খালেদা জিয়াকে মুক্ত না করলে যে কোনো পরিণতির জন্য তৈরি থাকুন
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, খালেদা জিয়ার মুক্তি না হলে যে কোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা খুব স্পষ্ট করে বলতে চাই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করুন, অন্যথায় যেকোনো পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। দেশের মানুষ তাকে অন্যায়ভাবে কারারুদ্ধ হতে দেবে না।শনিবার (২৯ জুন) রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে আয়োজিত সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন।
খালেদা জিয়াকে গণতন্ত্রের প্রতীক উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল অন্যান্য দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানান, আসুন গণতন্ত্র রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হই, খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার জন্য যেভাবে আন্দোলন করেছি। তরুণদের প্রতি আহ্বান, দেশের ভবিষ্যৎ আপনাদের হাতে, দেশের গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ।
তিনি বলেন, বাংলাদেশে খালেদা জিয়া ও গণতন্ত্রকে আলাদা করার কোনো সুযোগ নেই। গণতন্ত্রের আন্দোলনের জন্য আজ আমাদের ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। আমাদের ৭০০ জনেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছে। হাজার হাজার মানুষকে বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হয়েছে। মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে চার হাজার নেতাকর্মীকে। মিথ্যা মামলায় অনেক নেতা-কর্মী কারাগারে।
তিনি আরও বলেন, এর উদ্দেশ্য একটাই, দেশের গণতন্ত্রকামী যুবক ও গণতন্ত্রকামী মানুষকে গ্রেপ্তার, নির্যাতন, গুম করে গণতন্ত্রকে চিরতরে বিদায় করতে চায়। তারা এটা করেছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ভয়ে মরে লাভ নেই। সাহসী প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। এ কথা বারবার বলতে হয়- কারণ পরিবর্তন শুধু আমাদের মতো বুড়োদের থেকে আসে না। পরিবর্তন আসে তরুণদের মাধ্যমে।
সরকার দেশকে ধ্বংস করেছে মন্তব্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ সরকার দখলদার সরকার। তারা জনগণের ম্যান্ডেট পায়নি। একদিকে তারা ধ্বংস করেছে রাজনৈতিক কাঠামো, অন্যদিকে ধ্বংস করেছে অর্থনৈতিক কাঠামো। তারা ব্যাংক লুট করে বিদেশে পাচার করে। মানুষ চিকিৎসা পাচ্ছে না। শিক্ষাও ধ্বংসের দিকে নিয়ে গেছে।
বিএনপির এই নেতা বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের দুর্নীতির কথা কেউ ভাবতেও পারে না, সেনাপ্রধান-তিনি আজ দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছেন। সরকারি দুর্নীতির খবর বেরিয়ে আসছে। অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে আজ পুলিশ বাহিনীর প্রধান নাকি হাজার কোটি টাকার মালিক! যাদের বড় বড় রাঘব বোয়াল, চোর, ধরা হচ্ছে না।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, কয়েকদিন আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জনগণের কাছ থেকে সরে গেলে বাঁচব না। দেশবাসী মনে করে র্যাব-পুলিশ আপনাদের কাছ থেকে সরে গেলে আপনাদের সরকারের মৃত্যু হবে। আপনার সরকার রাজপথে লুটপাট করবে। আপনার সরকারের পতন হবে। সরকারের উদ্দেশে তিনি বলেন, মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে কারাগারে বন্দি করা হয়েছে। তাকে চিকিৎসা সেবা থেকে বঞ্চিত করা হয়েছে। মানুষের ভাষা বোঝে; অবিলম্বে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন।
খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে নতুন করে সংগ্রাম শুরু হয়েছে জানিয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান খালেদা জিয়াকে মুক্তি না দিয়ে ঘরে না ফেরার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, এ কারণে আজ নেতাকর্মীদের শপথ নিতে হচ্ছে।
আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসনের কারণে দেশে অনিয়ম আজ নিয়মে পরিণত হয়েছে। তাই প্রতিরোধ করা আমাদের জন্য কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। শাসকদের সমালোচনা করে আমীর খসরু বলেন, বাংলাদেশে আজ আইনের শাসন নেই, জনগণের ভোটের অধিকার নেই, বাক স্বাধীনতা নেই, মানবাধিকার নেই, জীবনের নিরাপত্তা নেই। এখানে অন্যায়-অনিয়ম আজ শাসন-আইনে পরিণত হয়েছে। কেউ কথা বললে গুম হয়ে যাবে, মেরে ফেলা হবে। কারাগারে বিনা চিকিৎসায় মরতে হচ্ছে নেতাকর্মীদের। আমরা কি শুধু প্রতিবাদ করেই ঘর থেকে বের হতে পারি? না। এখানে প্রতিরোধ এখন কর্তব্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিদেশে উন্নত চিকিৎসা না দিয়ে ধাপে ধাপে গুরুতর অসুস্থ খালেদা জিয়ার জীবন শেষ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও চেয়ারপারসনের ব্যক্তিগত চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
সভাপতির বক্তব্যে মির্জা আব্বাস বলেন, খালেদা জিয়া সুস্থ থাকলে দেশ সুস্থ থাকবে বলে একটি ব্যানার দেখলাম। সেটাই ঠিক। বেগম খালেদা জিয়া অসুস্থ, আজ পুরো জাতি অসুস্থ। চোর-ডাকাত-ডাকাত-বদমাইসরা সবাই মুক্তি, আর আপনি (প্রধানমন্ত্রী) জাতীয় নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি চান না। আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, যে কোনো মূল্যে জাতীয় নেতাকে মুক্তি দিতে হবে। তার মুক্তির স্বার্থে কারো সাথে কোনো আপস করা হবে না, আমরা তাকে মুক্তি করেই নিব ইনশাআল্লাহ।
সমাবেশ উপলক্ষে নয়াপল্টন, কাকরাইল, ফকিরা পুল, বিজয়নগর সড়কের বিভিন্ন স্থানে পুলিশ মোতায়েন দেখা গেছে।