আন্তর্জাতিক

রয়টার্সকে ড. ইউনূস

হাসিনার উচ্চ প্রবৃদ্ধির বয়ান পুরোটাই ‘ভুয়া’

অনলাইন ডেস্ক

সোমবার, জানুয়ারী ২৭, ২০২৫, ৮:৩৩ রাত
হাসিনার উচ্চ প্রবৃদ্ধির বয়ান পুরোটাই ‘ভুয়া’

ক্ষমতাচ্যুত বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশের উচ্চ প্রবৃদ্ধি নিয়ে যা প্রচার করতেন তার পুরোটাই ছিল ‘ভুয়া’। এমনটাই বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৃহস্পতিবার সুইজারল্যান্ডের দাভোসে বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনের ফাঁকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেন তিনি। এসময় হাসিনার সীমাহীন দুর্নীতি নিয়ে প্রশ্ন না তোলায় বিশ্বকেও দোষারোপ করেছেন ড. ইউনূস।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়েছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত বছরের আগস্টে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে প্রতিবেশী দেশ ভারতে পালিয়ে যান শেখ হাসিনা। এরপর বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দায়িত্ব নেন ৮৪ বছর বয়সী ড. ইউনূস। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন এই অর্থনীতিবিদ।

ক্ষমতায় বসে টানা ১৫ বছর দেশ শাসন করেন শেখ হাসিনা। ওই সময়ে দেশের অর্থনীতি এবং বিশাল পোশাক শিল্পের পুনরুজ্জীবনের কথা বলে এর পুরো কৃতিত্ব দাবি করেন তিনি। তবে তার বিরুদ্ধে সমালোচকদের গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে, তিনি বাকস্বাধীনতা ও ভিন্নমত দমনে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে অভিযুক্ত।

২০০৯ সাল থেকে বাংলাদেশ শাসন করা হাসিনার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধ, গণহত্যা, জোরপূর্বক গুম, দুর্নীতি এবং অর্থ পাচারের শক্ত অভিযোগ রয়েছে। যা তদন্ত করছে অন্তর্বর্তী সরকার। এছাড়া নয়াদিল্লির কাছে তাকে প্রত্যর্পণের জন্য অনুরোধ জানিয়েছে ঢাকা। যদিও এসব অপকর্মের কথা স্বীকার করেন না হাসিনা এবং তার দল। অন্যদিকে এখনও ঢাকার অনুরোধে সাড়া দেয়নি দিল্লি।

দাভোসে অর্থনৈতিক সম্মেলনের ফাঁকে ড. ইউনূস উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে কীভাবে দেশ পরিচালনা করতে হয়, তা বলেছেন। তিনি অভিযোগ করেন, কেউই হাসিনার বিষয়ে প্রশ্ন তোলেনি। যা ভালো বিশ্ব ব্যবস্থার লক্ষণ নয়। ড. ইউনূস বলেন, এমনটা হওয়ার জন্য পুরো বিশ্বই দায়ী। তাই হাসিনা গোটা বিশ্বের জন্যই একটি ভালো শিক্ষা।

তিনি আরও বলেন, প্রবৃদ্ধির জন্য আমরা সকলকে ছাড়িয়ে গেছি, এ কথা পুরোটাই মিথ্যা।

কেন ওই প্রবৃদ্ধিকে ভুয়া মনে করেন সে সম্পর্কে বিস্তারিত কিছু বলেননি ড. ইউনূস। তবে অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির ওপর বিশেষ জোর দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। কোভিড মহামারি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের আগে ২০১৭-'১৮ অর্থবছরে বার্ষিক প্রবৃদ্ধি প্রায় ৮ শতাংশে পৌঁছায়। যেখানে হাসিনার ক্ষমতা গ্রহণের সময় অর্থাৎ ২০০৯ সালে প্রবৃদ্ধি ছিল ৫ শতাংশ।

২০২৩ সালে বাংলাদেশকে বিশ্বের দ্রুততম বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। ১৯৭১ সালের পর ২০১৫ সালেই প্রথম দরিদ্রতম দেশ থেকে নিম্ন-মধ্যম আয়ের মর্জাদা অর্জন করে বাংলাদেশ।

সরকারি চাকরিতে কোটা বৈষম্যের বিরুদ্ধে গত বছরের জুলাইতে আন্দোলন শুরু করে শিক্ষার্থীরা। পরে হাসিনার দমন-পীড়নে এক সময় শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলন সহিংস হয়ে ওঠে। যা বিশ্বব্যাপী সমালোচনার ঝড় তোলে। যদিও হাসিনা সবসময়ই তার অতিরিক্ত বল প্রয়োগের কথা অস্বীকার করেন।

হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে ড. ইউনূসের নাম সুপারিশ করেন ছাত্র নেতারা। এই অন্তর্বর্তী সরকারই বাংলাদেশে পরবর্তী নির্বাচন বাস্তবায়ন করবে বলে তাদের দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। যার ভিত্তিতে ইতিমধ্যেই নির্বাচনের সময়সীমা ঘোষণা করেছেন ড. ইউনূস। ২০২৫ সালের শেষ অথবা ২০২৬ সালের প্রথম দিকে নির্বাচন করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন তিনি।

প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, তিনি নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে আগ্রহী নন।

‘দরিদ্রদের ব্যাংকার’ হিসেবে পরিচিত ড. মুহাম্মদ ইউনূস। গ্রামের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য ১০০ ডলারের কম ঋণ দেয় তার প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণ ব্যাংক। এই ক্ষুদ্র ঋণে উপকৃত হয়ে অনেকেই সাবলম্বী হয়েছেন বলে নোবেল পান ড. ইউনূস। সাধারণত ঐতিহ্যবাহী ব্যাংকগুলো এভাবে কাজ করতে পারছে না।

রয়টার্সকে ড. ইউনূস বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমি প্রবৃদ্ধির হার দ্বারা খুব বেশি প্রভাবিত নই। সমাজের প্রান্তিক মানুষের জীবনযাত্রার মান দ্বারা প্রভাবিত। তাই আমি এমন একটি অর্থনীতির কথা চিন্তা করি যেখানে সম্পদকে কেন্দ্রীকরণের ধারণা থেকে বের হওয়া যাবে।

হাসিনার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক গলায় গলায় থাকলেও তার পতনের পর পুরোপুরি পাল্টে যায় সে চিত্র। এখন ঢাকা ও নয়াদিল্লির সম্পর্কে এক ধরনের উত্তেজনা বিরাজ করছে। যদিও উভয় দেশই বাণিজ্যিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্কে আবদ্ধ।

ঢাকা-দিল্লির তিক্ততার মূল কারণ শুধু শেখ হাসিনাকেই সমর্থন দিয়ে গেছে ভারত। এরমধ্যে জুলাই অভ্যুত্থানে আন্দোলনকারীদের ওপর দমন-পীড়নের অভিযোগে হাসিনাকে ফেরত চেয়েছেন ড. ইউনূস। যাতে এখন সাড়া দেয়নি দিল্লি। যার ফলে দুই দেশের তিক্ততা বেড়েছে আরও কয়েক গুন।

রয়টার্স বলছে, ভারতের সঙ্গে বৈরি সম্পর্কের কারণে বাংলাদেশ এখন কিছুটা কঠিন পরিস্থিতিতে রয়েছে। এক্ষেত্রে এই কঠিন মুহূর্তে ভারতের চির প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে বাংলাদেশের দীর্ঘমেয়াদী বন্ধু হিসেবে অভিহিত করে ড. ইউনূস বলেন, নয়াদিল্লির সঙ্গে সম্পর্কের টানাপোড়েন ‘ব্যক্তিগতভাবে আমাকে অনেক কষ্ট দেয়’। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক যতটা সম্ভব শক্তিশালী হওয়া উচিত। আপনি জানেন, বাংলাদেশের মানচিত্র না এঁকে আপনি ভারতের মানচিত্র আঁকতে পারবেন না। কেননা বাংলাদেশের স্থল সীমান্ত প্রায় পুরোটাই ভারতের সঙ্গে যুক্ত।

আন্তর্জাতিক এর আরো খবর

জুলাইয়ের ১২ দিনেই রেমিট্যান্স ১৩ হাজার কোটি টাকা

জুলাইয়ের ১২ দিনেই রেমিট্যান্স ১৩ হাজার কোটি টাকা

২ দিন আগে
আন্তর্জাতিক
আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জিং হলেও নির্বাচন সম্ভব : বিবিসি বাংলাকে সিইসি

আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জিং হলেও নির্বাচন সম্ভব : বিবিসি বাংলাকে সিইসি

২ দিন আগে
আন্তর্জাতিক
নির্বাচন না থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি: মির্জা ফখরুল

নির্বাচন না থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি: মির্জা ফখরুল

৩ দিন আগে
আন্তর্জাতিক
সরকার কেন অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না— প্রশ্ন তারেক রহমানের

সরকার কেন অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না— প্রশ্ন তারেক রহমানের

৩ দিন আগে
আন্তর্জাতিক
মিটফোর্ড হাসপাতালে ভাঙারি ব্যবসায়ী খুন: অস্ত্রসহ চারজন গ্রেপ্তার

মিটফোর্ড হাসপাতালে ভাঙারি ব্যবসায়ী খুন: অস্ত্রসহ চারজন গ্রেপ্তার

৪ দিন আগে
আন্তর্জাতিক
ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই ও সংস্থা পুনর্গঠনে অনুমোতি যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের

ফেডারেল কর্মী ছাঁটাই ও সংস্থা পুনর্গঠনে অনুমোতি যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্টের

৪ দিন আগে
আন্তর্জাতিক
সর্বশেষ
জুলাইয়ের ১২ দিনেই রেমিট্যান্স ১৩ হাজার কোটি টাকা

জুলাইয়ের ১২ দিনেই রেমিট্যান্স ১৩ হাজার কোটি টাকা

চলতি জুলাই মাসের প্রথম ১২ দিনে প্রবাসী আয় (রেমিট্যান্স) এসেছে ১০৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, যা বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ১৩...

টানা পাঁচ ম্যাচে জোড়া গোল, মেসির জাদুতেই মায়ামির জয়

এমএলএসে দুর্দান্ত ফর্মে আছেন লিওনেল মেসি। ন্যাশভিল এসসির বিপক্ষে ২-১...

টানা পাঁচ ম্যাচে জোড়া গোল, মেসির জাদুতেই মায়ামির জয়

আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জিং হলেও নির্বাচন সম্ভব : বিবিসি বাংলাকে সিইসি

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সম্প্রতি...

আইনশৃঙ্খলা চ্যালেঞ্জিং হলেও নির্বাচন সম্ভব : বিবিসি বাংলাকে সিইসি

নির্বাচন না থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি: মির্জা ফখরুল

ঢাকা: দেশে নির্বাচন না থাকার কারণেই আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে...

নির্বাচন না থাকায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি: মির্জা ফখরুল

সরকার কেন অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না— প্রশ্ন তারেক রহমানের

ঢাকা: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, ‘অন্যায়কারীদের বিরুদ্ধে আমরা...

সরকার কেন অন্যায়কারীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না— প্রশ্ন তারেক রহমানের

মিটফোর্ড হাসপাতালে ভাঙারি ব্যবসায়ী খুন: অস্ত্রসহ চারজন গ্রেপ্তার

ঢাকা: পুরান ঢাকার স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতালের সামনে...

মিটফোর্ড হাসপাতালে ভাঙারি ব্যবসায়ী খুন: অস্ত্রসহ চারজন গ্রেপ্তার