November 24, 2024
পরোপকারে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

পরোপকারে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

পরোপকারে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

পরোপকারে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে

পরোপকার ক্ষুদ্র থেকে ক্ষুদ্র হলেও বিশাল থেকে বিশালতর হলেও মনের মধ্যে যে আনন্দ আসে সে আনন্দেই স্বাস্থ্যকে সদা সুস্থ রাখবে। এবং অনেক রোগ শোক শরীর থেকে বের করে দিবে । কারণ পৃথিবীতে যে কয়টি আনন্দ আছে তার মধ্যে পরোপকার একটি পরমানন্দের অংশ । এটি অর্থের সাথেও হতে পারে, এটি কাজের সাথেও হতে পারে, এটি সদয় কথার সাথেও হতে পারে, এমনকি হতে পারে আপনার মুখে হাসি নিয়েও।

ইসলামে একে সাদাকা বলা হয়। সাদাকাহ আসলে শুধু মানুষের কল্যাণের জন্য নয়, আপনার কল্যাণের জন্যও প্রয়োজন। রাসুল (সাঃ) বলেছেন, কাউকে আন্তরিক হাসি দেওয়াও সাদাকা।

এই সাদাকাটির বৈজ্ঞানিক গুরুত্ব এখন প্রকাশ পাচ্ছে। সাদাকার মাধ্যমে আপনি আপনার সুস্বাস্থ্য গড়ে তুলতে পারেন, শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করতে পারেন।

ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল অফ বিহেভিওরাল মেডিসিনে প্রকাশিত একটি গবেষণাপত্রে, শিকাগো বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক স্টিফেন জি পোস্ট দেখিয়েছেন যে কীভাবে সহানুভূতি, দান  এবং অন্যদের সাহায্য ও উপকার করার মনোভাব সরাসরি একজন ব্যক্তির সুস্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে এবং তাকে দীর্ঘকাল বাঁচতে সাহায্য করে।

তাদের মধ্যে, একদল গবেষক বেশ কিছু বিষণ্ণ এবং উদ্বিগ্ন প্রাপ্তবয়স্কদের উপর একটি পরীক্ষা চালান।গবেষকরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে তারা সেই লোকেদের মধ্যে বিষণ্নতা এবং উদ্বেগ দূর করার জন্য দুটি উপায় চেষ্টা করবেন –

ক) হতাশাগ্রস্ত এবং উদ্বিগ্ন লোকেরা নিজেকে অন্যদের কাছে ইচ্ছে করে ভালভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করবে, তাদের কোনও সমস্যা বা দুর্বলতা নেই। তারা অন্যদের কাছে নিজেদের একটি চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করবে।

খ) হতাশাগ্রস্ত এবং উদ্বিগ্ন ব্যক্তিদের আরেকটি দল অন্যদের সহায়তায় কিছু করবে।

দেখা গেছে, যারা প্রথম পদ্ধতি অবলম্বন করেছে তারা মানসিকভাবে বেশি দুর্বল হয়ে পড়েছে।

এবং যারা দ্বিতীয় পন্থা অবলম্বন করেছে তাদের মধ্যে বিষণ্নতা উদ্বেগ অনেক কমে গেছে। আর সেই সাথে তাদের আশেপাশের মানুষের সাথে সম্পর্কও ভালো হয় যা তাদের অনেকদিন ভালো থাকতে সাহায্য করে।

দান বা সাদাকা:

দান বা সাদাকা ৭০ টি খারাপ কাজের দরজা বন্ধ করে দেয়। দানের মাধ্যমে রিজিক বৃদ্ধি পায়। দান-সদকা করার মাধ্যমে রিজিক বাড়ে। আল্লাহ–তাআলা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন, ‘আর তোমরা যা কিছু আল্লাহর জন্য ব্যয় করো; তিনি তার বিনিময় দেবেন। তিনিই উত্তম রিজিকদাতা।’ (সুরা সাবা, আয়াত: ৩৯)

রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “প্রতিদিন সকালে দু’জন ফেরেশতা অবতরণ করেন। তাদের একজন বলেন, হে আল্লাহ! দাতাকে তার দান-খয়রাতের জন্য উত্তম প্রতিদান দিন। অন্যজন বলেন, হে আল্লাহ! কৃপণকে ধ্বংস করুন।’ (বুখারি, মুসলিম, হাদিস)

এভাবে যখন আপনি দান করে দিনটি শুরু করবেন, তখন সারা দিন এক অন্যরকম মানসিক প্রশান্তি আপনাকে ঘিরে থাকবে।

কৃতজ্ঞতা বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ:

স্রষ্টা বা সৃষ্টির কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করাও একটি দান, এক রকমের একটি দান। আল্লাহ যে নেয়ামত দান করেছেন তার জন্য ধন্যবাদ বা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা। কারণ, শুকরিয়া নিয়ামত বৃদ্ধি করে। আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করেছেন, ‘যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর, আমি অবশ্যই তোমাদের (আশীর্বাদ) বৃদ্ধি করব। আর যদি অকৃতজ্ঞ হও, তবে নিশ্চয়ই আমার শাস্তি কঠোর।’ (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত: ৭)

রক্তদান:

রক্তের অভাব শুধু রক্ত দিয়েই পূরণ করা যায়। চার মাস পর আপনি রক্ত দিতে পারেন। হতবাক রোগীর জীবন বাঁচাতে এগিয়ে আসতে পারেন। আপনার এক ব্যাগ রক্ত বাঁচাতে পারে জীবন। ইসলাম বলে যে একজনের জীবন বাঁচানো সমগ্র মানব জাতির জীবন বাঁচানোর সমান।

এছাড়াও, বিভিন্ন গবেষণায়, গবেষকরা ক’টি কৌশল প্রতিষ্ঠা করেছেন যেগুলি যে কেউ তাদের দৈনন্দিন জীবনে শারীরিক এবং মানসিকভাবে ভাল হওয়ার জন্য অনুশীলন করতে পারে:

  • একে অপরকে সমর্থন করুন। অন্যের সুখে আনন্দ করা, অন্যের দুঃখে সহানুভূতি প্রকাশ করা।
  • ক্ষমাশীল চোখে অন্যের ভুলের দিকে তাকান। অন্যের ভুল ধরিয়ে না দিয়ে, দেখলেও ক্ষমা করে দিন।
  • কারো জীবনে ইতিবাচক প্রভাব ফেলুন। হয়তো সদয় কথা বলে বা তার পাশে বসে তার সুখ-দুঃখের কথা শুনে কিছুটা সময় কাটান।
  • ইতিবাচক কথা বলুন এবং গঠনমূলক মন্তব্য করুন। কথার শক্তি সম্পর্কে আমরা সবাই সচেতন। সামান্য সদয় কথা অন্য ব্যক্তির উপর খুব ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে, তার দৈনন্দিন কাজে আরও উত্সাহ যোগ করে।
  • অন্যকে ক্ষতি হয় বা আঘাত করে এমন কাজ করা বা বলা থেকে বিরত থাকুন।
  • শুধু নিজের কথা ভাববেন না। কীভাবে নিজের এবং আপনার চারপাশের লোকদের আরও ভাল যত্ন নেওয়া যায় সে সম্পর্কে চিন্তা করুন।
  • অন্যদের জন্য জীবন যতটা সম্ভব সহজ করা। এটি ক্ষুদ্রতম জিনিস সম্পর্কেও হতে পারে। উদাহরণ স্বরূপ; অন্যরা পরিষ্কার করবে ভেবে সিঙ্কে থালা-বাসন না ফেলে। অথবা কারো কাপড় ইস্ত্রি করা, হাতের কাজ একটু এগিয়ে করা ইত্যাদি।

আরও পড়তে পারেন

রোগ প্রতিরোধে মুহাম্মাদ রাসূলুল্লাহ (স.) এর নির্দেশনা

রাগ মোকাবেলার কিছু ফলপ্রসূ স্বাস্থ্যকর উপায়

অধীনস্থদের (কর্মচারী-কর্মকর্তাদের) প্রতি মালিকদের আচরণ: ইসলামী নমুনা

 

3 Comments

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X