র্যাপিড ক্যাশ প্রতারক চক্রের টার্গেট বাংলাদেশসহ তিনটি দেশ
Rapid Cash একটি Android অ্যাপ্লিকেশন। অ্যাপটি অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল সেটে ডাউনলোড হওয়ার সাথে সাথে অন্য পক্ষ সেটটিতে সম্পূর্ণ অ্যাক্সেস নেয়। একই সঙ্গে মোবাইল সেট ব্যবহারকারীর সব যোগাযোগ নম্বর, গ্যালারির তথ্য, ছবি, ভিডিওসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চলে যায় প্রতারকদের হাতে।
অ্যাপটিকে বাংলাদেশে ব্যবহারযোগ্য যে কোনো মোবাইল সিম নম্বরের মাধ্যমে নিবন্ধন করতে হয়। রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হওয়ার সাথে সাথে, র্যাপিড ক্যাশ ব্যবহারকারীকে ৫০০ টাকা বা ১০০০টাকা অনাকাঙ্ক্ষিত একটি ছোট ঋণ দেওয়া হয়। আর ঋণ দেওয়ার সময় থেকেই ওই টাকার ওপর উচ্চ হারে সুদ ধার্য করা হয়।
লোন দেওয়ার কয়েক দিনের মধ্যে, Rapid Cash তাদের হটলাইন নম্বরের মাধ্যমে হোয়াটসঅ্যাপে একটি কল দেয় যাতে সুদ-মূল্য বা অন্তত সুদ পরিশোধ করা যায়। কোনো গ্রাহক টাকা দিতে অস্বীকার করলে সংশ্লিষ্টরা তাকে নানাভাবে প্রতারণা বা ব্ল্যাকমেইল করতে থাকে।
২ হাজার টাকা ঋণ দেবে। ৭ দিন পর ফেরত দিতে হবে ২ হাজার ৫০০ টাকা। মাত্র ৫ টাকা সুদ দিতে হবে জেনে ‘র্যাপিড ক্যাশ’ নামের একটি অনলাইন ঋণদাতার অ্যাপে নিবন্ধন করেছেন অনেকে। বেশিরভাগ নিবন্ধনকারী সর্বনিম্ন ২০০০ টাকার ঋণের জন্য আবেদন করছেন।
তবে মোবাইলে ঋণের টাকা জমা হওয়ার বার্তা আসার পরেই চিন্তা শুরু হয় গ্রাহকের। ২ হাজার টাকার পরিবর্তে টাকা আসে ১৬৮৫। ৭ দিনের মধ্যে ১৬৮৫ টাকার বিপরীতে জমা দিতে হবে ২০০৫ টাকা। না দিতে পারলে সুদ প্রতিদিন ১০০ টাকা। এক মাস পর থেকে সুদ প্রতিদিন ২০০ টাকা। এর এক সপ্তাহ পর থেকে সুদ ৪০০ টাকা।
এক ভুক্তভোগী বলেন, আমি র্যাপিড ক্যাশ থেকে ২ হাজার টাকা নিয়ে নির্ধারিত সময় পরিশোধ করতে পারিনি। ৭৬ দিন পর তারা আমাকে ৮১৯৬ টাকা পরিশোধের ম্যাসেজ পাঠায়। অথচ ঋণ নেওয়ার সময় অতিরিক্ত সুদের বিষয়ে কিছু জানায়নি। টাকা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় তারা আমাদের সামাজিকভাবে হয়রানি করছে।
এই যুগের ডিজিটাল মহাজন ‘র্যাপিড ক্যাশ’ ইতিমধ্যেই অসংখ্য গ্রাহককে সম্পূর্ণ অর্থঋণ ব্যবস্থার পথে নিয়ে এসেছে।
রাজধানীর উত্তরায় প্রতারণার কাজে ব্যবহৃত কল সেন্টারের পরিচালক মহিউদ্দিন মাহিসহ ২৬ জনকে আটক করেছে এটিইউর সাইবার ক্রাইম শাখা। তবে এই চক্রের মূল পরিকল্পনাকারী চীনা নাগরিককে তারা ধরতে পারেনি। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের ঋণ দেওয়ার নামে প্রতারণা করে আসছিল চক্রটি।
‘র্যাপিড ক্যাশ’ নামের একটি চীনা তৈরি মোবাইল অ্যাপ আতঙ্কে পরিণত হয়েছে। এই অ্যাপ ব্যবহার করে অনলাইনে ঋণ দেওয়ার নামে চলছে প্রতারণা। বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানে একটি চক্র সাধারণ মানুষকে টার্গেট করে এই প্রতারণার ফাঁদ পাচ্ছে।
ভুক্তভোগীরা জানায়, পুরো টাকা পরিশোধ করার পরও তারা পুনরায় ঋণ নিতে বাধ্য করে । একইভাবে ঋণের পরিমাণ ও সুদ পরিশোধ করতে বাধ্য করা হয়। কিছু ক্ষেত্রে ভয়ও দেখানো হয়।
‘দ্রুত ক্যাশ’ চক্রের টার্গেটে বাংলাদেশসহ তিনটি দেশ
এই চক্রের সদস্যরা বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে।
বাংলাদেশে অ্যাপ অ্যাকাউন্ট খুলে ৫০০ টাকা থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঋণ দিত চক্রটি। সময়মতো টাকা পরিশোধ না করলে তারা অ্যাপ ব্যবহার করে গ্রাহকের মোবাইল ফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য ও ছবি চুরি করে এবং অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করার হুমকি দেয়। এমনকি আপত্তিকর ছবির সাথে গ্রাহকের ছবিও এডিট করে ছড়িয়ে দেওয়া হয়।
মহিউদ্দিন মাহী এই সার্কেলের সমন্বয়ক হিসেবে কাজ করছিলেন। চীনের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে চার বছর পড়াশোনা করেছেন এই যুবক। চীনা ভাষায় দক্ষ। এবং সেই ভাষার উপর তার এমন দখল ছিল বলেই তিনি এটিকে প্রতারণার অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছেন।
“প্রতারকরা তাদের শিকার হিসাবে সাধারণ মানুষকে টার্গেট করত। প্রথমে মোবাইলের মাধ্যমে অ্যাকাউন্ট খোলার নামে টার্গেট ব্যক্তির কাছ থেকে ভোটার আইডি এবং ছবি নেওয়া হয়েছিল। গ্রাহকরা যখন এই কাজগুলি করত তখন এই চক্রটি সব চুরি করত। চুরি করত মোবাইল ফোনের কল লিস্ট, গ্যালারির ছবি, ভিডিও সহ তথ্য।
আরও পড়ুন
বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারি: বাচ্চুসহ ১৪৭ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট
চক্রটি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে টাকা সংগ্রহ করতে এমনকি কোনো গ্রাহককে হুমকি দিয়ে আপত্তিকর ছবি পাঠালে তা মুছে ফেলা হবে। আপনার কম্পিউটারে কোনো আপত্তিকর তথ্য রাখবেন না। আর এই ছবিগুলো তৈরি করার জন্য ফটোশপের আলাদা টিম আছে।
ভারত ও পাকিস্তানে একই অ্যাপ থেকে বিভিন্ন নামে ঋণ দেওয়া হচ্ছে। একই পদ্ধতিতে ঋণগ্রহীতাদের সঙ্গে প্রতারণাও রয়েছে। ওই দুই দেশে তারা ৫০০ থেকে ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত ক্ষুদ্র ঋণ দিয়েছে। এবং সময়ের সাথে সাথে তারা এর বিপরীতে ২০ থেকে ২২ লাখ টাকা আদায় করছে।
তিনি আরও বলেন, ‘এই প্রতারক চক্রের সঙ্গে জড়িত শ্রমিকদের কাছ থেকে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা দেওয়া হয়। এছাড়া গ্রাহকের কাছ থেকে আদায়কৃত অর্থের একটি অংশ তারা বোনাস হিসেবে পান। এভাবে প্রত্যেক শ্রমিক মাসে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা আয় করেন। আমাদের বিশ্বাস এই চক্রে এরকম আরও কল সেন্টার রয়েছে।’
দ্রুত নগদ অনুমোদিত নয়
র্যাপিড ক্যাশ ব্যবসা পরিচালনা বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে ঋণ দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে কোনো অনুমোদন নেয়নি। তারা লাইসেন্স ছাড়াই ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে।