অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে আরো নিষেধাজ্ঞা আরোপের আহ্বান
অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে আরও নিষেধাজ্ঞাসহ বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন নীতির আহ্বান জানিয়েছে মার্কিন মানবাধিকার সংস্থাগুলো। তারা দাবি করে যে, বাংলাদেশ ব্যাপক রাজনৈতিক সহিংসতা প্রত্যক্ষ করছে, পাল্টাপাল্টি ডাকা রাজনৈতিক সমাবেশগুলো সংঘর্ষের মধ্য দিয়ে শেষ হচ্ছে এবং বিরোধী দলগুলোর ডাকা বিক্ষোভ প্রায়ই দমনপীড়নের সম্মুখীন হচ্ছে।
বাংলাদেশে মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদের দ্বিদলীয় ‘টম ল্যান্টোস হিউম্যান রাইটস কমিশন’ আয়োজিত এক ব্রিফিংয়ে এই আহ্বান জানানো হয়। এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন, রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস, হিউম্যান রাইটস ওয়াচ, ইউএস ইনস্টিটিউট অফ পিস এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের প্যানেলিস্টরাও অংশ নেন।
এর আগে ২০২১ সালে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র মানবাধিকার লঙ্ঘনের জন্য র্যাব এবং এর কিছু শীর্ষ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল। চলতি বছরের মে মাসে বাংলাদেশের জন্য নতুন ভিসা নীতি ঘোষণা করে যুক্তরাষ্ট্র। বলা হচ্ছে, বাংলাদেশে ভোট কারচুপির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে ভিসা নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে দেশটি।
এমন প্রেক্ষাপটে রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটস ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি অ্যান্ড লিটিগেশন ফেলো ক্রিস্টি উয়েদা বলেন, ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে আমরা যেমন দেখেছি, সেইভাবেই ২০২৪ সালের জানুয়ারির নির্বাচনের আগে নাগরিক অধিকার সংগঠন, মানবাধিকার কর্মী, সাংবাদিক এবং সরকারের সমালোচকদের টার্গেট করা হচ্ছে। আইন প্রয়োগকারী কর্মকর্তারাআইনশৃঙ্খলাবাহিনীর কর্মকর্তারা উল্লিখিত মানুষ পরিবারের সদস্যদের গ্রেপ্তার, হয়রানি এবং ভয় দেখানোর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নিচ্ছেন। কারণ এসব কর্মকর্তাদের অন্যায়ের জন্য জবাবদিহি করতে হয় না।
বাংলাদেশে মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ক্রমশ ক্ষুণ্ন হচ্ছে উল্লেখ করে ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সালের প্রথম ছয় মাসে সাংবাদিকদের ওপর ১৫১টি হামলার ঘটনা ঘটেছে। সরকারও গণমাধ্যমের ওপর হামলা করেছে। চলতি বছরের জানুয়ারিতে সরকার রাষ্ট্রবিরোধী সংবাদ প্রকাশের দায়ে ১৯১টি ওয়েবসাইট বন্ধ করে দেয়।
তিনি বলেন, ঠুনকো কারণে ফেব্রুয়ারিতে একটি প্রধান বিরোধী সংবাদপত্রের প্রকাশনা লাইসেন্স বাতিল করে বন্ধ করে দেয়।
রবার্ট এফ কেনেডি হিউম্যান রাইটসের ইন্টারন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি এন্ড লিটিগেশন বিষয়ক ফেলো ক্রিস্টি ইউয়েদা বলেন, “আমরা বিশ্বাস করি যে বাংলাদেশ সরকার মানবাধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত ও তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ ও কার্যকর জবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া পর্যন্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চলমান নিষেধাজ্ঞাগুলি প্রত্যাহার করা উচিত নয়।” তিনি একই ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘনের সাথে জড়িত আইন প্রয়োগকারী সদস্যদের বিরুদ্ধে নতুন নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়েছেন ।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে যে, গণতন্ত্রকে কার্যকর করার জন্য নাগরিক স্বাধীনতার সুযোগ দিতে হবে।
বাংলাদেশকে অবশ্যই সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মী এবং সংগঠনদের হয়রানি, হুমকি ও প্রতিশোধের ভয় ছাড়া কাজ করার জন্য নিরাপদ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
ইউএস ইনস্টিটিউট অব পিস-এর দক্ষিণ এশিয়া কর্মসূচির পরিদর্শন বিশেষজ্ঞ এবং ইন্টারন্যাশনাল রিপাবলিকান ইনস্টিটিউটের এশিয়া-প্যাসিফিক বিভাগের সিনিয়র উপদেষ্টা জেফরি ম্যাকডোনাল্ড বলেছেন, গত এক বছরে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিবেশের কিছুটা উন্নতি হয়েছে। সরকারের সমালোচনা করতে বিএনপিসহ অন্যান্য বিরোধী দলগুলো বড় বড় সমাবেশ করেছে। স্বতন্ত্র এবং বিরোধী প্রার্থীরা স্থানীয় নির্বাচনে জয়ী হয়েছে, যা নির্বাচনী নিরপেক্ষতার একটি মাত্রা নির্দেশ করে। তবে রাজনৈতিক সহিংসতা এখনও বেশি। তিনি বলেন, সব রাজনৈতিক দলের সদস্য ও সমর্থকদের সহিংসতা এড়ানো অপরিহার্য। দ্বিতীয়ত, বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের কার্যক্রমে প্রায়ই স্বচ্ছতার অভাব থাকে। তিনি বলেন, গণমাধ্যম সূত্রে জানা গেছে, বিরোধী দলের হাজার হাজার নেতাকর্মী বর্তমানে বিভিন্ন অভিযোগে আইনি মামলার মুখোমুখি হচ্ছেন।
আরও পড়ুন
ভিসা নীতি নিয়ে আবারো বাংলাদেশকে সতর্ক করেছে যুক্তরাষ্ট্র
এশিয়ান হিউম্যান রাইটস কমিশন এবং এশিয়ান লিগ্যাল রিসোর্স সেন্টারের লিয়াজোঁ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান বলেন, র্যাবের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞার পর বাংলাদেশে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড কমেছে। ফলস্বরূপ, নিষেধাজ্ঞাগুলি অনেক জীবন বাঁচাতে একটি কার্যকর হাতিয়ার হিসাবে প্রমাণিত হয়েছে। নিষেধাজ্ঞার পর গুমের ঘটনাও কমেছে। জানুয়ারী ২০০৯ থেকে ২০২৩ সালের জুনের মধ্যে ২৬৮৩ টি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। এর মধ্যে ২০২১ সালে এই ধরনের ১০৭ টি খুনের ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু ২০২২ সালে এই সংখ্যা কমে ৩১ জনে দাঁড়িয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন পর্যন্ত বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন মাত্র আটজন। তিনি আরও বলেন, আমরা মার্কিন কংগ্রেসের টম ল্যান্টোস হিউম্যান রাইটস কমিশনকে অনুরোধ করব বাংলাদেশিরা যে মানবিক মূল্য দিচ্ছেন তা কমাতে তাদের পূর্ণ ক্ষমতা ব্যবহার করতে।