রমজানে খেজুর-চিনিসহ ১১ পণ্য আমদানিতে বিশেষ সুবিধা
পবিত্র রমজান মাসে ১১টি অত্যাবশ্যকীয় খাদ্য সামগ্রী আমদানির বিল বিলম্বিত করার অনুমতি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। পণ্যগুলো হলো- চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুর। এসব পণ্য ৯০ দিনের সাপ্লায়ার্স বা বায়ার্স ক্রেডিটের আওতায় আমদানি করা যাবে। সোমবার এক সার্কুলারে বাংলাদেশ ব্যাংক এ তথ্য জানিয়েছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংক বলছে, আমদানির ক্ষেত্রে লেনদেনের সুবিধার্থে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে এবং এই সুবিধা আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত প্রযোজ্য হবে। এই সিদ্ধান্ত আমদানিকারকদের এসব পণ্য আমদানিতে সহায়তা করবে। কারণ রমজানের আগেই এসব পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়।
এর আগে গত ৬ নভেম্বর পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে আগের শতভাগ মার্জিন বা নিরাপত্তা মূল্য শিথিল করে একটি প্রজ্ঞাপন জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখন সেই মার্জিন নির্ধারিত হবে গ্রাহক-ব্যাংক সম্পর্কের ভিত্তিতে।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, পবিত্র রমজান মাস উপলক্ষে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা বৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে চাল, গম, পেঁয়াজ, ডাল, ভোজ্যতেল, চিনি, ডিম, ছোলা, মটর, মসলা ও খেজুরের আমদানি ঋণ নিশ্চিত করতে হবে। পণ্যের আমদানি সহজ করে দাম সহনীয় পর্যায়ে রেখে প্রয়োজনীয় সরবরাহ। ব্যাংকার-গ্রাহক সম্পর্কের ভিত্তিতে নগদ মার্জিনের হার ন্যূনতম স্তরে বজায় রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, অভ্যন্তরীণ বাজারে উল্লেখিত পণ্যের সরবরাহ নিশ্চিত করতে আমদানি ঋণ প্রতিষ্ঠাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এই নির্দেশিকা ৩১ মার্চ, ২০২৫ পর্যন্ত বলবৎ থাকবে।
শিল্প সংশ্লিষ্টদের মতে, এলসি মার্জিন শিথিল করার কারণে আমদানিকারকদের কম নগদ অর্থের প্রয়োজন হবে। এতে আমদানি ব্যয়ও কমবে। ফলে এ সুবিধার কারণে বাজারে এসব পণ্যের দাম কিছুটা হলেও কমার কথা। ডলার সংকট সম্প্রতি এসব পণ্যের এলসি খোলায় বাধা সৃষ্টি করেছে। ফলে ডাল, ভোজ্যতেল, ছোলা, খেজুর, বিভিন্ন ফলের এলসি খুলতে সমস্যায় পড়ছেন ব্যবসায়ীরা। এরই মধ্যে দেশের সামগ্রিক আমদানি কমেছে। তবে আসন্ন রোজায় প্রয়োজনীয় পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে
প্রসঙ্গত, গত ৩১ অক্টোবর সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত উপদেষ্টা কমিটির সভায় রমজানের জন্য প্রয়োজনীয় পণ্য ক্রয়ের অনুমোদন দেওয়া হয়। আসন্ন রমজান মাসে যাতে প্রয়োজনীয় পণ্যের ঘাটতি না হয় সেজন্য আগাম প্রস্তুতি নিচ্ছে সরকার। এ জন্য চিনি, ছোলা ও সয়াবিন আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেখানে ৯০ হাজার টন ইউরিয়া সার ও দুটি কার্গো এলএনজি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়।
বৈঠক শেষে অর্থ ও বাণিজ্য উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, এসব পণ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এগুলোর আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। রোজায় ছোলা ও সয়াবিনের চাহিদা বাড়বে, আগে আমদানির অনুমতি দিয়েছে সরকার। চিনি, ছোলা ও সয়াবিন আমদানি করবে সরকারি প্রতিষ্ঠান ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। খেজুর আমদানির বিষয়ে শিগগিরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। আর্থিক সংকট থাকলেও সরকার চায় না সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হোক, সে কারণেই এই সিদ্ধান্ত।
মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকে স্থানীয় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে পাঁচ হাজার টন চিনি কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। প্রতি কেজি ১২০ টাকা ৯২ পয়সা দরে এই চিনি কেনা হবে মোট ৬০ কোটি ৪৬ লাখ টাকায়। এছাড়া আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত টেন্ডার পদ্ধতিতে ১০ হাজার টন ছোলা কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। প্রতি কেজি ১০৭ টাকা ৩৯ পয়সা দরে এই ছোলা কেনা হবে মোট ১০১ কোটি৯৯ লাখ ৪০ হাজার টাকায়।
স্থানীয় উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ১৬৩ টাকা ১৫ পয়সা দরে ৩২ লাখ ৬০ হাজার লিটার সয়াবিন তেল কেনার প্রস্তাব অনুমোদন করা হয়েছে। এতে মোট ব্যয় হবে ৫৩ কোটি ১৮ লাখ ৬৫৯ হাজার টাকা।