মহিমান্বিত মাহে রমজান
ইসলামি চান্দ্র মাসের নবম মাস পবিত্র রমজান মাস। ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি। তার মধ্যে একটি হল রোজা। এই বরকতময় মাসে রোজা রাখা মুসলমানদের জন্য ফরজ।
রহমত, মাগফেরাত ও নাজাতের দান নিয়ে বছর পেরিয়ে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে পবিত্র রমজান মাস।
রমজানের প্রথম দশক রহমতের। সাধারণত বলা হয় যে, প্রথম দশকে আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের প্রতি রহমত বা দয়া বর্ষণ করতে থাকবেন। আল্লাহর রহমত আমাদের অস্তিত্ব জুড়ে। আল্লাহর রহমত ছাড়া এক মুহূর্তও বাঁচার উপায় নেই। তবে পবিত্র রমজানের প্রথম দশকে রহমতের স্রোত আরও বেশি গতিতে প্রবাহিত হতে থাকে। এতে সিক্ত হয়ে ঈমানদার বান্দারা পরকালে উচ্চ আসনে বসতে পারেন ।
আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে বলেন: “হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেভাবে ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, আশা করা যায় তোমরা তাকওয়া অর্জন করবে। (সূরা বাকারা, আয়াত নম্বর-১৮৩)। ”
এছাড়াও রাসুল (সা.) পবিত্র রমজান মাসকে রহমত, বরকত, কল্যাণ ও নাজাতের মাস বলে অভিহিত করেছেন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের উপর রমজান মাস। এটি একটি বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের উপর এ মাসের রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে রহমতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং বড় শয়তানদের আটক করা হয়েছে।” . এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়েও উত্তম। যে এ রাতের কল্যাণ থেকে বঞ্চিত, সে প্রকৃতপক্ষে সবকিছু থেকে বঞ্চিত। (আহমদ ও নাসাঈ)।”
পবিত্র রমজান মাস বিভিন্ন কারণে অন্যান্য মাসের তুলনায় শ্রেষ্ঠ। চলুন জেনে নেওয়া যাক কেন এই মাসটি সর্বোত্তম ফজিলতপূর্ণ
কুরআন
পবিত্র রমজান মাসে বায়তুল ইজ্জতে সপ্তম আসমানের লওহে মাহফুজ থেকে পৃথিবীর আকাশে পবিত্র কোরআন নাজিল হয়। সেখান থেকে ধীরে ধীরে রমজান মাসে নবী (সা.)-এর কাছে নাজিল হতে থাকে।
অবতীর্ণ কোরআনের উভয় স্তরই এই পবিত্র মাসে বরকতময় করেছে। তাছাড়া সহীহ হাদিসে উল্লেখ আছে যে, শুধু কুরআন নয়, ইব্রাহিম (আ.)-এর সহীফা, তাওরাত, জাবুর, ইঞ্জিলও এই পবিত্র মাসে অবতীর্ণ হয়েছে।
রহমত
পবিত্র রমজান মাসের প্রতিটি মুহূর্তই আল্লাহর বিশেষ রহমতে ভরপুর। এই রমজান মাসে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন এত বেশি রহমত ও বরকত নাযিল করেন যে বান্দার সমস্ত গুনাহ পুড়ে ছাই হয়ে যায়। রমজানের প্রথম ১০ দিন রহমতের, দ্বিতীয় ১০ দিন ক্ষমা ও মাগফেরাতের। এবং শেষ ১০ দিন জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং মুক্তির জন্য মনোনীত করা হয়েছে।
সহীহ হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘এটি এমন একটি মাস যার প্রথম অংশ আল্লাহর রহমত, মধ্যভাগ গুনাহ মাফ এবং শেষ অংশ আগুন থেকে মুক্তি। জাহান্নাম।”
শয়তানকে আবদ্ধ রাখা
পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দিনেই শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়। পাশাপাশি বড় বড় শয়তানকেও বন্দী করে রাখা হয়।
এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমাদের সামনে রমজান মাস। এটি অত্যন্ত বরকতময় ও বরকতময় মাস। আল্লাহ তোমাদের উপর এ মাসে রোজা ফরজ করেছেন। এ মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয়, জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয় এবং বড় বড় শয়তানদের আটক করা হয়। এ মাসে এমন একটি রাত রয়েছে যা হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। যে ব্যক্তি এ রাতের মহান উপকার থেকে বঞ্চিত হয় সে প্রকৃতপক্ষে সবকিছু থেকে বঞ্চিত হয়।
পুরস্কার
অন্যান্য মাসের তুলনায় এ মাসে ইবাদতের সওয়াব অনেক বেশি। রাসুল (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি এ মাসে নফল ইবাদত করল, সে যেন অন্য মাসের ফরজ ইবাদত করল। আর যে ব্যক্তি এ মাসে একটি ফরজ আদায় করল সে যেন অন্য মাসে ৭০টি ফরজ আদায় করল।
রোজা ঢাল স্বরূপ
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, রোজা হল ঢালের মত। সূতরাং অশ্লীলতা করবে না এবং বোকার মতো কাজ করবে না। কেউ যদি তার (রোজাদারের) সাথে ঝগড়া করতে চায়, গালিগালাজ করতে চায়, তাহলে সে যেন দুবার বলে, আমি রোজা রাখছি, আমি রোজাদার। সেই সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, নিশ্চয়ই রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে কস্তুরীর সুগন্ধের চেয়েও উত্তম, সে আমার জন্য খাদ্য, পানীয় ও কাম-বাসনা ত্যাগ করে। সিয়াম আমার জন্য, তাই এর প্রতিদান আমি নিজেই দেব। এবং প্রতিটি নেক কাজের জন্য দশগুণ প্রতিদান দেওয়া হবে।
তাছাড়া রোজা, সাহরি, ইফতার, তারাবীহ, লাইলাতুল কদর, যাকাত, ফিতরা, ইতিকাফসহ অসংখ্য ফজিলতের কারণে পবিত্র রমজান মাস শ্রেষ্ঠ। আর তাই মহান রাব্বুল আলামিন ও তাঁর প্রিয় রাসূলকে সন্তুষ্ট করার জন্য আমাদের উচিত এই পবিত্র মাসে বেশি বেশি দোয়া করা।
আর সুযোগ পেলেই ভালো কাজ করা এবং সর্বদা এবাদতে মশগুল থাকার চেষ্টা করা। রমজানকে জীবনের সর্বোত্তম সুযোগ মনে করা । এই হোক আল্লাহর পক্ষ থেকে রমজানকে পাওয়ার সুযোগের সদ্ব্যবহার।
1 Comment