বাগেরহাটে দুই কলেজ ছাত্রীকে গণ-ধর্ষণকারী নেতা ছাত্রলীগ সভাপতি গ্রেফতার
নারী ধর্ষণ আর সহিংসতায় ছাত্রলীগঃ
১৯৯০ সাল থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দ্বারা সংগঠিত ধর্ষণ ও যৌন সহিংসতার অসংখ্য অভিযোগ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা প্রায়ই ধর্ষণকে দমন ও নারীদের ভয়ের পরিবেশ সৃষ্টির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে আসছে। এমনকি অনেক নথিভুক্ত ঘটনাও রয়েছে যে ছাত্রলীগ নেতারা নারীদের ধর্ষণের “শতবর্ষ বা শতবর্ষ উৎসব” উদযাপন করছেন।
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ধর্ষণের সেঞ্চুরিতে ছাত্রলীগঃ
১৯৯৮ সালে, বাংলাদেশ ছাত্রলীগ জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শাখার তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক জসিমউদ্দিন মানিক এবং তার অনুসারীরা কমপক্ষে ২০ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং একজন ছাত্রীকে ধর্ষণের ১০০ তম বা ‘শত-ধর্ষণ উত্সব’ উদযাপন করেছিল। এটি একটি ধারাবাহিক ছাত্র বিক্ষোভের দিকে পরিচালিত করে, যার ফলে ১৯৯৯ সালের জাবি ধর্ষণ বিরোধী আন্দোলনের পর ২ আগস্ট ১৯৯৯ তারিখে মানিক এবং তার অনুসারীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার করা হয়।
এবার আসি সদ্য ঘটনায়; খুলনা সরকারি সুন্দরবন কলেজের দুই ছাত্রীকে মোটরসাইকেল থেকে তুলে ধর্ষণের ঘটনায় ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল সরদার ফেরদৌসকে (২৫) আটক করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় মেহেদী হাসান (২০) নামে আরেক ধর্ষক পলাতক রয়েছে। গ্রেফতারকৃত শাকিল সরদার ফকিরহাট উপজেলার জারিয়া-চৌমাথা এলাকার মোস্তাব সরদারের ছেলে। তিনি ফকিরহাট ইউনিয়ন ছাত্রলীগ এবং ফকিরহাট কাজী আজহার আলী কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি। অপর আসামি মেহেদী হাসান একই এলাকার শেখ মাসুমুল হকের ছেলে
শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলার জারিয়া-চৌমাথা এলাকায় চায়ের দোকানের বেঞ্চে ও পাশের স্কুলের পেছনে ধর্ষণের ঘটনা ঘটে। নির্যাতনের শিকার কলেজছাত্রী (২১) বাদী হয়ে শুক্রবার বিকেলে ফকিরহাট থানায় দুই ধর্ষকের নামে মামলা করেছেন। সন্ধ্যায় সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিলকে জারিয়া গ্রাম থেকে আটক করে পুলিশ। গ্রেফতারকৃত ছাত্রলীগ সভাপতি শাকিল ফকিরহাট উপজেলার জারিয়া গ্রামের মোস্তাব সরদারের ছেলে। অপর পলাতক ধর্ষক মেহেদী হাসান একই এলাকার শেখ মাসুমুল হকের ছেলে। গতকাল দুপুরে আসামিকে গ্রেপ্তার করে বাগেরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানকে আদালতে পাঠানো হলে ধর্ষক শাকিল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিলে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
ফকিরহাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আশরাফুল আলম জানান, শনিবার বিকেলে খুলনা সরকারি সুন্দরবন কলেজের ছাত্র তার এক বান্ধবীর চাচাতো ভাই ও এক বন্ধুকে নিয়ে বাগেরহাটের রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র ও হযরত খানজাহান (রহ.) মাজারে যায়। পরে রাত ১২টার পর তারা দুটি মোটরসাইকেলে করে মাজার ত্যাগ করে খুলনার দিকে যায়। বাগেরহাট-খুলনা মহাসড়কের ফকিরহাটের জারিয়া চৌমাথা এলাকায় একটি মোটরসাইকেল বিকল হয়ে পড়েছে। এ সময় ফকিরহাট সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মো. শাকিল সরদার ফেরদৌস ও তার সহযোগী মেহেদী হাসান ওই দুই কলেজ ছাত্রের সঙ্গে থাকা মোটরসাইকেল চাচাতো ভাই ও বন্ধুকে মারধর করে।
এরপর ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল ও তার সহযোগী মেহেদী প্রথমে জারিয়া-চৌমাথা এলাকায় চায়ের দোকানের বেঞ্চে উপরে রেখে পাশের স্কুলের পেছনে পৈচাশিক কায়দায় দুই কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণ করে। ঘটনার কথা কাউকে না বলার হুমকি দিয়ে দুই ধর্ষক চলে যায়।
ভুক্তভোগীদের একজন ৯৯৯ নম্বরে ফোন করে পুলিশের সহায়তা চেয়েছেন। ফকিরহাট থানা পুলিশ ফোন পেয়ে রাতে ধর্ষণের শিকার দুই কলেজ ছাত্রীকে উদ্ধার করে। এরপর পুলিশ খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই কলেজ ছাত্রীর ডাক্তারি পরীক্ষা সম্পন্ন করে। নির্যাতনের শিকার এক কলেজছাত্রী (২১) রোববার দুপুরে ফকিরহাট থানায় দুই ধর্ষকের নামে মামলা করেছেন। সন্ধ্যায় সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিলকে জারিয়া গ্রাম থেকে আটক করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর দুই কলেজ ছাত্রীকে ধর্ষণের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছেন ছাত্রলীগের সভাপতি শাকিল। এ ঘটনায় মেহেদী হাসান (২০) নামে আরেক ধর্ষককে গ্রেপ্তারে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।
গতকাল দুপুরে আসামিকে গ্রেপ্তার করে বাগেরহাটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের বিচারক মো. আসাদুজ্জামানকে আদালতে পাঠানো হলে ধর্ষক শাকিল ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে স্বেচ্ছায় কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।এদিকে ফকিরহাট উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি জয়ন্ত দাস স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, শাকিল সরদার ফেরদৌস, সভাপতি মো. ফকিরহাট সদর ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সংগঠন বিরোধী ও অসামাজিক কার্যকলাপের দায়ে ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগ, তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান ছাত্রলীগ, যাকে প্রায়ই ছাত্রলীগ বলা হয়, বাংলাদেশের একটি ছাত্র রাজনৈতিক সংগঠন, যা শেখ মুজিবুর রহমান ৪ জানুয়ারী ১৯৪৮ সালে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। এটি বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ছাত্র সংগঠন। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে এটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ১৯৭২ সালের পর এটি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে জোটের ভিত্তিতে দুটি উপদলে বিভক্ত হয়। তবে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস ছড়ানোর জন্য বারবার নির্যাতন, চাঁদাবাজি, সহিংসতা, ধর্ষণ , জোরপূর্বক পতিতাবৃত্তি ও হত্যার অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে ।