ট্রাম্প ইউএস পররাষ্ট্রনীতিতে বড় ধরনের পরিবর্তন এনেছেন। তিনি রাশিয়ার প্রতি আরও সমঝোতামূলক অবস্থান নিয়েছেন, যা পশ্চিমা মিত্রদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি করেছে। তিনি ইউক্রেনে মস্কোর তিন বছরের যুদ্ধের অবসান ঘটাতেও মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করছেন।
ট্রাম্প, ২০১৮ সালে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচির উপর একটি বহুপাক্ষিক চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রত্যাহার করে নেন। এই চুক্তির উদ্দেশ্য ছিল ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখা। ফেব্রুয়ারিতে, তিনি বলেছিলেন যে, তিনি ইরানের সাথে এমন একটি চুক্তি করতে চান যা তাকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি থেকে বিরত রাখবে।
আলোচনার সাথে পরিচিত একটি সূত্র রয়টার্সকে জানিয়েছে যে, রাশিয়া যুক্তরাষ্ট্র এবং ইরানের মধ্যে মধ্যস্থতা করার প্রস্তাব দিয়েছে। তেহরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে অচলাবস্থার শান্তিপূর্ণ সমাধান খুঁজে পেতে সহায়তা করার জন্য যথাসাধ্য চেষ্টা করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ক্রেমলিন।
এদিকে, রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে রাশিয়ার উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই রিয়াবকভ ইরানের রাষ্ট্রদূত কাজেম জালালির সাথে পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
ইরান দাবি করছে ট্রাম্পের কাছ থেকে কোনও চিঠি পায়নি
পরমাণু চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের কাছ থেকে ইরান এখনও কোনও চিঠি পায়নি। শুক্রবার (৭ মার্চ) ইরানি দূতাবাসের একজন মুখপাত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন যে, তিনি দেশটির সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনিকে ইরানের পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানিয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
চিঠিতে তেহরানের দ্রুত অগ্রসরমান পারমাণবিক কর্মসূচি নিয়ন্ত্রণের জন্য একটি নতুন চুক্তি নিয়ে আলোচনার আহ্বান জানানো হয়েছে।
এদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাঘচি যতক্ষণ ইরানের উপর কঠোর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা বহাল থাকবে ততক্ষণ পর্যন্ত দেশটির সাথে পারমাণবিক আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি এএফপিকে বলেন, যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র সর্বোচ্চ চাপ এবং হুমকির নীতি বজায় রাখবে, ততক্ষণ পর্যন্ত আমরা তাদের সাথে সরাসরি আলোচনায় অংশ নেব না,’ ।
স্থানীয় সময় শুক্রবার (৭ মার্চ) ফক্স বিজনেস নেটওয়ার্কের সাথে এক সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি ইরানি নেতাদের কাছে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন।
তিনি বলেন, “আমি বলেছি, আমি আশা করি আপনি আলোচনা করবেন, কারণ এটি ইরানের জন্য ভালো হবে।” তিনি আরও সতর্ক করে বলেন যে, যদি তারা আলোচনায় অস্বীকৃতি জানায়, তাহলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি এই বিষয়ে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হবে। তবে এই পরিস্থিতিতে তিনি বলেন যে, তেহরানের স্বার্থে আপস যুক্তিই সঙ্গত হবে।