বন্দুকের গুলিতে মৃত্যুর শীর্ষ দেশ যুক্তরাষ্ট্রের বাফেলোতে গুলিতে ২ বাংলাদেশি নিহত
যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কের বাফেলোতে এক বন্দুকধারীর গুলিতে দুই বাংলাদেশি নিহত হয়েছেন। স্থানীয় সময় শনিবার (২৭ এপ্রিল) দুপুরে বাফেলোর পূর্বাঞ্চলে এ ঘটনা ঘটে বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে।
বাফেলো পুলিশের মুখপাত্র মাইকেল জে জর্জ বলেছেন, শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার কিছু পরে জেনার স্ট্রিটের ১০০ নম্বর ব্লকে গুলি চালানোর জন্য পুলিশকে ডাকা হয়েছিল। পরে পুলিশের সোয়াট টিমও ঘটনাস্থলে পৌঁছায়।
অনলাইন পোর্টাল বাফেলোনিউজ অনুসারে, বিকেল ৪টার দিকে ১৪৮ জেনার স্ট্রিটের উঠানে গুলিবিদ্ধ এক ব্যক্তিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। এ ঘটনায় কারা বা কারা জড়িত সে বিষয়ে পুলিশ কিছু জানায়নি। এখনো কাউকে ধরতে পারিনি।
সিটি অব বাফেলোর এশিয়ান উপদেষ্টা শাহী চৌধুরী বাফেলো শহরে দুই বাংলাদেশি নিহত হওয়ার বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। নিহতরা হলেন সিলেটের ইউসুফ ও কুমিল্লার বাবু। এ ঘটনার পর বাফেলো শহরে হাজার হাজার বাংলাদেশি আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।
গত মাসে নিউইয়র্কে পুলিশের গুলিতে নিহত হন ১৯ বছর বয়সী বাংলাদেশি যুবক উইন রোজারিও। ২৭শে মার্চ স্থানীয় সময় দুপুরে, উইন রোজারিও নিউইয়র্কের ওয়েট পার্কে তার বাড়ি থেকে পুলিশকে ফোন করে সাহায্য চেয়েছিলেন। নিহতের বাবার দাবি, ফোন পেয়ে পুলিশ তাদের বাড়িতে গিয়ে মায়ের সামনেই ছেলেকে লক্ষ্য করে ছয় রাউন্ড গুলি করে।
আইন প্রয়োগকারীরা পরে উইন রোজারিওর মানসিক সমস্যার কথা জানায়। কেন এমন একজনকে গুলি করে হত্যা করতে হলো স্থানীয় জনতা প্রশ্ন করছে। তবে পুলিশের দাবি, কাঁচি দিয়ে তাদের হত্যার চেষ্টা করেছিল উইন।
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বন্দুক হামলায় মৃত্যুর রেকর্ড সংখ্যা ছাড়িয়েছে
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ২০২৩ সালে, বছরের অর্ধেক বা ছয় মাসে বন্দুকের মৃত্যুর জন্য একটি নতুন রেকর্ডে পৌঁছেছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত ছয় মাসে বিভিন্ন রাজ্যে বন্দুক হামলায় যে পরিমাণ মানুষ নিহত হয়েছে তা দেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন।
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটি দ্বারা পরিচালিত একটি ডাটাবেসের বিশ্লেষণ অনুসারে, জানুয়ারি থেকে জুন ২০২৩ পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে মোট ৩৭৭ টি বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে এবং এর মধ্যে নারী ও শিশুসহ মোট ১৪০ জন নিহত হয়েছে। ঘটনা
ডাটাবেস অনুসারে, আগের বছর জানুয়ারী থেকে জুন ২০২২ পর্যন্ত, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে বন্দুকের মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ২৭ । মাত্র এক বছরে মৃত্যুর সংখ্যা ৫ গুণেরও বেশি বেড়েছে।
নিহতরা সবাই ‘গণহত্যা’র শিকার। মার্কিন পরিভাষায়, যখন একটি নির্দিষ্ট স্থানে একক ব্যক্তির দ্বারা একই সময়ে ৪ বা তার বেশি লোককে হত্যা করা হয়, সেই হত্যাকে বলা হয় নির্বিচার হত্যা।
নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ক্রিমিনোলজির অধ্যাপক জেমস অ্যালেন ফক্স এই বছরের পরিসংখ্যান নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, বলেছেন বন্দুক সহিংসতা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা এবং দিন দিন আরও খারাপ হচ্ছে। এমনকি কয়েক বছর আগে, প্রতি বছর বন্দুক সহিংসতায় নিহত মানুষের সংখ্যা ছিল দুই থেকে তিন ডজনের মধ্যে।
কিন্তু গত বছরের প্রথম ছয় মাসে গণহত্যায় নিহতের সংখ্যা দুই ডজন ছাড়িয়েছে। আর এ বছর আমরা যে পরিসংখ্যান দেখছি তা বেশ উদ্বেগজনক।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে, আগ্নেয়াস্ত্রের ক্রমবর্ধমান প্রাপ্যতা এবং ব্যাপক ব্যবহারের সাথে অহিংস হত্যাকাণ্ডের সংখ্যা বাড়ছে। এমনকি চলতি বছরের ৪ জুলাই দেশটির স্বাধীনতা দিবসেও রাজধানী ওয়াশিংটনসহ বিভিন্ন শহরে একাধিক বন্দুক হামলার ঘটনা ঘটেছে।
“আমরা অ্যাসল্ট রাইফেল এবং উচ্চ-ক্ষমতার অস্ত্র বিক্রি নিষিদ্ধ করতে পারি, বন্দুক সংস্থাগুলিকে জবাবদিহি করতে পারি এবং নাগরিকদের উপর কঠোর বন্দুক কেনাবেক আরোপ করতে পারি,” রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনও দেশে বন্দুক সহিংসতার সংখ্যা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার দল, ডেমোক্রেটিক পার্টির আইনপ্রণেতারা আগ্নেয়াস্ত্র ক্রয়, মজুদ এবং ব্যবহার নিয়ন্ত্রণকারী আইন সংস্কারের জন্য সংসদে বারবার বিল পেশ করেছেন; কিন্তু রিপাবলিকান পার্টির বিরোধিতার কারণে ওই বিলগুলো পাস হয়নি।
জেমস অ্যালেন ফক্সও প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন। এই নর্থইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপকের মতে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন ‘সবার জন্য বন্দুক’ নীতিতে রয়েছে এবং যদি এই নীতি চলতে থাকে তবে বন্দুক সহিংসতা আগামী দিনে আরও খারাপ হবে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই পরিস্থিতি থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।