ড. ইউনূস এর বিরুদ্ধে বিবৃতিতে স্বাক্ষর না করায় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেলকে চাকরিচ্যুত করা হচ্ছেঃ খুলে ফেলা হলো তার নেমপ্লেটও
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে মন্তব্য করে নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী অর্থনীতিবিদ ড.মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে অস্বীকার করায় বরখাস্ত হতে যাচ্ছেন।
মঙ্গলবার আইন মন্ত্রণালয়ের সলিসিটর উইং বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। সংস্থাটি জানিয়েছে, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে বরখাস্ত অর্থাৎ চাকরিচ্যুত করার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে।
এর আগে সোমবার (৪ সেপ্টেম্বর) দুপুরে সুপ্রিম কোর্ট কম্পাউন্ডে এমরান আহমেদ বলেন, ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জনের বেশি নোবেল বিজয়ী এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ও সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র সচিবসহ অনেকেই বিবৃতি দিয়েছেন অধ্যাপক ড.মুহাম্মদ ইউনূস বিচারিক হয়রানির শিকার হচ্ছে। এর বিরুদ্ধে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দেওয়ার কথা রয়েছে। অ্যাটর্নি জেনারেল অফিসের সকল কর্মচারীকে বিবৃতিতে স্বাক্ষর করার জন্য নোটিশ দেওয়া হয়েছে। আমি এই বিবৃতিতে স্বাক্ষর না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
কারণ জানতে চাইলে তিনি গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল সে দেশে আইন সংস্কার করছেন; রায়ের ক্ষেত্রে তিনি এর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন, এটা আমার নিজস্ব মতামত। এটা এভাবেই.
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আরও বলেন, আমি ১৬০ জন নোবেল বিজয়ী এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটনের বক্তব্যের সঙ্গে একমত।
তিনি বলেন, আমি মনে করি, অধ্যাপক ড. ইউনূস একজন সম্মানিত মানুষ। তার মানহানি হচ্ছে এবং এটা বিচারিক হয়রানি।
ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে চলমান বিচারিক প্রক্রিয়া স্থগিত করার দাবিতে বিভিন্ন দেশের ১৬০ জনের দেওয়া খোলা চিঠির কথা সোমবার সাংবাদিকদের জানান এমরান আহমেদ ভূঁইয়া। আমি মনে করি ইউনূসের পক্ষে ১৬০ জনের বক্তব্য সঠিক।
যবে তুমি চুপ থাকো তবে সাবাস বাংলাদেশ। যবে তুমি প্রতিবাদী তবে তুমি শেষ । কিন্তু অন্যায় যে করে আর অন্যায় সহে,তব ঘৃণা যেন তারে তৃণ সমদহে। নড়ে উঠেছে, জেগে উঠেছে বাংলাদেশ। জিতবে বাংলাদেশ। সাবাস বাংলাদেশ…।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে, ড. ইউনূসের পক্ষে বক্তব্যের বিরুদ্ধে পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করতে আমি সই করিনি।
তবে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এ কে এম আমিন উদ্দিন মানিক গণমাধ্যমকে বলেন, আইনজীবী হিসেবে আমরা পাল্টা বিবৃতিতে স্বাক্ষর করছি। এখানে অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয় থেকে কোনো নির্দেশনা ছিল না। আইনজীবী হিসেবে আমরা স্বাক্ষর করি। এর কারণ ড. ইউনূসের পক্ষে কেউ বক্তব্য দিতে পারবেন না বলে আমরা এই প্রতিবাদে স্বাক্ষর করছি।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এমরান আহমেদ ভূঁইয়া অ্যাটর্নি জেনারেলের কার্যালয়ের পঞ্চম তলায় ৫১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন। তার নাম উল্লেখ করে একটি নামফলক ঘরের সামনে সাঁটানো ছিল। মঙ্গলবার বিকেলে নামফলক খুলে ফেলা হয়।
আরেক ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম ফজলুল হক দুপুর ১২টার দিকে এমরানের নামের নামফলক অপসারণ করেছেন বলে দাবি করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, এমরান আহমেদ ভূঁইয়াকে ডেপুটি অ্যাটর্নি হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে রাষ্ট্র। তিনি রাষ্ট্রের স্বার্থ দেখবেন। কিন্তু রাষ্ট্রের আইন কর্মকর্তা হিসেবে তিনি রাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন। তাই আমি মনে করি তার নামফলক অ্যাটর্নি জেনারেলের অফিসে থাকতে পারে না। সেজন্য আমি তার নামফলক সরিয়ে দিয়েছি।
এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে এমরান আহমদ ভূঁইয়া বলেন, আমি মঙ্গলবার অফিসে যাইনি, বাসায় আছি। নামফলকটি সরিয়ে ফেলা হয়েছে বলে গণমাধ্যম সূত্রে জানতে পেরেছি। তিনি বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে আমি যে অবস্থান দিয়েছি তা থেকে আমি নড়ব না।
এর আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও ফার্স্ট লেডি হিলারি ক্লিনটন এক টুইট বার্তায় ইউনূসের হয়রানি বন্ধ করতে বিশ্বের প্রতি আহ্বান জানান।
ওই টুইটে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে পাঠানো ১৬০ জনেরও বেশি বিশ্বনেতার বক্তব্য সংযুক্ত করেন। সেই বিবৃতিতে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা, হিলারি ক্লিনটনসহ অনেক বিশ্বনেতা ও নোবেল বিজয়ীর নাম রয়েছে। বিবৃতিতে তারা বাংলাদেশে গণতন্ত্র ও মানবাধিকার নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
এর আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বিরুদ্ধে নোবেলজয়ী গত ২৮ আগস্ট গ্রামীণ টেলিকমের ১৮ জন শ্রমিক বাদী হয়ে ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে পৃথক মামলা করেন। গত ১৫ ও ১৬ অক্টোবর শ্রম আদালতের চেয়ারম্যান (জেলা ও দায়রা জজ) বেগম শেখ মেরিনা সুলতানা মামলাগুলো গ্রহণ করেন। ইউনূসকে আইনজীবীর মাধ্যমে হাজিরা দিতে বা জবাব দিতেও নির্দেশ দেন।
আদালত সূত্র জানায়, শ্রম আইন ২০০৬ এর ২১৩ ধারা লঙ্ঘন করে মোট ২১ কোটি ৪১ লাখ ১৭ হাজার ১৬৩ টাকা পরিশোধ না করায় বাদীরা এসব মামলা করেন। এসব মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের ১৭ সাবেক ও একজন বর্তমান কর্মী বাদী।
জানা গেছে, কোম্পানির নিয়মানুযায়ী লভ্যাংশের ৫ শতাংশ পরিশোধ না করায় এসব মামলা করা হয়। এর আগে গত ৬ জুন এক মামলায় একই আদালত ড.ইউনূসের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দেন। ওই মামলায় অভিযোগের পর ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলছে।
আরও পড়ুন
ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে ৮ টি নতুন মামলা
এর আগে, ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর ঢাকার কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরে ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে মামলা করেন ঢাকার তৃতীয় শ্রম আদালতে এ মামলা করেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তরের শ্রম পরিদর্শক আরিফুজ্জামান। সেই মামলাও বিচারাধীন।
যাদের ভিতরে ভবিষ্যতের বিচারের সঠিক চিন্তাভাবনা প্রবেশ করেছে। তারাই কেন যেন বাংলাদেশের বর্তমান সরকারের বিরুদ্ধে নড়েচড়ে বেঁকে বসতে আরম্ভ করছে। এবং অনেক কাজ করতে গিয়ে মনমরা ও গোমরা হয়ে যাচ্ছে তাদের চেহারায় তাই ফুটে উঠছে । সেটা কি মার্কিন মুল্লুক থেকে বাস্তবচ্যুত হওয়ার ভয় এবং সেংসনের করাল গ্রাস কিনা আল্লাহ মালুম।
1 Comment