রাতের ১২:০১ টায় মেসেজ আসে স্ব স্ব কেন্দ্রে আপনারা ৬০% ভোট নিয়ে ফেলেন: স্বীকার আঃলীগ নেতার
চলমান দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ নেতারা একে অপরের মুখোমুখি হয়েছেন। সার্থের বিতর্কের কারণে গত দুই মেয়াদের (২০১৪ এবং ২০১৮) বিতর্কিত নির্বাচন নিয়ে অনেক কঠিন সত্য খবর বেরিয়ে আসছে। আগামী নির্বাচনের প্রচার-প্রচারণায় নৌকা প্রতীক ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তাদের সমর্থক নেতারা দুই নির্বাচনে জয়ী হওয়া নিয়ে প্রকাশ্যে একে অপরের সমালোচনা করছেন।
এবার কক্সবাজারের মহেশখালীতে আওয়ামী লীগের একজন দায়িত্বশীল নেতা এক জনসভায় মন্তব্য করেছেন, গত ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগের দিন রাত ১২টা ১ মিনিটে ওপর থেকে ক্ষুদে বার্তার পর মধ্যরাতে ৬০ শতাংশ ভোট পড়েছে।
সোমবার (২৫ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় কুতুবদিয়া-মহেশখালী আসনে বিএনএম মনোনীত নোঙর মার্কার প্রার্থী মুহাম্মদ শরীফ বাদশা নির্বাচনী পথসভায় গিয়ে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের পক্ষে উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র নেতা আজিজুল হকের উদ্দেশে এসব কথা বলেন।
আজিজুল হক মহেশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি। এছাড়া তিনি আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ধর্মবিষয়ক সম্পাদক অ্যাডভোকেট সিরাজুল মোস্তফারের ছোট ভাই। ২০১৮ সালের নির্বাচনে সিরাজুল মোস্তফা কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিলেন।
আজিজুল হক বলেন, ‘নোঙর মার্কার প্রার্থী সংসদ সদস্য মুহাম্মদ শরীফ বাদশা’র প্রচারণায় গিয়ে বুকে হাত রেখে আজ আপনাদের সামনে শপথ করছি। আমি আজ নৌকার বিপক্ষে ভোট দিতে বাধ্য হয়েছি। আমরা এখন অনেক কষ্টে আছি।
উপজেলা আওয়ামী লীগের এই সহ-সভাপতি প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিকের উদ্দেশে বলেন, প্রথমবার আপনি বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হয়েছিলেন।আপনাকে ভোট দেয়া লাগে নাই। এর পরবর্তীতে যেবার আপনি এমপি নির্বাচিত হয়েছেন, তখন ঠিক রাতের ১২ টা ১ মিনিটে আমাদের কাছে মেসেজ আসে, স্ব স্ব কেন্দ্রে আপনারা ৬০% ভোট নিয়ে ফেলেন। অর্থাৎ শতকরা ৬০ ভোট নিয়ে ফেলেন যেন আ.লীগের বিজয় নিশ্চিত হয়।
আজিজুল হক বলেন, দিনে আরও ৪০ শতাংশ ভোট পড়েছে। কিন্তু সেই ৪০% ভোট যদি বিএনপির বাক্সে যেত, তাহলে তারা কখনোই নির্বাচিত হতে পারত না। আপনি ওই বছর রাতে ১২ টা ১ মিনিটের ভোটে সেভাবে নির্বাচিত হয়েছেন।
এদিকে ২৫ ডিসেম্বর দেওয়া এই বক্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য জানতে আওয়ামী লীগ নেতা আজিজুল হককে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি। এরপর মোবাইলে বিস্তারিত বার্তা পাঠানো হলেও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
প্রসঙ্গত, ২০১৮ সালের নির্বাচনে কক্সবাজার-২ (মহেশখালী-কুতুবদিয়া) আসনে আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আশেক উল্লাহ রফিক ২ লাখ ৩০ হাজার ৯১ ভোট পেয়ে ‘নির্বাচিত’ হন। এ সময় তার নিকটতম প্রার্থী ধানের শীষ প্রতীকে আলমগীর মোহাম্মদ মাহফুজ উল্লাহ ফরিদ পেয়েছিলেন ১১ হাজার ৭৮৯ ভোট। ওই নির্বাচনে তৃতীয় হন জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা হামিদুর রহমান আজাদ, এ আসন থেকে নির্বাচিত এক সময়ের সংসদ সদস্য।
উল্লেখ্য, গত জুলাইয়ে কুষ্টিয়া জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসগর আলী বলেন, আপনি রাতের আঁধারে এমপি হয়েছেন, আমরা বানিয়েছি। অভিমান ভালো না দাদা। আপনি এমপি হয়েছেন, শিক্ষকদের সম্মান করুন। অন্যথায় সমস্যা হবে। তখন আমি কিছু বলতে পারব না। আমরা সংগঠন করেছি, আপনি করেননি।
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে আয়োজিত শান্তি সমাবেশে এসব কথা বলেন আসগর আলী। সমাবেশে উপস্থিত নেতাকর্মীরা জানান, আসগর আলী কুষ্টিয়া-৪ (কুমারখালী-খোকসা) আসনের সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফকে এসব কথা বলেন। কারণ, বৃহস্পতিবার বিকেলে কুষ্টিয়ায় খোকসা শান্তি ও উন্নয়ন সমাবেশে আসগর আলীসহ চার নেতার বিরুদ্ধে কড়া হুঁশিয়ারি দেন সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফ। এ কারণে শুক্রবার সমাবেশে প্রতিক্রিয়ায় আসগর আলী এ বক্তব্য দেন।
সংসদ সদস্য সেলিম আলতাফের নাম উল্লেখ না করে আসগর আলী বলেন, এমপি হিসেবে উপরে তাকান, নিচে তাকানোর সুযোগ নেই। আমরা আওয়ামী লীগ করি, আওয়ামী মানে জনগণ, আমরা জনগণের দল করি। আর তোমরা চেষ্টা করছ আমি লীগ করার। শেখ হাসিনার নাম নষ্ট হতে দেওয়া হবে না।
৩০ ডিসেম্বর, ২০১৮ তারিখে বাংলাদেশে অনুষ্ঠিত নির্বাচন। এই নির্বাচন সম্পর্কে বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বের কাছে একটি সত্য জানা আছে। অর্থাৎ ৩০ ডিসেম্বর দিবাগত রাতে ভোটগ্রহণ হয়। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ আগের রাতেই সব ভোট দিয়েছে। আর ওই নির্বাচনে নাইট ভোটিংয়ের কথা স্বীকার করেছে নির্বাচন কমিশনও। আর ধীরে ধীরে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অনেক সাংসদ ও ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা একথা স্বীকার করছেন। ফলে আজকের আসল চেহারা উন্মোচিত হচ্ছে।