নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তে মায়ানমারের আরাকান সেনাবাহিনীর গুলিতে বাংলাদেশি নিহত
লক্ষ লক্ষ মানুষের রক্তের বিনিময়ে গড়ে উঠেছে যে দেশ। যে দেশের অনেকগুলো জাতীয় প্রতীকে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের শৌর্য বীর্য প্রকাশ পায়। সেখানেই আশেপাশের দুর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র মায়ানমার আমাদের দেশের জনগণকে সরাসরি কিছু না বলেই কপালে গুলি করে মেরে পলিথিনে পেচিয়ে রাখে। এর চেয়ে দুঃখজনক হয়তোবা আর কিছুই নেই। এটাই বাংলাদেশের মতো ক্ষমতায় থেকে পঁচে যাওয়া, গন্ধ ছুটে যাওয়া, দুর্বল হয়ে যাওয়া আর ভারতের কাছে মার খেতে খেতে নতজানু হয়ে পড়া রাষ্ট্রের পরিচয়।
মায়ানমারের বিদ্রোহী দল আরকান আর্মি (এএ) পার্বত্য জেলা বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ৪৮ নং পিলারের ওপারে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বেন্দুলা বাজারে স্থানীয় পণ্য বিক্রি করে ফেরার সময় একজন বাংলাদেশী যুবককে প্রতিপক্ষের সম্পদ ভেবে গুলি করে হত্যা করেছে।
রোববার (১২ মে) সকাল ৮টার দিকে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে জিরো লাইন থেকে অন্তত ১ কিলোমিটার দূরে আরকান ঘাট নামক স্থানে এ ঘটনা ঘটে।
নিহত আবুল কালাম (২৮) নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার সদর ইউনিয়নের ভামথি গ্রামের বদিউজ্জামানের ছেলে। তার দুটো বাচ্চাও আছে, তারা এখন হয়ে গেলো এতিম। নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অন্যদিকে বাংলাদেশি যুবককে হত্যার পর লাশ ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে সারাদিন সীমান্ত এলাকায় আটকে রাখে জঙ্গি সংগঠন আরাকান আর্মি।
প্রসঙ্গত, রোববার (১২ মে) ৩ রাউন্ড গুলিতে নিহত আবুল কালামের পরিবারকে আরাকান আর্মির সদস্যরা সীমান্তের ৪৮তম পিলারের কাছে আরকান ঘাট নামক স্থানে আটকে রাখে। বেলা ১টার দিকে লাশ হস্তান্তর করা হয়। নিহত আবুল কালামের ভাই বিষয়টি স্বীকার করে লাশের জন্য অপেক্ষা করছেন।
লাশ ফেরত পেতে সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সীমান্তে অপেক্ষা করেন পরিবারের সদস্যরা। তবে আরাকান আর্মি লাশ ফেরত দিতে কয়েক রাউন্ড করে। অবশেষে লাশ ফেরত দিয়ে দাফন সম্পন্ন হয়।
এদিকে নিহতের স্ত্রী জানান, রোববার ভোর সাড়ে তিনটার দিকে তার স্বামী অন্যদের সঙ্গে সীমান্তে যান। সকালে খবর আসে আরাকান আর্মির গুলিতে স্বামী নিহত হয়েছে।
স্বামীকে হারিয়ে এখন বাকরুদ্ধ আরিফা মনি। তিনি বলেন, তার স্বামী কোনো বিদ্রোহী দলের সঙ্গে পরিচিত ছিলেন না। দরিদ্র মানুষ কাজ করে সংসার চালায়। তার স্বামী ব্যবসায়ীদের শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।
অপরদিকে প্রত্যক্ষদর্শী সূত্র জানায়, আরাকান আর্মির হাতে নিহত আবুল কালাম বাংলাদেশ থেকে মুরগির ডিমের ১টি খাচিসহ কিছু পণ্য নিয়ে সীমান্তের ওপারে মিয়ানমার অংশের বেন্দুলা বাজারে যায়। ফেরার পথে আরকান ঘাট নামক স্থানে বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সদস্যরা তাকে আটক করে। তখন তার দলে ছিলেন ৫ জন। তাদের মধ্যে নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিদ্রোহী গোষ্ঠী আরকান আর্মির সদস্যরা ইতিমধ্যেই আবুল কালামকে মিয়ানমারের আরেক বিদ্রোহী গোষ্ঠী রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশনের (আরএসও) উৎস হিসেবে হয়রানি করে আসছিল। সেজন্য কোন কথা না বলে ওকে কাছে ডেকে কপাল বরাবর গুলি করে।
ফলে ঘটনাস্থলেই রক্তাক্ত হয়। এতে তার মৃত্যু হয়। পরে তাকে সারাদিন পলিথিনে আটকে রাখা হয়। সন্ধ্যায় কাঠের বাক্সে রাখে ।
এদিকে নিহত আবুল কালামের পরিবার জানায়, বিদ্রোহী গ্রুপ আরকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশিদের গুলি করে হত্যার পর সীমান্তে চরম আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। তারপরও লাশ ফেরত নিতে তারা সীমান্তে অবস্থান করে।
সূত্র আরও জানায়, এ ঘটনার পর বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্ত সড়কে সব ধরনের যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যায়। তবে বিজিবি তাদের টহল জোরদার করেছে।
এ বিষয়ে জানতে 48 নম্বর বর্ডার পিলারের দায়িত্বে থাকা নাইক্ষ্যংছড়ি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ১১-বিজিবি ক্যাপ্টেন সাহল আহমদ নোবেল ও ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল মান্নানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হয়। কিন্তু তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
তবে এ ব্যাপারে নাইক্ষ্যংছড়ি সদর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুরুল আবছার ইমন বলেন, বামহাতি রাম এলাকার যুবক আবুল কালামের গুলিতে নিহত হওয়ার খবর পেয়েছি।অবশেষে তার লাশ ফেরত দিয়েছে আর্ক্যান আর্মি। তবে সকাল ১টার দিকে লাশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ২৪০ পরিবারকে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন বান্দরবান জেলা প্রশাসন।
বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্তের ২৪০ পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন জেলা প্রশাসক (ডিসি) শাহ মুজাহিদ উদ্দিন। মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে নাইক্ষ্যংছড়ি সীমান্ত পরিদর্শনকালে ডিসি এ নির্দেশ দেন।
তিনি বলেন, বান্দরবান-মিয়ানমার সীমান্তে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সংঘাত চলছে। এ অবস্থায় শিক্ষার্থী ও সীমান্তের সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার বাসিন্দাদের (২৪০ পরিবার) নিরাপদ আশ্রয়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত সীমান্তবর্তী স্কুলগুলো বন্ধ রাখতে বলা হয়েছে।
বান্দরবানের ঘুমধুম ও তুমব্রু সীমান্ত পরিদর্শন করেছেন জেলা প্রশাসক ও পুলিশ সুপার। বিকেল ৩টায় তারা নাইক্ষ্যংছড়ির তুমব্রু সীমান্ত পয়েন্ট ঘুরে ঘুমধুম ইউনিয়ন পরিষদে যান। স্থানীয় প্রশাসনের সঙ্গে আলোচনার পর তারা জলপাইতলী এলাকায় যান। ওই সময় মিয়ানমারের ছোড়া মর্টার শেলে নিহত হোসনে আরার পরিবারের সঙ্গে কথা বলেন ডিসি। পাশাপাশি হোসনে আরার পরিবারকে মাত্র ২০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েছে প্রশাসন। পরিদর্শন শেষে সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জেলা প্রশাসক।
আরও পড়তে
মায়ানমারে বিদ্রোহ-সংঘাত বাংলাদেশ সীমান্তে উত্তেজনা: শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ