ইসরাইলি আগ্রাসনে চরম মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রস্থল গাজা
গাজায় ক্ষুধায় রক্তহীন শরীর, তবু থেমে নেই হামলা

ইসরায়েলি আগ্রাসনে বিধ্বস্ত গাজা উপত্যকা এখন আর কেবল যুদ্ধবিধ্বস্ত শহর নয় - এটি একটি মানবিক বিপর্যয়ের কেন্দ্রস্থল, যেখানে প্রতিদিন কেবল ক্ষুধা, মৃত্যু এবং অমানবিকতার এক বিষণ্ণ দৃশ্য নিয়ে আসে। অবিরাম বোমাবর্ষণ, বিমান হামলায় ধ্বংসস্তূপে পরিণত ভবন এবং কফিনের মিছিলের পিছনে এখন একটি মর্মান্তিক সংকট যুক্ত হয়েছে - ক্ষুধার্ত মানুষের মৃতদেহের কাছে রক্ত নেই, রক্তদানের ক্ষমতাও করো নেই।
সম্পূর্ণ ইসরায়েলি অবরোধের কবলে থাকা গাজায় এখন রুটির দোকানও বন্ধ রয়েছে, বাজারে চাল, ডাল, তেল বা লবণ কিচুই নেই। এক মাসেরও বেশি সময় ধরে ত্রাণ কার্যক্রম বন্ধ থাকায় খাদ্য মজুদ শেষ হয়ে গেছে। এই ঘাটতি এতটাই তীব্র যে, অনেক মানুষ দিনে অর্ধেক খাবার খেয়ে দিন কাটাচ্ছে। শিশুদের মুখে দুধ নেই, এবং পানির অভাবে বয়স্কদের ঠোঁট শুকিয়ে যাচ্ছে। নারী-পুরুষ আর শিশু নির্বিশেষে সকলেই ভয়াবহ অপুষ্টির শিকার।
এই অপুষ্টি রক্তদানের মতো জরুরি এবং মানবিক কাজের উপরও ছায়া ফেলেছে। আজ যখন গাজায় হাজার হাজার মানুষ ক্রমাগত আহত হচ্ছে, তখন তাদের জীবন বাঁচানোর জন্য প্রয়োজনীয় রক্ত সংগ্রহ করা একটি কঠিন কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ অনেকেরই রক্তদান করার মতো শারীরিক শক্তি নেই।
এপির একটি প্রতিবেদন অনুসারে, গাজায় এখন যারা রক্তদান করতে এগিয়ে আসছেন তাদের প্রায় ২০ থেকে ৩০ শতাংশের হিমোগ্লোবিনের মাত্রা এত কম যে তারা রক্তদান করতে পারছেন না। গাজা ব্যাপটিস্ট হাসপাতালের তরুণ স্বেচ্ছাসেবক ইয়াহিয়া আল-জারদ তাদের মধ্যে একজন, যিনি দুর্বল শরীর থাকা সত্ত্বেও রক্তদান করার সময় মাঝপথে থামতে বাধ্য হয়েছিলেন।
হাসপাতালের ব্লাড ব্যাংকগুলি প্রতিদিন কমে যাচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এখন জর্ডান এবং পশ্চিম তীর থেকে রক্ত সংগ্রহের দিকে ঝুঁকছে। তবে, ইসরায়েলি অবরোধের কারণে, বাইরে থেকে এই ধরনের সাহায্য প্রবেশ করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলস্বরূপ, চিকিৎসা এবং অস্ত্রোপচারের মতো জরুরি কার্যক্রম মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কখনও কখনও, মাত্র এক ইউনিট রক্তের অভাবে জীবন বাঁচানো সম্ভব হচ্ছেনা।
রক্তপাতহীন এই মানবিক বিপর্যয়ের মধ্যে ইসরায়েলের নির্মম আগ্রাসন অব্যাহত রয়েছে। মঙ্গলবার সকাল থেকে গাজায় কমপক্ষে ২৮ জন প্রাণ হারিয়েছেন। দক্ষিণ গাজার খান ইউনিসে বিমান হামলায় নারী ও শিশুসহ একই পরিবারের এগারোজন সদস্য দগ্ধ হয়ে মারা গেছেন। গাজা শহরের পশ্চিম অংশে একাধিক বিমান হামলায় আরও সাতজন নিহত হয়েছেন। এই হতাহতের অনেকেই কেবল চিকিৎসার অভাবে মারা গেছেন, যাদের হয়তো এক ব্যাগ রক্ত পেলে বাঁচানো যেত।
গাজার এই মর্মান্তিক পরিস্থিতির মধ্যে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় আবারও শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য একটি নতুন প্রচেষ্টা শুরু করেছে। কাতার এবং মিশর একটি নতুন যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করেছে, যার অধীনে হামাস এবং ইসরায়েলের মধ্যে পাঁচ থেকে সাত বছরের যুদ্ধবিরতি কার্যকর হতে পারে। প্রস্তাব অনুসারে, হামাস ইসরায়েলি জিম্মিদের মুক্তি দেবে এবং ইসরায়েল ফিলিস্তিনি বন্দীদের মুক্তি দেবে। এই সময়ের মধ্যে, ইসরায়েল গাজা থেকে তার সৈন্যদের সম্পূর্ণরূপে প্রত্যাহার করবে।
আলোচনার নেতৃত্ব দেবেন হামাসের রাজনৈতিক প্রধান মোহাম্মদ দারবিশ এবং আলোচক খলিল আল-হাইয়া। তবে, ইসরায়েল এখনও এই প্রস্তাবের ব্যাপারে কোনও আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি।
যদিও আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থা এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলি বারবার গাজার মানবিক পরিস্থিতির নিন্দা করেছে, তবুও এটি ইসরায়েলি আক্রমণ বা অবরোধের তীব্রতা কমাতে পারেনি। জাতিসংঘের বেশ কয়েকটি সংস্থাও গাজাকে "মানবিক ধ্বংসস্তূপ" বলে অভিহিত করেছে এবং জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছে।
যখন কোনও শহরের রক্তদান করার শক্তিও থাকে না, তখন স্পষ্ট যে সেই সমাজ কতটা ভেঙে পড়েছে। গাজার বর্তমান পরিস্থিতি ঠিক এরকমই—যেখানে ক্ষুধা, অনাহার এবং আগ্রাসনের ত্রিমুখী আক্রমণের কারণে মানুষের জীবন দীর্ঘ শোক মিছিলে পরিণত হয়েছে। তবুও, তাদের মানবতা, ত্যাগ এবং প্রতিরোধ আশ্চর্যজনকভাবে টিকে আছে।
আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

পাকিস্তানের তেমন ক্ষতি না হলেও কোটি কোটি ডলার ক্ষতির সম্মুখীন ভারত / পাকিস্তানের আকাশসীমা বন্ধ, ব্যাপক ক্ষতির মুখে ভারত

জাপানে ধর্ষণে অভিযুক্ত দুই ইউএস নৌবাহিনী কর্মী

কাশ্মীর হামলা ইস্যুতে ভারতের প্রতিক্রিয়ার কঠিন জবাব পাকিস্তানের / ভারতের সঙ্গে বাণিজ্য বন্ধ, পাকিস্তানের আকাশসীমায় ঢুকতে পারবে না ভারতীয় বিমান

কাশ্মীরে হামলায় হতাহত,সংক্ষেপ হলো সৌদি আরব সফর / তাড়াহুড়া করে দেশে ফিরলেন মোদি, এড়িয়ে গেলেন পাকিস্তানের আকাশপথ

ইসরাইলি বর্বরতায় স্মরণকালের মানবিক বিপর্যয়ে গাজা / ৫ বছরের যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা, প্যালেস্টাইন অথরিটির হাতে দায়িত্ব হস্তান্তরে রাজি হামাস
