November 22, 2024
তীব্র গরমে যেসব গাছ ঘর শীতল রাখে

তীব্র গরমে যেসব গাছ ঘর শীতল রাখে

তীব্র গরমে যেসব গাছ ঘর শীতল রাখে

তীব্র গরমে যেসব গাছ ঘর শীতল রাখে

প্রবাহমান তাপদাহ স্বাভাবিক জনজীবন বিপর্যস্ত করে দিচ্ছে। প্রকৃতির এমন একটানা বৈরী আচরণ অভাবনীয়। কেবল দিবাভাগে নয়, অহর্নিশি অস্বস্তিকর প্রহর কাটাচ্ছেন মানুষ। সারাদিন কর্মব্যস্ততার পর বাসায় ফিরেও শান্তি নেই। তবে যান্ত্রিক শহরে ইট-পাথরে গাঁথা বাড়ির প্রাণ ফিরিয়ে আনতে ও পরিবেশ শীতল রাখতে পারে গাছ।

পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছ লাগানোর বিকল্প নেই। গাছ আমাদের পরিবেশ, জীববৈচিত্র্য এবং মানুষের জীবন বাঁচাতে সহায়তা করে। গাছ থেকে যে পরিমাণ অক্সিজেন আমরা গ্রহণ করি ঠিক সেই পরিমাণ মানুষের শরীর থেকে বের হওয়া কার্বন-ডাই-অক্সাইড শুষে নেয় গাছ। শুধুমাত্র বেশি বেশি গাছের ব্যবহারই নিশ্চিত করতে পারে বিশুদ্ধ বাতাসের আনাগোনা।

গাছ কেটে সাফ করে ‘সভ্যতার’ বিকাশ যেভাবে হচ্ছে, তাতে আর কতদিন এই সভ্যতা টিকে থাকবে? গাছের অভাবে শহরের ঘরগুলোতে বেশিরভাগই দমবন্ধ পরিবেশ থাকে। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য অন্যতম যে অক্সিজেন গাছ তা সরবরাহ করে।

গাছ কেবল নান্দনিকতাই বাড়ায় না, জীবন্ত করে তোলে গৃহকোণ। মনোমুগ্ধকর পরিবেশ নিশ্চিত করতে গাছ অনবদ্য।

ঘরের ভেতরের গাছ দিনের আলোয় কার্বন-ডাই-আক্সইডকে সালোকসংশ্লেষ প্রক্রিয়ায় অক্সিজেনে পরিণত করে। শুধু তাই নয়, কোনো কোনো গাছ বেনজিন, ফর্মালডিহাইডের মতো দূষিত পদার্থকেও বাতাস থেকে টেনে নেয়।

মানুষের অক্সিজেনের চাহিদা তুঙ্গে। অ্যাজমা, সাইনাস, ব্রঙ্কাইটিস থেকে শ্বাসকষ্টজনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েই চলেছে। তবে এই পরিস্থিতিতে টাটকা প্রাকৃতিক অক্সিজেনের উপর ভরসা তো রাখতেই পারেন। সতেজ বাতাসে শ্বাস নিতে ঘরে রাখুন অক্সিজেন সমৃদ্ধ গাছ।

গবেষণায় দেখা গেছে, এমন কিছু গাছ রয়েছে, যা ঘরে রাখলে শুধুমাত্র অক্সিজেনই পাবেন না, সঙ্গে ঘরের মধ্যে থাকা দূষিত বাতাসও পরিষ্কার করার কাজ ও শীতল রাখবে এগুলো। ঘরকে সবসময় ঠান্ডা করতে বাড়ির আশপাশে, বারান্দায় কিংবা ঘরের ভেতরে লাগাতে পারেন কিছু বিশেষ গাছ। যেগুলো ঘরকে প্রাকৃতিকভাবে শীতল করে তুলবে। আসুন জেনে নিই গরম থেকে বাঁচতে কোন গাছগুলোকে বাড়িতে অবশ্যই লাগাবেন।

মানি প্ল্যান্ট

ঘর সাজানোর গাছ হিসেবে মানি প্ল্যান্ট দারুণ জনপ্রিয়। সুদৃশ্য একগুচ্ছ পাতা নিয়ে এ গাছ গৃহশোভা বাড়ায়। বহু বাড়িতেই এই গাছ থাকে। একে বাঁচানোর জন্যও বিশেষ পরিশ্রম করতে হয় না। এমনকি মাটিও লাগে না এই গাছ বাঁচাতে। শুধু পানিতে রেখে দিলেও বেঁচে থাকে। লতানো মানি প্ল্যান্ট গাছ ঘরের বাতাস শুধু শীতলই করে না রাখে বিশুদ্ধও। বাড়িতে এ গাছ লাগালে খেয়াল রাখবেন পাতা বা কাণ্ড যেন হলুদ না হয়ে যায়। যদি মাটি বা পানির অভাবে গাছ হলুদ আভা ধারণ করে তবে দ্রুত সে অংশ কেটে ফেলুন।

স্নেক প্ল্যান্ট

এ গাছ সহজে মরে না। বিশেষ আলো বা জলেরও প্রয়োজন হয়। টক্সিন পরিষ্কার বা অক্সিজেন সরবরাহ তো করেই। তার সঙ্গে সব থেকে ভালো ব্যাপার, রাতেও এরা অক্সিজেন ঘরের মধ্যে ছাড়তে থাকে। বেডরুমে রাখার জন্য সব থেকে আদর্শ গাছ এটা। ঘরকে শীতল ও সতেজ রাখে।

অ্যালোভেরা

বাংলা যাকে বলে ঘৃতকুমারি। ঘরের অক্সিজেনের মাত্রা বাড়াতে এর জুড়ি নেই। ঘরের মধ্যে থাকা কার্বন মনো-অক্সাইড, কার্বন ডাই-অক্সাইড, ফর্মালডিহাইডের (টক্সিন) মতো ক্ষতিকারক জিনিস শোষণ করে নেয়। মাত্র এখটি গাছই ৯টি বায়োলজিকাল এয়ার পিউরিফায়ার ক্যানের মতো বাতাস পরিষ্কার করার কাজ করতে পারে। বাড়িতে অ্যালোভেরা থাকলে ঘর কেবল শীতলই থাকবে তা নয়, এর রয়েছে প্রাকৃতিক ঔষধি গুণ যা বিভিন্ন চিকিৎসায় ব্যবহৃত হয়। এ গাছ বাতাসের তাপমাত্রা হ্রাস করে এবং ঘর গরম হয়ে যাওয়া থেকে রক্ষা করে। উজ্জ্বল আলোতে এসব গাছ লাগাতে পারেন।

পিস লিলি

বাতাসে উপস্থিত রাসায়নিক এবং টক্সিন নিমেষের মধ্যে শুষে নেয়। বিশেষত ট্রাইক্লোরোথাইলিন এবং ফর্মালডিহাইড জাতীয় টক্সিন শুষে বাতাস পরিষ্কার করে দেয় এবং পরিবেশ শীতল রাখে। তবে এর পাতা শিশু এবং পোষ্যদের শরীরে বিষক্রিয়া ঘটাতে পারে।

আইভি লতা

নাসার এর গবেষকদের মতে এই গাছ মাত্র ৬ ঘণ্টার মধ্যে ঘরের বাতাসের প্রায় ৬০ শতাংশ টক্সিন এবং ৫৮ শতাংশ পর্যন্ত দুর্গন্ধ শুষে নিতে পারে এবং ঘর শীতল রাখে। বাড়ির দেওয়ালে অনেকে এই গাছ লাগান। কিন্তু গ্রীষ্মপ্রধান দেশে ঘরের ভিতরে রাখাই ভাল। তাতে বাতাসও পরিশুদ্ধ হয়।

চাইনিজ এভারগ্রিন

এ গাছ বিষাক্ত পদার্থ দূর করে বাতাসকে শীতল ও পরিশুদ্ধ করার জন্য কার্যকর। বাড়িতে এ গাছ লাগালে অনেকে এ ধরনের গাছ একসঙ্গে রাখতে চেষ্টা করবেন। কারণ একসঙ্গে থাকলে এ গাছ নিজস্ব বায়ুমণ্ডলীয় বাস্তুতন্ত্র তৈরি করতে পারে।

রাবার ফিগ

রাবার ফিগ গাছটি বাতাস থেকে বিষাক্ত পদার্থ টেনে নেয়। পাশাপাশি ঘরের তাপমাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে।

ক্যাকটাস

ঘরকে শীতল রাখতে বসার ঘরে রাখতে পারেন ক্যাকটাস। টবে লাগানোর উপযোগী কয়েকটি ক্যাকটাসের নাম হলো একাইনো, এপিফাইলাম, নিপল, সেরিয়াস, গোল্ডেন ব্যারেল, ওল্ড লেডি, সেরিয়াস, ফনিমনসা, বানি ইয়ারস, ক্যাব ক্যাকটাস ইত্যাদি। এসব গাছ ঘরের সৌন্দর্যও বৃদ্ধি করে। সেই সঙ্গে বাড়িকেও রাখে শীতল।

অ্যারিকা পাম

অ্যারিকা পাম গাছ অন্য গাছের তুলনায় বাতাসে বেশি অক্সিজেন সরবরাহ করে। তাই ঘর দ্রুত ঠান্ডা ও শীতল করতে এ গাছের জুড়ি মেলা ভার।

ছোট বনসাই বটগাছ

বনসাই বট গাছ ঘরের ভেতরের বাতাসকে ঠান্ডা ও আর্দ্র রাখতে সাহায্য করে। বাড়িতে যে জায়গায় এই গাছ লাগানো হয় তার চারপাশে আর্দ্রতার পরিমাণ অনেক বেড়ে যায়

অ্যান্থুরিয়াম (ফ্ল্যামিঙ্গো লিলি)

এটিও স্প্যাথিফিলাম পরিবারের একটি উদ্ভিদ। কিন্তু এর ফুলের রং আলাদা। এই উদ্ভিদ অভ্যন্তর এবং বায়ু পরিষ্কার এবং ঠান্ডা রাখতে পারে।

স্পাইডার প্ল্যান্ট

স্পাইডার প্ল্যান্টের বিশেষত্ব হল তারা খুব কম আলোতেও সালোকসংশ্লেষণ করতে পারে। ফলে অক্সিজেন সরবরাহ অব্যাহত থাকে। বায়ু থেকে স্টাইরিন, গ্যাসোলিনের মতো বিষাক্ত পদার্থ শোষণ করতে সক্ষম। এটি এমন একটি গাছ প্রায় ২০০ বর্গ মিটার এলাকার বায়ু বিশুদ্ধ করতে পারে। এই গাছটি বাড়ির ভিতরে রাখা খুব সহজ। গাছপালা বাতাস থেকে ফর্মালডিহাইড এবং জাইলিনের মতো দূষক টেনে নেয়। শিশু এবং পোষা প্রাণীও এই উদ্ভিদ থেকে নিরাপদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X