বিজ্ঞানীরা তৈরি করলেন মানব মস্তিষ্কের মানচিত্র
মানব মস্তিষ্কঃ
{ মানুষের মস্তিষ্ক মানুষের স্নায়ুতন্ত্রের কেন্দ্রীয় অঙ্গ। এটি মেরুদণ্ডের সাথে মানবদেহের কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্র গঠন করে। মানুষের মস্তিষ্ক সেরিব্রাম, ব্রেনস্টেম এবং সেরিবেলাম (গুরুমস্তিষ্ক, মস্তিষ্ককাণ্ড ও লঘুমস্তিষ্ক) নামে তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। মস্তিষ্ক মানবদেহের অধিকাংশ কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণ করে। এই উদ্দেশ্যে, মস্তিষ্ক সংবেদনশীল স্নায়ুতন্ত্র বা ইন্দ্রিয় অঙ্গ থেকে তথ্য সংগ্রহ করে, তাদের প্রক্রিয়াকরণ সম্পূর্ণ করে, প্রক্রিয়াকৃত তথ্যকে সহযোগিতা করে এবং সমন্বয় করে এবং প্রতিক্রিয়া হিসাবে, স্নায়ু কেন্দ্র থেকে স্নায়ু সমন্বিত অঙ্গে কী ধরনের নির্দেশ পাঠানো হবে তা নির্ধারণ করে। নরম উপাদান দিয়ে তৈরি মস্তিষ্ক মানুষের মাথার খুলির হাড়ের মধ্যে সুরক্ষিত থাকে }।
মানুষের মস্তিষ্ক সম্পর্কে তথ্য:
- একজন প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের মস্তিষ্কের গড় ওজন ১৩৩৬ গ্রাম এবং একজন প্রাপ্তবয়স্ক মহিলার ১১৯৮ গ্রাম
- ২০ বছর বয়সে পুরুষের মস্তিষ্কের গড় ওজন প্রায় ১৪০০ গ্রাম এবং ৬৫ বছর বয়সে মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ১৩০০গ্রাম। মহিলাদের মধ্যে মস্তিষ্কের ওজনের ক্ষেত্রে অনুরূপ প্যাটার্নই দেখা গেছে।
- প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্কের ওজন প্রায় 3 পাউন্ড (১৩০০-১৪০০ গ্রাম) । প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের মস্তিষ্ক মোট শরীরের ওজনের প্রায় ২%।
- একটি নবজাতক মানব শিশুর মস্তিষ্কের ওজন প্রায় ৩৫০থেকে ৪০০গ্রাম।
- মস্তিষ্ক দিনের তুলনায় রাতে অনেক বেশি সক্রিয় থাকে।
- আমাদের মস্তিষ্কে ১০০ বিলিয়নের বেশি স্নায়ু কোষ রয়েছে।
- মানুষের মস্তিষ্ক প্রতি মিনিটে ১০০০ শব্দ পড়তে পারে।
- ১৮ বছর বয়সে মানুষের মস্তিষ্কের বিকাশ বন্ধ হয়ে যায়।
- মানুষের মস্তিষ্কের গড় প্রস্থ ১৪০ মিমি।
আমাদের মস্তিষ্কের ক্ষমতা কত? কয়েক গিগাবাইট বা টেরাবাইট – মানুষের মেমরিকে মাপার মত আধুনিক এমন কোন যন্ত্র আছে পর্যন্ত আবিষ্কারই হয়নি? তাহলে ভুল ভাববেন। আমাদের মস্তিষ্ক মেমরি কার্ডের মতো সীমাবদ্ধ নয়। অর্থাৎ আমাদের মস্তিষ্ক কখনোই মেমরিতে পূর্ণ হবে না! সুতরাং যদি সেখানে এমন কেউ থাকে যে ফুরিয়ে যাওয়ার ভয়ে অলস বসে আছেন , কাজ শুরু করুন এখনি । আপনি যতটা চান তাকে ব্যবহার করতে পারবেন ।
মস্তিষ্ক মানবদেহের সবচেয়ে জটিল অঙ্গ। মানুষের মাথায় কী আছে তা এখনও রহস্য! শত শত বিজ্ঞানী সেই গোলকধাঁধাটির মধ্য দিয়ে একটি উপায় খুঁজে বের করার জন্য দলবদ্ধ হয়েছেন। তারা মানুষের মস্তিষ্কের একটি ‘মানচিত্র’ তৈরি করেছেন।
বিশেষজ্ঞদের দাবি, এত বিস্তারিত ‘মানচিত্র’ আগে কখনও তৈরি হয়নি। তারা তিন হাজারেরও বেশি ধরনের কোষ শনাক্ত করেছে। এর মধ্যে কিছু কোষ আগে অজানা ছিল। এই কাজটি, সায়েন্স অ্যাডভান্সেস এবং সায়েন্স ট্রান্সলেশনাল মেডিসিন জার্নালে ২১ টি গবেষণাপত্রে প্রকাশিত হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মস্তিষ্ক মানবদেহের সবচেয়ে জটিল অঙ্গ। এবং এর অনেক কিছুই অজানা। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের ফ্লোরি ইনস্টিটিউট অফ নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড মেন্টাল হেলথের স্নায়ুবিজ্ঞানী অ্যান্থনি হান্নান বলেছেন, “এই গবেষণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”
এর আগে, বিজ্ঞানীরা ম্যাগনেটিক রেজোন্যান্স ইমেজিংয়ের মাধ্যমে মস্তিষ্কের ম্যাপও করেছিলেন। কিন্তু তাতে এত বিস্তারিত তথ্য ছিল না। এটি প্রথম কোষ-স্তরের সম্পূর্ণ মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরি করা হয়েছে। এটি এমনকি মস্তিষ্কের কোষে আণবিক প্রতিক্রিয়াকে ক্যাপচার করে।
এই গবেষণাটি ইউএস ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অফ হেলথ গবেষণার অংশ। এতে আরও উন্নত নিউরোটেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তের শতাধিক বিজ্ঞানী এই গবেষণায় জড়িত। এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য মস্তিষ্কের কোষগুলির একটি ক্যাটালগ তৈরি করা। শুধু মানুষ নয়, বিজ্ঞানীরা শিম্পাঞ্জি থেকে শুরু করে ইঁদুর, বিভিন্ন প্রাণীর মস্তিষ্কের কোষ এবং তাদের প্রকার সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা করছেন। এভাবে মস্তিষ্কের বিভিন্ন রোগ ও তার কারণ সম্পর্কে জানা সম্ভব হবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানীরা।
নেদারল্যান্ডসের ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল সেন্টার ইউট্রেক্টের স্নায়ুবিজ্ঞানী কিম্বার্লি সিলেটি এবং তার দল মস্তিষ্কের মানচিত্র তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। তারা মস্তিষ্কের ১০৬ টি অবস্থান থেকে ৩০লাখেরও বেশি কোষের আরএনএ সিকোয়েন্সিং সঞ্চালন করেছেন।
তিনটি পুরুষের দান করা দেহ থেকে কলাকোষ সংগ্রহ করে পরীক্ষাটি করা হয়েছে । একটি মহিলা মৃতদেহের মোটর কর্টেক্সও ব্যবহার করা হয়েছিল। কিম্বার্লি ৪৬১টি কোষের ধরন আবিষ্কার করেছেন। এই কোষগুলির ৩০০০ টিরও বেশি উপপ্রকার রয়েছে।
তিনি বলেন, এত কোষ দেখে আমি অবাক হয়েছি। এই গবেষণার সঙ্গে যুক্ত আরেক বিজ্ঞানী স্ট্যান লিনারসন বলেন, মস্তিষ্ক বা ব্রেন ও স্পাইনাল কর্ডকে জুড়ে রাখে ব্রেনস্টেম। এই অংশে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক নিউরন রয়েছে। আমরা এই গবেষণায় দেখেছি, ব্রেনস্টেম কতটা জটিল।
ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের আণবিক জীববিজ্ঞানী বিং রেন বলেছেন যে, এই গবেষণাটি মস্তিষ্কের রোগের পিছনে ব্যতিক্রমী জিনের হেরফেরও চিহ্নিত করেছে। এইভাবে, মস্তিষ্কের ডিসঅর্ডার গুলি ভালভাবে জানা যাবে। আর রোগটা বোঝা গেলে তার নিরাময়ও পাওয়া যাবে।