৮৪ শতাংশ আইটি কর্মী ভুগছেন ফ্যাটি লিভারে! জানতে হবে, মানতে হবে

লিভারে বা কলিজায় অতিরিক্ত চর্বি জমা হওয়াকে ফ্যাটি লিভার ডিজিজ বলা হয়। আইটি-তে কর্মরত প্রায় ৮৪ শতাংশ মানুষের ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে। একটি গবেষণায় এই তথ্য উঠে এসেছে। তাই আইটি ক্ষেত্রে কর্মরতদের এখনই সতর্ক থাকা দরকার। তবে তাদের কিছু বাড়তি নিয়ম মেনে চলতে হবে। তবেই তারা ফ্যাটি লিভার থেকে সেরে উঠতে পারবেন।
সম্প্রতি একটি গবেষণা প্রকাশ পেয়েছে। এই গবেষণায় দাবি করা হয়েছে যে, আইটি কোম্পানিতে কর্মরত ৮৪ শতাংশ কর্মীর ফ্যাটি লিভারের সমস্যা রয়েছে। আর এই তথ্য সামনে আসার পর সকলেই হতবাক হয়ে গেছেন। তাদের মনে প্রশ্ন জাগে কেন আইটি কর্মীদের মধ্যে এই সমস্যা এত বেশি?, 'আইটি কর্মীদের অতিরিক্ত ফাস্ট ফুড-জাঙ্ক ফুড খাওয়ার প্রবণতা রয়েছে। তাছাড়া, তারা খুব বেশি শারীরিক পরিশ্রম করেন না। এছাড়াও, মানসিক চাপ, মদ্যপান এবং ধূমপানের কারণে ফ্যাটি লিভারের সমস্যা বাড়ছে। আর এই সমস্যাটিকে শুরু থেকেই গুরুত্ব দিতে হবে। অন্যথায়, দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ এবং লিভার সিরোসিসের ঝুঁকি বাড়বে।'
ফ্যাটি লিভার দুই ধরণের। অ্যালকোহলিক এবং নন-অ্যালকোহলিক। অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে যখন লিভারে চর্বি জমা হয়, তখন তা অ্যালকোহলিক ফ্যাট। তবে দ্বিতীয় ঘটনাটি মূলত তখন ঘটে যখন খাদ্যতালিকায় অতিরিক্ত, তেল এবং চর্বি জাতীয় উপাদান বৃদ্ধি পায়। যখন স্তরে স্তরে লিভারে চর্বি জমা হয়, তখন 'মেটাবলিক ডিসফাংশন-অ্যাসোসিয়েটেড স্টিয়েটিক লিভার ডিজিজ' বা MASLDও দেখা দেয়। যদি লিভারে ১০ শতাংশের বেশি চর্বি জমে, তাহলে তা ধীরে ধীরে স্টেটোটিক রোগে পরিণত হয়। ফ্যাটি লিভার খুব বেশি ক্ষতি করে না, তবে যদি এটি অতিরিক্ত মাত্রায় চলে যায়, তাহলে লিভারের ক্ষতি বা সিরোসিস এবং লিভার ক্যান্সার হতে পারে। শুধু তাই নয়, লিভারের রোগ থেকে কিডনি বিকল হওয়ার ঝুঁকিও বেড়ে যায়।
অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভারতো আছেই কিন্তু গবেষণায় বলা হয়েছে যে দেশের প্রাপ্তবয়স্ক জনসংখ্যার কমপক্ষে ৩৮ শতাংশ 'নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার' সমস্যায় ভুগছেন। শিশুরাও বাদ নেই। মূলত লিভারে চর্বি জমেই ফ্যাটি লিভার
লিভারে চর্বি কেন জমে?
১. শারীরিক স্থূলতা বা ওজন বৃদ্ধি
২. ভাজা খাবার, উচ্চ চিনিযুক্ত পানীয়, প্রক্রিয়াজাত মাংস খাওয়ার অভ্যাস
৩. শারীরিক ব্যায়ামের অভাব
৪. দীর্ঘক্ষণ বসে কাজ করা
৫. রাত জেগে থাকা
৬. জাঙ্ক ফুড খাওয়ার অভ্যাস
ফ্যাটি লিভার হয়েছে বোঝবো কখন?
· ওজন দ্রুত কমতে থাকবে।
· সব সময় বমি বমি ভাব থাকবে।
· পেটের উপরের ডান দিকে ব্যথা থাকবে।
· প্রস্রাবের রঙ কালো হয়ে যাবে।
· চরম ক্লান্তি এবং অনিদ্রা থাকবে।
· চোখের রঙয়ের পরিবর্তন।
· অনেক ক্ষেত্রে জন্ডিসের লক্ষণও দেখা দেবে।
কিছু লক্ষণ দেখলে সাবধান থাকুন
· যদি আপনি ফ্যাটি লিভারে আক্রান্ত হন, তাহলে পেটের নীচের অংশে জল জমে যায়। তরল জমা হওয়ার সাথে সাথে পেট ফুলে যায়। তাই পেট হঠাৎ বেড়ে গেলেও সাবধান থাকুন।
· তলপেটে তীব্র ব্যথা ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। এই ক্ষেত্রে, বেশিরভাগ সময়, পেটের ডান দিকে ব্যথা হয়। বমি বমি ভাবের পাশাপাশি, ক্ষুধামন্দাও ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে।
· যদি আপনার ঘন ঘন গ্যাস হয়, খাওয়ার পরেও পেট ভারী বোধ হয়, অথবা পেট ফুলে যায়, তাহলে আপনার এটিকে অবহেলা করা উচিত নয়। প্রতিদিন যদি আপনার বদহজমের সমস্যা হয় তবে সাবধান থাকা গুরুত্বপূর্ণ।
· যদি শরীর থেকে টক্সিন সঠিকভাবে নির্মূল করা না যায়, তাহলে ফ্যাটি লিভার হতে পারে। তাই প্রস্রাবের রঙ এবং গন্ধের দিকে মনোযোগ দিন। শরীরের চাহিদা অনুযায়ী জল খাওয়ার পরেও যদি প্রস্রাবের রঙ হলুদ হয় অথবা অতিরিক্ত গন্ধ থাকে, তাহলে আপনি ফ্যাটি লিভার পরীক্ষা করাতে পারেন।
· যদি ত্বক বা চোখে হলুদভাব দেখা দেয়, তাহলে এটি ফ্যাটি লিভারের লক্ষণ হতে পারে। যদি আপনার চোখের নিচে কালো দাগ এবং মুখ ফুলে যায়, তাহলে আপনারও ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত।
আপনার কোন অভ্যাস পরিবর্তন করা উচিত?
তাই আর সময় নষ্ট না করে, ফ্যাটি লিভার থেকে সেরে ওঠার উপায় জেনে নিন।
১. ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে নিয়মিত ব্যায়াম গুরুত্বপূর্ণ।
২. কোমল পানীয় এবং প্রক্রিয়াজাত ফলের রসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে, নিয়মিত এই ধরনের পানীয় গ্রহণে ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে খারাপ কোলেস্টেরলের মাত্রা বৃদ্ধি পায়। যা পরে ফ্যাটি লিভারের কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
৩. যেকোনো প্রক্রিয়াজাত খাবারই ফ্যাটি লিভারের সমস্যা বাড়িয়ে দিতে পারে। ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করার জন্য, খাদ্যতালিকায় যতটা সম্ভব সহজ কার্বোহাইড্রেট কম রাখা ভালো।
৪. পরিবর্তে, লিভার সুস্থ রাখতে ওমেগা-৩ ফ্যাটি অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবার খান,এছাড়াও, শরীর সুস্থ রাখতে মাছ, শাকসবজি, ওটস, কুইনো এবং মৌসুমি ফল খান।
৫. অ্যালকোহল সেবন লিভারের জন্য খুবই ক্ষতিকর, অতিরিক্ত অ্যালকোহল সেবনের ফলে যখন লিভারে চর্বি জমা হয়, তখন তাকে অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার রোগ বলা হয়। এছাড়াও, লিভার সুস্থ রাখতে ধূমপান ত্যাগ করুন।
এটি অবশ্যই পরামর্শমূলক একটি প্রবন্ধ। এ নিয়ম অনুসরণ করে চললে এবং বিষয়গুলো জানা থাকলে অনেক ক্ষেত্রেই ফ্যাটি লিভার থেকে মুক্ত থাকা যায়। তবে ভিন্ন মাত্রায় শারীরিক অসুস্থতা অনুভব হলে অবশ্যই বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।
স্বাস্থ্য এর আরো খবর

ত্বক, নখ এবং চুলের স্বাস্থ্য নিশ্চিতে বায়োটিন / খাদ্য তালিকায় থাকা চাই ‘বায়োটিন’ সমৃদ্ধ খাবার

গরমে যে পানীয়গুলো এড়িয়ে চলা প্রয়োজন

বিশ্বের সবচেয়ে ছোট পেসমেকার আবিষ্কার এটি কাজ করবে যেভাবে / বিশ্বের সবচেয়ে ছোট পেসমেকার আবিষ্কার এটি কাজ করবে যেভাবে

কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা যেসব খাবার খেলে মিলবে মুক্তি / কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা যেসব খাবার খেলে মিলবে মুক্তি

ব্রাউন সুগার বা বাদামি চিনি খাওয়া কি ভালো
