November 24, 2024
গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছেই

গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছেই

গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছেই

গাজা যুদ্ধ বন্ধের জন্য ইসরায়েলের ওপর চাপ বাড়ছেই

গাজায় যুদ্ধ শেষ করার জন্য ইসরায়েলি সরকারের ওপর ক্রমবর্ধমান চাপের মধ্যে মঙ্গলবার (২৩ জানুয়ারি) চলমান সংঘাতে দেশটির সেনাবাহিনী এক দিনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি হতাহতের শিকার হয়েছে। শোক প্রকাশের পাশাপাশি ইসরায়েলিরা এই ঘটনার জবাব দেওয়ার দাবি জানিয়েছে।

জো বাইডেন আরও ইঙ্গিত করেছেন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ইসরায়েলি সরকারকে উগ্রবাদী হিসাবে দেখে। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে ইসরায়েলের ইতিহাসে সবচেয়ে রক্ষণশীল এই সরকার সংঘাতের সমাধান কঠিন করে তুলতে ভূমিকা পালন করছে।

যোদ্ধারা  ইরাকে মার্কিন বিমান ঘাঁটিতে বেশ কয়েকটি ড্রোন হামলা চালিয়েছে। হামাস-ইসরায়েল যুদ্ধ শুরুর পর ইরাক ও সিরিয়ায় মোতায়েন মার্কিন বাহিনীর ওপর ১৪০টি হামলা চালানো হয়।

এদিকে, জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেছেন, ইসরায়েলের দ্বি-রাষ্ট্র ধারণার বিরোধিতা ও প্রত্যাখ্যানের অবস্থান গ্রহণযোগ্য নয়। এবং এটি কেবল যুদ্ধকে দীর্ঘায়িত করবে।

ইইউ নেতারা ব্রাসেলসে একটি বৈঠকের পর জরুরি ভিত্তিতে গাজায় ত্রাণ পৌঁছে দেওয়ার জন্য “মানবিক করিডোর এবং যুদ্ধবিরতির” আহ্বান জানাতে সম্মত হয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবিক প্রধান সতর্ক করেছেন যে খুব কম সরবরাহে গাজায় ত্রাণ পৌঁছে যাচ্ছে। সম্প্রতি আরও ১২টি ট্রাক ত্রাণসামগ্রী নিয়ে গাজায় প্রবেশ করেছে। কিন্তু সেখানে এখনো কোনো জ্বালানি পৌঁছায়নি।

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু গত সপ্তাহে বলেছেন, হামাস ধ্বংস হলেও যুদ্ধের পর গাজার পূর্ণ নিরাপত্তা নিয়ন্ত্রণ নেবে ইসরাইল। এর পাশাপাশি তিনি পশ্চিম তীরের সার্বভৌমত্বের বিষয়টিও বাতিল করেছেন।

কিন্তু ইসরায়েলের মিত্ররা এই বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছে। তা হলে কেউ কেউ ইসরায়েল থেকে তাদের সমর্থন প্রত্যাহারের আহ্বানও জানিয়েছে। জাতিসংঘ মহাসচিব আরও বলেন, ইসরাইলি দখলদারিত্বের অবসান ঘটাতে হবে।

ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হাগারি বলেছেন, সোমবার অভিযানে অংশ নেওয়া একদল ইসরায়েলি সৈন্য ফিলিস্তিনি প্রতিরোধ যোদ্ধাদের আকস্মিক হামলার শিকার হয়। রকেট চালিত গ্রেনেড হামলায় ২৪ ইসরায়েলি সৈন্যের মধ্যে ২১ জন নিহত হয়। যোদ্ধাদের হামলায় ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর একটি ট্যাঙ্কও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

হামলার বিষয়ে ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু বলেছেন, এই বিপর্যয়ের তদন্ত করা হবে। আর ঘটনা থেকে ইসরাইলকে প্রয়োজনীয় শিক্ষা নিতে হবে।

এদিকে, গাজা উপত্যকার দক্ষিণাঞ্চলীয় শহর খান ইউনিসে হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে স্থল যুদ্ধ তীব্রতর হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী বলছে, তারা শহরটি ঘিরে রেখেছে।

গাজার হামাস পরিচালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, খান ইউনিসের নাসের হাসপাতালে ইসরায়েলি ট্যাংক গোলা বর্ষণ করেছে। আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন। তবে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী জানিয়েছে, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না।

ফিলিস্তিনি রেড ক্রিসেন্ট জানিয়েছে, ইসরায়েলি সেনারা সংস্থাটির সদর দফতরে হামলা চালায়। সেখানে আশ্রয় নেওয়া বেশ কিছু নিরীহ মানুষ আহত হয়।

অন্যদিকে, জাতিসংঘসহ বিভিন্ন সাহায্য সংস্থা আবারও সতর্ক করেছে যে ১৭ লাখ বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনি বেসামরিক নাগরিক রোগ ও দুর্ভিক্ষের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক সিনিয়র মুখপাত্র আবির ইতেফা বলেছেন, গাজা প্রতিদিনই ভয়াবহ বিপর্যয়ের দিকে যাচ্ছে। এই ভূমির বিশাল জনসংখ্যা এই মুহূর্তে বিশ্বের অন্য কোথাও দুর্ভিক্ষের মধ্যে রয়েছে।

এর মধ্যে থেমে নেই ইসরায়েলি আগ্রাসন। গাজা যুদ্ধ আরও ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কার মধ্যে ইসরাইল লেবাননে হিজবুল্লাহর বিভিন্ন অবস্থান লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায়। এছাড়া পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি সেনাদের গুলিতে একজন নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ইয়েমেনে হুথি নিয়ন্ত্রিত স্থাপনায় নতুন আক্রমণ শুরু করে। হুথিরা বলেছে যে তারা পাল্টা ব্যবস্থা নিতে এই হামলার জবাব দেবে।

গতকাল সোমবার দিবাগত রাতে এবং আজ গাজার বিভিন্ন এলাকায় ইসরায়েলি বাহিনী হামলা চালায়। আজ, গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গত ২৪ ঘণ্টায় গাজা উপত্যকায় হামলায় ১২৬ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। গত ৭ অক্টোবর সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ হাজার ২১০। ইসরায়েলি হামলায় ৫৯ হাজার ১৬৭ জন বাসিন্দা আহত হয়েছেন।

গত ২৪ ঘন্টায়, শুধুমাত্র মধ্য গাজার আল-আকসা হাসপাতালে ৫৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ফিলিস্তিনি বার্তা সংস্থা ওয়াফা জানিয়েছে, মধ্য গাজা ছাড়াও দক্ষিণেও হামলা চালানো হয়েছে। মাগাজি এবং আল-বুরেজি শরণার্থী শিবিরে বোমা হামলা করা হয়। এবং উত্তর গাজার জাবালিয়া ও বেইত হানুন এলাকায় ইসরায়েলি হামলায় বেশ কয়েকজন নিহত হয়েছে।

গাজার পরিস্থিতি সম্পর্কে, ইসরায়েলি সামরিক মুখপাত্র ড্যানিয়েল হ্যাগেরি বলেছেন যে ইসরায়েলি বাহিনী মধ্য ও দক্ষিণ গাজায় হামাস যোদ্ধাদের সাথে “কঠিন লড়াই” চালাচ্ছে। তারা ২০২৪ জুড়ে উপত্যকায় লড়াই চালিয়ে যাবে।

গাজায় অব্যাহত ইসরায়েলি হামলা ও বোমা হামলায় মৃতের সংখ্যা ২৫,৫০০ ছুঁয়েছে। এদের মধ্যে ৭০ শতাংশই নিরীহ ফিলিস্তিনি নারী ও শিশু।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X