November 25, 2024
বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার-তল্লাশির বিধান রেখে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাশ

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার-তল্লাশির বিধান রেখে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাশ

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার-তল্লাশির বিধান রেখে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাশ

বিনা পরোয়ানায় গ্রেফতার-তল্লাশির বিধান রেখে সাইবার নিরাপত্তা বিল পাশ

বহুল আলোচিত ‘সাইবার সিকিউরিটি বিল-২০২৩’ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য অবকাঠামোতে অবৈধ অ্যাক্সেস, কম্পিউটার এবং কম্পিউটার সিস্টেমের ক্ষতি, সাইবার সন্ত্রাসী কার্যকলাপ এবং হ্যাকিং সম্পর্কিত অপরাধের জন্য চারটি অ-জামিনযোগ্য ধারা সহ পাস করা হয়েছে। আইন কার্যকর হলে, বিলের ধারা ৪২ অনুযায়ী, পুলিশ বিনা পরোয়ানায় সন্দেহভাজনদের তল্লাশি ও গ্রেপ্তার করার ক্ষমতা পাবে। সাইবার-সম্পর্কিত মামলার সর্বোচ্চ শাস্তি হল ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং কোটি টাকা জরিমানা। তবে এ আইনে দায়ের করা মামলা মিথ্যা প্রমাণিত হলে বাদীকে শাস্তি পেতে হবে। বুধবার জাতীয় সংসদে বিলটি পাসের প্রস্তাব উত্থাপন করেন তথ্য ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। পরে কণ্ঠভোটে বিলটি পাস হয়।

এর আগে জনমত যাচাইয়ের জন্য দেওয়া প্রস্তাবের ওপর আলোচনাকালে কথিত বিরোধী দলের সদস্যরা তর্কের খাতিরে বিলের বিভিন্ন ধারার আপত্তি ও বিরোধিতা করেন। বিশেষ করে বিনা পরোয়ানায় সাংবাদিকদের গ্রেফতারের বিষয়টি নিয়ে তারা বিরোধিতা ও আপত্তি জানান। যাইহোক, জনমত জরিপের জন্য বিরোধী সদস্যদের প্রস্তাব কণ্ঠভোটে প্রত্যাখ্যান করা হয় এবং বিলটি পাস হয়। এ সময় অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকু। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন বাতিল করে এই বিল পাস হয়েছে।

“ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন” এর  উপর প্রতিস্থাপিত আইনটিই  হল “সাইবার নিরাপত্তা আইন” এর কিছু গুরুত্বপূর্ণ ধারা নিম্নে হুবহু দেওয়া হল।  আইনটিতে  একটি  সম্যক  ধারণার জন্য ।

এ বিলের ২৭ ধারায় সাইবার সন্ত্রাসী কার্য সংঘটনের অপরাধ ও দণ্ড সম্পর্কে বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা, নিরাপত্তা ও সার্বভৌমত্ব বিপন্ন করা এবং জনগণ বা উহার কোনো অংশের মধ্যে ভয়ভীতি সঞ্চার করিবার অভিপ্রায়ে কোনো কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা ইন্টারনেট নেটওয়ার্কে বৈধ প্রবেশে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেন বা বে-আইনি প্রবেশ করেন বা করান; কোনো ডিজিটাল ডিভাইসে এইরূপ দূষণ সৃষ্টি করেন বা ম্যালওয়্যার প্রবেশ করান যাহার ফলে কোনো ব্যক্তির মৃত্যু ঘটে বা গুরুতর জখমপ্রাপ্ত হন বা হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দেয় বা জনসাধারণের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের সরবরাহ ও সেবা ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংসসাধন করেন বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরিকাঠামোর ওপর বিরূপ প্রভাব বিস্তার করেন। ইচ্ছাকৃতভাবে বা জ্ঞাতসারে কোনো কম্পিউটার, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ইন্টারনেট নেটওয়ার্ক, সংরক্ষিত কোনো তথ্য-উপাত্ত বা কম্পিউটার ডাটাবেইজে প্রবেশ বা অনুপ্রবেশ করেন বা এইরূপ কোনো সংরক্ষিত তথ্য-উপাত্ত বা কম্পিউটার ডাটাবেজে প্রবেশ করেন, যাহা বৈদেশিক কোনো রাষ্ট্রের সহিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বা জনশৃঙ্খলা পরিপন্থি কোনো কাজে ব্যবহৃত হইতে পারে অথবা বৈদেশিক কোনো রাষ্ট্র বা কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর সুবিধার্থে ব্যবহার করা হইতে পারে, তাইলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হইবে সাইবার সন্ত্রাস অপরাধ। যদি কোনো ব্যক্তি এ অপরাধ সংঘটন করেন, তাইলে তিনি অনধিক ১৪ বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ কোটি টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিলের ২৮ ধারায় বলা হয়েছে, ওয়েবসাইট বা কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করে এইরূপ কোনো তথ্য প্রকাশ, সম্প্রচার, ইত্যাদি যদি কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে বা জাতভাবে ধর্মীয় মূল্যবোধ বা অনুভূতিতে আঘাত করিবার বা উসকানি দেওয়ার অভিপ্রায়ে ওয়েবসাইট বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক বিন্যাসে এইরূপ কিছু প্রকাশ বা প্রচার করেন বা করান, যাহা ধর্মীয় অনুভূতি বা মূল্যবোধের ওপর আঘাত করে, তাইলে ওই ব্যক্তির অনুরূপ কার্য হবে অপরাধ। যদি কোনো ব্যক্তি এ ধরনের অপরাধ সংঘটন করেন, তাইলে তিনি অনধিক দুই বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিলের ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো ব্যক্তি হ্যাকিং করেন, তাইলে এটি অপরাধ এবং তজ্জন্য তিনি অনধিক ১৪ (চৌদ্দ) বছরের কারাদণ্ডে বা অনধিক ১ (এক) কোটি টাকা অর্থদণ্ড, বা উভয়দণ্ডে দণ্ডিত হবেন।

বিলের ৪২ ধারায় পরোয়ানা ছাড়া তল্লাশি, জব্দ ও গ্রেফতার প্রসঙ্গে বলা আছে— যদি কোনো পুলিশ অফিসারের এইরূপ বিশ্বাস করিবার কারণ থাকে যে, কোনো স্থানে এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ সংঘটিত হইয়াছে বা হইতেছে বা হইবার সম্ভাবনা রহিয়াছে বা সাক্ষ্য প্রমাণাদি হারানো, নষ্ট হওয়া, মুছিয়া ফেলা, পরিবর্তন বা অন্য কোনো উপায়ে দুষ্প্রাপ্য হইবার বা করিবার সম্ভাবনা রহিয়াছে, তাইলে তিনি অনুরূপ বিশ্বাসের কারণ লিপিবদ্ধ করিয়া, ওই স্থানে প্রবেশ করিয়া তল্লাশি এবং প্রবেশে বাধাপ্রাপ্ত হলে ফৌজদারি কার্যবিধি অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। ওই স্থানে তল্লাশিকালে প্রাপ্ত অপরাধ সংঘটনে ব্যবহার্য কম্পিউটার, কম্পিউটার সিস্টেম, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, তথ্য-উপাত্ত বা অন্যান্য সরঞ্জামাদি এবং অপরাধ প্রমাণে সহায়ক কোনো দলিল জব্দকরণ; ওই স্থানে উপস্থিত যেকোনো ব্যক্তির দেহ তল্লাশি, স্থানে উপস্থিত কোনো ব্যক্তি এ আইনের অধীন কোনো অপরাধ করিয়াছেন বা করিতেছেন বলিয়া সন্দেহ হলে ওই ব্যক্তিকে গ্রেফতার এবং এর অধীন তল্লাশি সম্পন্ন করিবার পর পুলিশ অফিসার তল্লাশি পরিচালনার রিপোর্ট ট্রাইব্যুনালের কাছে দাখিল করিবেন।

আরও পড়তে

সাইবার নিরাপত্তা আইন সম্পর্কে যা বলছে যুক্তরাষ্ট্র

দেশে-বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার মুখে সরকার গত ৭ই আগস্ট ঘোষণা করে যে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনকে ‘রূপান্তর’ ও ‘আধুনিক’ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাকে বলা হবে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন’। যেখানে বিদ্যমান আইনের কিছু ধারা সংশোধন করা হবে।

২৮ আগস্ট মন্ত্রিসভা সাইবার নিরাপত্তা আইনের চূড়ান্ত খসড়া অনুমোদন করে।

এরপর ৫ সেপ্টেম্বর জাতীয় সংসদে বিলটি উত্থাপন করেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। এরপর পাঁচ দিন পর তা যাচাই-বাছাইয়ের জন্য সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে পাঠানো হয়।

এভাবে সর্বশেষ এই বিতর্কিত আইনটি সরকারিভাবে অনুমোদিত হয়ে যায়।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X