November 22, 2024
লবঙ্গের পুষ্টিগুণ উপকারিতা

লবঙ্গের পুষ্টিগুণ উপকারিতা

লবঙ্গের পুষ্টিগুণ উপকারিতা

লবঙ্গের পুষ্টিগুণ উপকারিতা

লবঙ্গ রান্নার মশলা হিসেবে সুপরিচিত। এটি একটি মিষ্টি এবং সুগন্ধি মশলা হিসাবে সর্বাধিক পরিচিত। লবঙ্গ যেকোনো ধরনের খাবারে স্বাদ যোগ করতে ব্যবহার করা হয়। তবে, লবঙ্গ স্বাস্থ্য উপকারিতার ক্ষেত্রেও অনেক অবদান রাখে।

লবঙ্গ

আমরা প্রায় সকলেই লবঙ্গকে রান্নার মসলা হিসেবে চিনি। লবঙ্গের ইংরেজি নাম clove এবং এর বৈজ্ঞানিক নাম Syzygium aromaticum. লবঙ্গ গাছের ফুলের কুঁড়ি শুকিয়ে লবঙ্গ তৈরি করা হয়। লবঙ্গের শরীরে ব্যথানাশক এবং অ্যান্টিসেপটিক বৈশিষ্ট্য রয়েছে। লবঙ্গ থেকে তৈরি তেলে প্রচুর পরিমাণে ইউজেনল উপাদান থাকে, যা মানবদেহের জন্য খুবই উপকারী।

লবঙ্গের পুষ্টি উপাদান

লবঙ্গ তেলে বিভিন্ন যৌগ রয়েছে যেমন অ্যাসিটাইল ইউজেনল, র্যামনেটিন, ইউজেন্টিন, ভ্যানিলিন, ট্রাই-টারপেনয়েড, ট্যানিন, মিথাইল স্যালিসিলেট, ফ্ল্যাভোনয়েডস, ইউজেনিন, গ্যালোট্যানিক অ্যাসিড, ক্লিনোলিক অ্যাসিড, বিটা-ক্যারোফিলিন, স্টিগমাস্টেরল, সেসকুইটারল অ্যাসিড।

এছাড়াও এটি আয়রন, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, সোডিয়াম এবং জিঙ্ক সহ খনিজ পদার্থে সমৃদ্ধ।

এছাড়াও ভিটামিন এ, ভিটামিন সি, ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই, ভিটামিন কে, ভিটামিন বি ৬ ভিটামিন বি১২, ফোলেট, থিয়ামিন, রিবোফ্লাভিন এবং নিয়াসিন লবঙ্গে রয়েছে।

ইউএসডিএ (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি বিভাগ) অনুসারে, প্রতি ১০০ গ্রাম লবঙ্গে ৬ গ্রাম প্রোটিন, ১৩ গ্রাম লিপিড, ৬৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২ গ্রাম চিনি, ২৭৪ কিলোক্যালরি শক্তি এবং ৩৩ গ্রাম ডায়েটারি ফাইবার রয়েছে।

লবঙ্গের উপকারিতা

হজমশক্তি বাড়ায়

হজম শক্তির উন্নতিতে লবঙ্গ খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। কারণ লবঙ্গে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা হজমশক্তির উন্নতিতে সাহায্য করে। এছাড়া গ্যাস্ট্রিক সমস্যা, ডিসপেপসিয়া, এরোফ্ল্যাটুলেন্স এবং বমি বমি ভাবের মতো সমস্যা দূর করতে লবঙ্গ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

 দাঁতের ব্যথা কমায়

লবঙ্গ দাঁতের ব্যথা উপশম করে। মাড়ির রোগ সারায়। লবঙ্গে উপস্থিত অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি গুণাগুণ শরীরে প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দাঁতের ব্যথা উপশম করে। এছাড়াও, এই লবঙ্গ নিঃশ্বাসের দুর্গন্ধ দূর করতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। প্রায় সব টুথপেস্টেই লবঙ্গ একটি সাধারণ উপাদান।

বমি বমি ভাব উপশম করে

ট্রেন বা বাসে যাতায়াতের সময় মাথা ঘোরা এবং বমি বমি ভাব হলে মুখে লবঙ্গ রেখে রস চুষে নিলে বমি বমি ভাব ও মাথা ঘোরা কমে যাবে। গর্ভবতী মায়েরা  অস্বস্তি  থেকে মুক্তি পেতে লবঙ্গ চুষতে পারেন। লবঙ্গের তীব্র ঘ্রাণ বমি বমি ভাব দূর করতে সাহায্য করে।

মাথাব্যথা ও মানসিক চাপ কমায়

ধোঁয়া, রোদ ও ঠাণ্ডা শ্লেষ্মা বাড়িয়ে বিভিন্ন ধরনের মাথাব্যথা বা মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। মাথাব্যথা কমাতে লবঙ্গের উপকারিতা অপরিসীম। এ ছাড়া ক্লান্তি বা মানসিক চাপ কমাতে লবঙ্গ খুবই উপকারী একটি উপাদান। নিয়মিত ১ বা ২টি লবঙ্গ খেলে মানসিক চাপ বা ক্লান্তি দূর হয়।

খাবারে রুচি বাড়ায়

বিভিন্ন রোগ বিশেষ করে পেটের অসুখ ও জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার পর খাবারের প্রতি ঘৃণা দেখা দেয়। ভাত-রুটি, মাছ-মাংস, মিষ্টি বা কোনো উপাদেয় খাবারে স্বাদ না থাকলে, লবঙ্গ গুঁড়ো করে সকালে খালি পেটে খাওয়ার পর খাবারে স্বাদ ফিরিয়ে আনবে।

 বায়োঅ্যাকটিভ উপাদান বিদ্যমান

লবঙ্গে অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল, অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, অ্যান্টিকার্সিনোজেনিক, অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল, অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি, হেপাটো-প্রতিরক্ষামূলক এবং আরও অনেক জৈব সক্রিয় উপাদান রয়েছে। লবঙ্গ কলেরা, লিভারের সমস্যা, ক্যান্সার, শরীরের ব্যথা ইত্যাদি থেকে শরীরকে রক্ষা করে। অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণাগুণ যে কোনো ধরনের জীবাণু মেরে ফেলতে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করে

ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তি তার শরীরে প্রয়োজনীয় ইনসুলিন তৈরি করতে পারে না। গবেষণায় দেখা গেছে লবঙ্গের রস শরীরে ইনসুলিন উৎপাদনে সাহায্য করে এবং কর্মক্ষমতা বাড়ায় এবং রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখে।

 ত্বকের সংক্রমণ নিরাময় করে

আসলে, লবঙ্গে উপস্থিত উদ্বায়ী তেল শরীরে উপস্থিত বিষাক্ত উপাদানগুলিকে বের করে দেয়। এটি জীবাণুকেও মেরে ফেলে। ফলে সংক্রমণজনিত ব্যথা কমাতে একেবারেই সময় লাগে না।

রক্ত পরিশোধনে

লবঙ্গ রক্তে উপস্থিত ক্ষতিকারক পদার্থ বের করে দিতে সক্ষম। কারণ লবঙ্গে রয়েছে অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণ। তাই রক্ত পরিশোধনে লবঙ্গের ভূমিকা অপরিসীম।

ক্যান্সার প্রতিরোধ

বহু বছর ধরে লবঙ্গ ক্যান্সারের ওষুধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। কারণ লবঙ্গে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পারে। একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত লবঙ্গ সেবন শরীরের যেকোনো টিউমার বৃদ্ধিতে বাধা দেয় এবং ক্যান্সার কোষকে মেরে ফেলতে সাহায্য করে। স্তন ক্যান্সারের জন্য লবঙ্গ খুবই উপকারী একটি উপাদান। তবে ক্যান্সার রোগীদের লবঙ্গ খাওয়ার আগে অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।

জ্বর কমাতে

লবঙ্গ ভিটামিন ই এবং ভিটামিন কে এবং অ্যান্টি-ব্যাকটেরিয়াল গুণে সমৃদ্ধ যা শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। লবঙ্গ যে কোনো ধরনের সংক্রমণ থেকে শরীরকে রক্ষা করতেও সক্ষম। তাই শরীর সুস্থ রাখতে নিয়মিত লবঙ্গ খাওয়া উচিত।

লিভারের কার্যক্ষমতা বাড়াতে

লবঙ্গে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট রয়েছে যা শরীর থেকে টক্সিন বের করে দিতে সাহায্য করে। ফলস্বরূপ, লবঙ্গ শুধু লিভারের কার্যকারিতাই নয়, শরীরের প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গের কার্যকারিতা বাড়াতে সাহায্য করে।

লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম

আমরা রান্নার মসলা হিসেবে লবঙ্গ ব্যবহার করি। যাইহোক, রান্নার মশলা ছাড়াও, কীভাবে লবঙ্গ খেতে হয় তার কিছু বিবরণ নীচে দেওয়া হল। চলুন দেখে নেওয়া যাক লবঙ্গ খাওয়ার নিয়ম-

  • সর্দি হলে চায়ের সাথে লবঙ্গ খেতে পারেন।
  • গরম পানিতে সিদ্ধ করে খাওয়া যায়।
  • লবঙ্গ মধু দিয়ে খাওয়া যেতে পারে।
  • সকালে খালি পেটে লবঙ্গ খেলে বেশি উপকার পাওয়া যায়।
  • গরম পানিতে ৫-৬টি লবঙ্গ সিদ্ধ করে চা বানাতে পারেন, এতে সর্দি-কাশি ভালো হবে।
  • উচ্চ রক্তচাপে ভুগলে লবঙ্গ চিবাতে পারেন।
লবঙ্গের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া

প্রতিটি খাবারের যেমন উপকারিতা রয়েছে তেমনি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও রয়েছে। তদনুসারে, লবঙ্গের উপকারের পাশাপাশি পার্শ্ব প্রতিক্রিয়াও রয়েছে।   তবে লবঙ্গ অত্যধিক সেবনের ফলে যে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে তা নিম্নরূপ।

  • বেশি পরিমাণে লবঙ্গ খেলে শরীরের রক্ত পাতলা হতে পারে।
  • লবঙ্গ অতিরিক্ত সেবনে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মতো সমস্যা হতে পারে।
  • লবঙ্গ তেলের অতিরিক্ত ব্যবহারে অ্যালার্জির প্রতিক্রিয়া হতে পারে।

আরও পড়ুন

এই খাবারগুলো পানিতে ভিজিয়ে রেখে খান পুষ্টিগুণ বৃদ্ধি পাবে

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X