November 23, 2024
বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি সম্ভব নয়, মমতার কড়া বার্তা

বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি সম্ভব নয়, মমতার কড়া বার্তা

বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি সম্ভব নয়, মমতার কড়া বার্তা

বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তার পানি ভাগাভাগি সম্ভব নয়, মমতার কড়া বার্তা

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী মমতা ব্যানার্জি বলেছেন, তার রাজ্যের অংশগ্রহণ ছাড়া বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা ও গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি নিয়ে কোনো আলোচনা হবে না। সোমবার (২৪ জুন) ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা এক চিঠিতে তিনি এসব মন্তব্য করেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দাবি করেছেন, তিস্তার পানি বণ্টনের ফলে উত্তরবঙ্গের লাখ লাখ মানুষের জীবন ও জীবিকা বিপন্ন হবে। তিস্তার পানি বাংলাদেশকে দেওয়া সম্ভব নয়। সোমবার প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে লেখা চিঠিতে তিনি এই বিষয়ে তার দৃঢ় অবস্থান জানিয়েছেন।

নয়াদিল্লিতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের প্রতিবাদে কড়া ভাষায় এই চিঠি লিখেছেন মমতা। তাঁকে বাদ দিয়ে তিস্তা-গঙ্গার জল বণ্টন-সহ পশ্চিমবঙ্গ সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বলে ক্ষুব্ধ মমতা।

মোদিকে সতর্ক করে মমতা বলেন, পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অংশগ্রহণ ছাড়া তিস্তা ও ফারাক্কার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে কোনো আলোচনায় তার তীব্র আপত্তি রয়েছে। তিনি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থে আপস করবেন না।

চিঠিতে মমতা লিখেছেন, ‘গঙ্গা ও তিস্তার পানি বণ্টন নিয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আপনার হয়তো কিছু আলোচনা হয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকারের কোনো মতামত না নিয়ে এমন একতরফা আলোচনা কাম্য বা গ্রহণযোগ্য নয়।

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের সঙ্গে তার ভালো সম্পর্ক রয়েছে। ছিটমহল বিনিময়, রেল ও বাস সংযোগের মতো গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের মাধ্যমে এই দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়েছে। তিনি এই সম্পর্ক বজায় রাখতে চান, তবে তিনি জলের বিষয়ে আপস করতে রাজি নন।

মমতা বলেন, জল খুবই মূল্যবান। নিয়ন্ত্রণের রসদ নিয়ে কোনো আপস করতে ‘আমরা প্রস্তুত নই’। পানি বণ্টনের বিষয়টি পশ্চিমবঙ্গের মানুষের কাছে খুবই স্পর্শকাতর।

আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, সোমবার বিকেলে নবান্নে এক সংবাদ সম্মেলনে জল বণ্টন নিয়ে নয়াদিল্লি-ঢাকা দ্বিপাক্ষিক উদ্যোগ নিয়ে প্রশ্ন তোলেন মমতা। তিনি আরও অভিযোগ করেন, বাংলাদেশ চীনের সঙ্গে একটি বাঁধ (জলাধার) নির্মাণ করেছে।

গঙ্গার পানি বণ্টন নিয়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে ১৯৯৬ সালে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। সেই চুক্তির মেয়াদ ২০২৬ সালে শেষ হওয়ার কথা। চিঠিতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চুক্তির পুনর্নবীকরণের বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা তুলে ধরেন।

মোদি ও হাসিনার মধ্যে বৈঠকে ‘ফারাক্কা-গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তি’ পুনর্নবীকরণের জন্য একটি ‘জয়েন্ট টেকনিক্যাল কমিটি’ গঠন করা হয়। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে দুই দেশের মধ্যে পানি বণ্টন চুক্তি নবায়নের প্রক্রিয়া শুরু হয়।

১৯৯৬ সালের ভারত-বাংলাদেশ ৩০ বছরের গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির সময় বাংলাদেশের শেখ হাসিনা ক্ষমতায় ছিলেন। দিল্লিতে এইচডি দেবগৌড়ার যুক্তফ্রন্ট সরকার ছিল। পশ্চিমবঙ্গের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বোস গঙ্গার জল বণ্টন চুক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিলেন। সে সময় কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যকে যথাযথ গুরুত্ব দিয়েছিল।

মোদি সরকারের অধীনে ফেডারেল কাঠামো উপেক্ষা করে রাজ্যগুলিকে পুরো প্রক্রিয়া থেকে বাদ দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। চিঠিতে মমতা লিখেছেন, “সিকিমে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের কারণে, তিস্তার মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা হয়েছে। পরিবেশের উপর ক্ষতিকর প্রভাব পড়েছে। আমি অবাক হয়ে দেখছি যে জলবিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের  ভারতীয়দের স্বাস্থ্য পুনরুদ্ধারের কোনও উদ্যোগ নেই।

মুখ্যমন্ত্রী বলেন যে, পশ্চিমবঙ্গের জনজীবনে গঙ্গার জলের গুরুত্বের পাশাপাশি ফারাক্কার জলও কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখার জন্য একটি বড় আশা। গঙ্গার পানি বণ্টন চুক্তির সময় কলকাতা বন্দরের নাব্যতা রক্ষাসহ নদীর রক্ষণাবেক্ষণ, পলি অপসারণ ও নদীর তীর রক্ষার জন্য তহবিল দেওয়ার কথা থাকলেও তা পূরণ হয়নি।

সেই সঙ্গে চিঠিতে মুখ্যমন্ত্রীর বার্তা, ফারাক্কা ফিডার ক্যানেল দিয়ে অন্তত ৪০ হাজার কিউসেক জল পেলে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা বজায় রাখা সম্ভব। তা না হলে, গঙ্গার পলি জমার ফলে কলকাতা বন্দরের নাব্যতা নষ্ট হতে পারে।

সিকিমে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ফলে তিস্তায় জলের প্রবাহ কমেছে এবং উত্তরবঙ্গের কৃষকরা এর জন্য ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন বলেও অভিযোগ করেন মুখ্যমন্ত্রী।

১৯৯৬ সালের চুক্তি অনুযায়ী, ভারত জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে প্রতিদিন ৪০,০০০  কিউসেক পানি পায়। ফারাক্কা ব্যারাজের পানি ফিডার ক্যানেলের মাধ্যমে কলকাতা বন্দরে যায়। অবশিষ্ট পানি মূল ব্যারেজ দিয়ে বাংলাদেশে আসে। তবে মার্চ-এপ্রিল মাসে নদীতে পানি কমতে শুরু করলে সমস্যা বাড়ে।

চুক্তি অনুযায়ী মার্চে ১০ দিনের জন্য ৩৫ হাজার কিউসেক পানি বাংলাদেশে যাবে। ভারত পরবর্তী ১০ দিনের জন্য একই পরিমাণ পানি পাবে। এপ্রিলে উল্টো। ওই মাসে ভারত ২০ দিন পায় ৩৫ হাজার কিউসেক পানি। বাংলাদেশ শেষ ১০ দিন পাবে একই পরিমাণ পানি। বাকি সময় নদীতে যে পানিপ্রবাহ থাকবে, তা সমান ভাবে পাবে দুদেশ। যদিও চুক্তি অনুযায়ী এই পানি বাংলাদেশ পায় না।

প্রায় আট বছর আগে, পশ্চিমবঙ্গ সরকার ফারাক্কা ব্যারাজের মাত্র ২০০ কিলোমিটার দক্ষিণে পাংশায় পদ্মা নদীর উপর একটি বাঁধ নির্মাণের হাসিনা সরকারের উদ্যোগে আপত্তি তোলে। মুখ্যমন্ত্রী চিঠিতে লিখেছেন যে দুই দেশের উপর দিয়ে প্রবাহিত জলঙ্গী এবং মাথাভাঙ্গা নদী ইতিমধ্যে পদ্মার সাথে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেছে। তিনি লিখেছেন, “এর ফলে সুন্দরবনে মিষ্টি পানির প্রবাহ ব্যাহত হয়েছে।

১৯৮৩ সালে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে একটি অস্থায়ী চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। ২০১১সালে, দুই দেশ আরেকটি তিস্তা চুক্তির খসড়া তৈরি করে,, যেখানে শুষ্ক মওসুমে ভারতের ৩৭.৫ শতাংশ এবং বাংলাদেশের ৪২.৫ শতাংশ পানি পাওয়ার কথা হয়।

কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় পশ্চিমবঙ্গের স্বার্থের ক্ষতির কথা উল্লেখ করে চুক্তির বিরোধিতা করেন। পানি বণ্টনের বিষয়টি ভারতের সংবিধান অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় অধিকার, যদিও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর আপত্তি উপেক্ষা করে তিস্তা চুক্তি কার্যত সম্ভব নয়।

আরও পড়ুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X