গাছের কথোপকথন
মহান রাব্বুল আলামিন গাছকে এক অত্যাশ্চর্য সৃষ্টি বানিয়েছেন । মানুষের আশেপাশে গাছদের বসবাস । আবার গাছকে কেন্দ্র করেই মানুষের আবাস্থল । কারণ গাছ মানুষের জন্য অক্সিজেন সরবরাহ করে । আবার মানুষ থেকেই গাছ কার্বন-ডাই-অক্সাইড নিয়ে বেঁচে থাকে । সেই গাছ বুঝিয়া শুনিয়া পরস্পর কথোপকথন করে। আবার আল্লাহর এবাদতেও সদা মশগুল । আল্লাহতালা সূরা আর রহমানের বারানো ৬ নং আয়াতে বলেছেন “এবং তৃণলতা ও গাছপালা সেজদারত আছে। “
সর্বশক্তিমান আল্লাহ গাছকে মানুষের অন্যতম বন্ধু বানিয়েছেন। এই উদ্ভিদের জীবন, অনুভূতি এবং এমনকি যোগাযোগ করার ক্ষমতাও রয়েছে।
মহান আল্লাহর অন্যান্য সৃষ্টির মতো গাছও তাঁর তাসবীহ পাঠ করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘সপ্ত আকাশ ও পৃথিবী এবং তাদের মধ্যে যা কিছু আছে সবই তাঁর মহিমা ঘোষণা করে এবং এমন কিছু নেই যা তাঁর মহিমা ঘোষণা করে না; কিন্তু আপনি তাদের তাসবীহ বোঝেন না। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, ক্ষমাশীল।’ (সূরা বনি ইসরাইল, আয়াত ৪৪)
প্রশ্ন হলো, গাছ কীভাবে তাসবীহ পাঠ করে, তাদের কি কথা বলার ক্ষমতা আছে, তাদের কি কোনো ভাষা আছে, এর উত্তর দিয়েছেন স্বয়ং মহান আল্লাহ। ইরশাদ হয়েছে, ‘তুমি কি দেখনি যে, আসমান ও যমীনে যারা আছে তারা এবং সারিবদ্ধ হয়ে উড়ন্ত পাখিরা আল্লাহর তাসবীহ পাঠ করে? প্রত্যেকেই তাঁর সালাত ও তাসবীহ জানে। তারা যা করে সে সম্পর্কে আল্লাহ সম্যক অবগত (সূরা নূর, আয়াত ৪১)
এই আয়াতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলেন, সবাই তার নামাজ ও তাসবীহ জানে। তাই গাছরাও তাদের নিজের ভাষায় আল্লাহর গুণগান গায়। তাদের নিজস্ব ভাষাও আছে। বিজ্ঞানের মতে, গাছও নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ রক্ষা করে।
গাছপালা ভূগর্ভস্থ ছত্রাক নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে একে অপরের সাথে যোগাযোগ করে, শক্তি এবং পুষ্টি বিনিময় করে। বিজ্ঞানীরা এই ছত্রাকের নেটওয়ার্কের নাম দিয়েছেন উড ওয়াইড ওয়েব। কিছু গাছ গাছপালাকে বিপদ সম্পর্কে সতর্ক করে বা পুষ্টি বিতরণ করে বেঁচে থাকতে সাহায্য করে। কিছু উদ্ভিদ অন্যদের থেকে শক্তি এবং পুষ্টি গ্রহণ করার চেষ্টা করে।
শুধু তাই নয়, গাছ কথায়ও সাড়া দিতে সক্ষম. রাসূল (সাঃ) এর হাদীসে এর প্রমাণ রয়েছে। হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে, ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, এক বেদুইন রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বলল, আমি কীভাবে জানব যে আপনি নবী? তিনি বলেন, ওই খেজুরগাছের একটি কাঁদিকে আমি ডাকলে (তা যদি নেমে আসে) তাহলে তুমি কি সাক্ষ্য দেবে যে আমি আল্লাহ তাআলার রাসুল রাসুলুল্লাহ (সা.) তাকে ডাকলেন, সে সময় কাঁদি খেজুরগাছ থেকে নেমে নবী (সা.)-এর সম্মুখে এসে গেল। তারপর তিনি বলেন, এবার প্রত্যাবর্তন করো এবং তা নিজ স্থানে ফিরে গেল। সে সময় বেদুইনটি ইসলাম গ্রহণ করল।’(তিরমিযী)
শুধু তাই নয়, হাদিসে রাসুল (সা.)-এর খেজুর গাছের উপর কাঁদার উদাহরণও রয়েছে। জাবির ইবনে আবদুল্লাহ (রাঃ) বলেন, (মসজিদে নববীতে) একটি (খেজুর গাছের)যার সঙ্গে হেলান দিয়ে নবী (সা.) দাঁড়াতেন। অতঃপর যখন তাঁর জন্য মিম্বর স্থাপন করা হলো, আমরা তখন খুঁটি হতে দশ মাসের গর্ভবতী উটনীর মতো ক্রন্দন করার শব্দ শুনতে পেলাম। এমনকি নবী (সা.) মিম্বর হতে নেমে এসে খুঁটির ওপর হাত রাখলেন। (বুখারি, হাদিস 918)
সুবহানাল্লাহ, বর্তমান যুগে রাসূল (সাঃ) এর এসব হাদীসের বৈজ্ঞানিক প্রমাণ পাওয়া যায়। যদিও এগুলো ছিল রাসুল (সাঃ) এর মোজেজা বা রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম কে দেওয়া আল্লাহর পক্ষ থেকে অলৌকিক পাওয়ার । টাইমস অব ইসরায়েলে প্রকাশিত একটি খবর থেকে কিছু কথা এখানে উদ্ধৃত করছি।
সাম্প্রতিক ইসরায়েলি বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন যে তারা গাছপালা যে ‘ কথা বলে ‘ তা শনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। কিছুদিন আগে তেল-আবিভ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকদের এই গবেষণাটি স্বনামধন্য বৈজ্ঞানিক জার্নাল ‘সেল’-এ প্রকাশিত হয়।
সেখানকার ইসরায়েলি গবেষকরা দাবি করেন, তারা শুধু গাছের শব্দই শনাক্ত করতে সক্ষম হননি; বরং তারা গাছের বিভিন্ন ভাষাও চিহ্নিত করেছে। তারা আরও প্রমাণ করেছেন যে, বিভিন্ন প্রজাতির গাছ একে অপরের সাথে বিভিন্ন ‘ভাষায়’ যোগাযোগ করে।
গবেষকরা একটি নির্দিষ্ট দূরত্ব থেকে চাপযুক্ত উদ্ভিদ দ্বারা তৈরি শব্দ রেকর্ড করার দাবিও করেছেন। সেখানে তারা দেখতে পায় যে গাছপালা ক্লিকের মাধ্যমে ‘কথোপকথন’ করে। এই শব্দটি পপকর্ন ভাজার সময় যে শব্দ করে তার অনুরূপ। এই নির্গত শব্দটি মানুষের বক্তৃতার মতোই, তবে এটির কম্পাঙ্ক অনেক বেশি, যা মানুষের শ্রবণ সীমার বাইরে, তাই মানুষ এটি শুনতে পারে না। (টাইমস অফ ইসরাইল)
আরও জানতে
কথা বলতে পারে গাছঃ শুনেছেন ইসরায়েলি বিজ্ঞানীরা
পল্লি চিকিৎসক খোরশেদ ১০ বছরে ৫২ হাজার তালগাছ লাগিয়েছেন
প্রযুক্তির সাহায্যে হয়তো একদিন মানুষ গাছের ভাষা শিখবে, জানবেও । গাছের সঙ্গেও যোগাযোগ করবে। রাসূল (সাঃ) এর একটি হাদিস এ সম্পর্কে অনেক কিছু নির্দেশ করে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “মুসলিম ও ইহুদীদের মধ্যে যুদ্ধ না হওয়া পর্যন্ত কিয়ামত সংঘটিত হবে না।” মুসলমানরা তাদের হত্যা করবে। ফলস্বরূপ, তারা পাথর বা গাছের আড়ালে লুকিয়ে থাকবে। তখন পাথর বা গাছ বলবে, হে মুসলিম, হে আল্লাহর বান্দা, এই আমার পিছনে লুকিয়ে থাকা ইহুদী। এসো, ওকে মেরে ফেল। ‘কিন্তু ‘গারকাদ’ নামক গাছ দেখিয়ে দেবে না। কারণ এটা হচ্ছে ইহুদিদের সহায়তাকারী গাছ। । (মুসলিম)
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী মনে হয়, শেষ যুগে হয়তো এমন কিছু প্রযুক্তি মানুষের কাছে আসবে, যার সাহায্যে তারা গাছের সাথে কথা বলতে পারবে অথবা এমনও হতে পারে যে, আল্লাহর বিশেষ ক্ষমতায় মানুষ গাছের ভাষা বুঝতে পারবে। ঘটনা যে ঘটবে তা অবশ্যই সত্য। তবে পদ্ধতি কী হবে, আল্লাহই ভালো জানেন।