মন্ত্রীর বাড়ির বিদ্যুৎ বিল মাসে মাত্র ৩৭ টাকাঃ পরিবারের বকেয়া ৯ লাখ টাকা থাকার পরেও বিদ্যুৎ সংযোগ সচল
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের গ্রামের বাড়িতে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে ব্যাপক অনিয়মের প্রমাণ মিলেছে। প্রায় নয় লাখ টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া থাকলেও নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ পাচ্ছে মন্ত্রীর পরিবার। মাসিক বিদ্যুৎ বিল আসছে অবিশ্বাস্য পরিমাণে কম। কালীগঞ্জে মন্ত্রীর ব্যবহৃত মিটারে মাসিক বিদ্যুতের বিল মাত্র ৩৭ টাকা। এতে সাধারণ গ্রাহকদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে।
সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদ, তার ছেলে রকিবুজ্জামান আহমেদ ও ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর কাছে ৬টি কনজিউমার আইডিতে ৮ লাখ ৯৬ হাজার ৬৮০ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। তবে এসব বকেয়া বিলের কথা পরিবারের কেউ জানেন না বলে দাবি মন্ত্রীর পরিবারের।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদের বাড়িতে ২০২০ সালের বিদ্যুৎ বিল এসেছে মাত্র ৩২ টাকা। নেসকোর হিসাব তালিকায় দেখা গেছে, নর্দান ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানি (নেসকো) থেকে চার মাসের জন্য প্রতি মাসে ৩৭ টাকা বিল তৈরি করেছে। এপ্রিল থেকে জুলাই। এদিকে ২০২০ সালের নভেম্বরে বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে মাত্র ৩২ টাকা। এছাড়া কোনো মাসে ৭২ টাকা, কোনো মাসে ৫২ টাকা, ৬৫ টাকা, ১১১ টাকা বিল দেখানো হয়েছে।
যা ২০২২ সালের আগস্ট মাসে। প্রায় চার বছরে বিদ্যুৎ বিল দেখানো হয়েছে ১১ হাজার ৬২০ টাকা। কিন্তু এসব বিদ্যুৎ বিল এখনো বকেয়া রয়েছে।
নেসকো থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, মন্ত্রীর নামে একটি সেচ সংযোগ রয়েছে। যেখানে প্রায় চার বছরে বিদ্যুৎ বিল দেখিয়েছে মাত্র ৬১ হাজার ৩৪৪ টাকা। এই বিলটিও এখনও বকেয়া রয়েছে। এ বছর ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসে গড়ে সাড়ে নয় হাজার টাকা বিল দেখানো হলেও জুন ও জুলাই মাসে শূন্য বিল দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের মার্চ মাসে ১৭ হাজার ২৩৬ টাকা বিল দেখানো হলেও জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শূন্য বিল দেখা গেছে। এ বছর এপ্রিল মাসের বিল ছিল ৮০৪ টাকা এবং মে থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিল ছিল ১৮০ টাকা।
মন্ত্রীর ছেলে রকিবুজ্জামান আহমেদ কলেজ শিক্ষক ও লালমনিরহাট জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি নেসকোর আবাসিক গ্রাহক। তার বাড়িতে ব্যবহৃত মাসিক বিদ্যুতের বিল দেখানো হয়েছে ৭২ টাকা, ১১১ টাকা, ১৫১ টাকা, ১৮৯ টাকা, ২২৯ টাকা ও ৫১২ টাকা। শুধু চলতি বছরের জুলাই মাসেই সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৫৬১ টাকা বিল তৈরি হয়েছে। গত চার বছরে বিল দেখানো হয়েছে ৭৯ হাজার ৯৯৫ টাকা। এসব বিল এখনো বকেয়া রয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রীর ছেলে রকিবুজ্জামান আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, আমার কোনো বিদ্যুৎ বিল বকেয়া নেই। এবং আমি কোনো সংযোগ বিচ্ছিন্ন নোটিশ পাইনি. আপনার বাড়ির বিদ্যুতের বিল এত কম কেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমি এগুলোর কিছুই জানি না। আমি কোন কাগজ পাই না। এখন যারা বিলিং করছেন তাদের জিজ্ঞেস করুন তারা ভালো জানেন।
মন্ত্রীর ছোট ভাই শামসুজ্জামান আহমেদ ভুট্টুর কাছে বিল বকেয়া আছে ১ লাখ টাকা। তার নামে একটি সেচ পাম্প সংযোগ করা হয়েছে। যেখানে গত চার বছরের ১ লাখ ৫ হাজার ১১ টাকা বিল বকেয়া রয়েছে। তার পিতা মৃত করিম উদ্দিন আহমেদের নামে একটি আবাসিক সংযোগ রয়েছে। তিনি এই সংযোগ ব্যবহার করছেন। এ সংযোগে মাসিক বিল দেখানো হয়েছে ৬৩ টাকা, ১৭২ টাকা, ২৯৪ টাকা, ২৮০ টাকা। সর্বোচ্চ বিল ৪৯৬ টাকা দেখানো হয়েছে। ২০২২ সালের আগস্ট, সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর মাসে। গেল চার বছরে বিল দেখানো হয়েছে ১৮ হাজার ৫৭৭ টাকা। এসব বিল এখনো বকেয়া রয়েছে।
আরও জানুন
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ.ক.ম মোজাম্মেল হকের মেয়ের জামাইও ভিআইপি
আলফাডাঙ্গায় বঙ্গবন্ধু ও প্রধানমন্ত্রীর ছবি বিকৃতি,গ্রেফতার বিএনপি নেতাকর্মীরা
স্থানীয়রা জানান, মন্ত্রী, তার ছেলে ও ছোট ভাইয়ের বাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার, ফ্রিজ, ফ্যানসহ সব ধরনের বৈদ্যুতিক পণ্য ব্যবহার করা হয়। তাদের সেচ পাম্প প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ জমিতে ধান ও ভুট্টা চাষের জন্য পানি সরবরাহ করে।
স্থানীয় বাসিন্দা হাসান আব্দুল মালেক জানান, তার ১৭ হাজার টাকা বকেয়া বিদ্যুৎ বিলের জন্য নেসকো কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে মামলা করেছে। নেসকো কর্তৃপক্ষ সাধারণ গ্রাহকদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারলেও প্রভাবশালী গ্রাহকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে চুপ থাকে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
রংপুর নেসকোর নির্বাহী প্রকৌশলী মোখলেছুর রহমান বলেন, অনেক গ্রাহকের বিল বকেয়া রয়েছে। তারা বকেয়া বিল আদায়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছেন। বিদ্যুতের বিল তৈরিতে কোনো গাফিলতি ছিল কি না তা খতিয়ে দেখা হবে বলে জানান তারা।
নেসকোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক জাকিউল ইসলাম বলেন, এসব বিল সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি। কিন্তু আমি চেক করব। বিদ্যুৎ বিল প্রণয়নে এত অসঙ্গতি কেন তা খুঁজে বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান তিনি। এ বিষয়ে জানতে সমাজকল্যাণমন্ত্রী নুরুজ্জামান আহমেদকে ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।