November 25, 2024
ঋণ দিতে পারবে না ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর কোনো শাখা

ঋণ দিতে পারবে না ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর কোনো শাখা

ঋণ দিতে পারবে না ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর কোনো শাখা

ঋণ দিতে পারবে না ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ লিঃ এর কোনো শাখা

ইসলামী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকরা এখন থেকে কাউকে কোনো ঋণ দিতে পারবেন না। এমনকি বিভাগীয় ও জোনাল প্রধানরাও কোনো ঋণ মঞ্জুর করতে পারবেন না। এছাড়া তারা ঋণসীমা বাড়াতে পারে না। তবে কৃষি খাতে ঋণ দেওয়ার ক্ষমতা বহাল রাখা হয়েছে।

গত ১৯ জুন ইসলামী ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের ৩২৪তম সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। আহসানুল আলম ওই সভায় পরিচালক ও চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দেন। তিনি চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাইফুল আলমের ছেলে।

জানা গেছে, আগে সব ক্ষেত্রেই শাখা ব্যবস্থাপক ও জোন প্রধানরা পদমর্যাদার ভিত্তিতে সর্বোচ্চ ৭০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতেন, যার একটি বড় অংশ গ্রামীণ উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের কাছে যেত। নতুন সিদ্ধান্তের ফলে গ্রামীণ উদ্যোক্তাদের ঋণ পাওয়ার সুযোগ কমেছে। এখন প্রধান কার্যালয়ের অনুমোদন সাপেক্ষে সব ঋণ দেওয়া হবে। এর মধ্যে ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারেন।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংকের মালিকানা নেওয়ার পর, এস আলম গ্রুপ ব্যাংকটির একক নিয়ন্ত্রণ নেয়।

একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের জন্য ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদ এ সিদ্ধান্ত নেয়। ৭ ব্যাংক থেকে বিদেশে অর্থ পাচারের তথ্য এখন আলোচিত হচ্ছে। আদালত তদন্তের নির্দেশও দেন।

ব্যাংকের এমডি মোহাম্মদ মুনিরুল মাওলা ও মানবসম্পদ বিভাগের প্রধান মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী ঋণ অনুমোদনের বিষয়ে পর্ষদের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের জন্য ২০ জুলাই শাখা পর্যায়ে চিঠি দেন। জানা গেছে, নানা অনিয়মের কারণে তারল্য সংকটে পড়ে বেসরকারি খাতের ইসলামী ব্যাংক এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

আগে সিনিয়র চিফ অফিসার শাখা ব্যবস্থাপক হিসেবে কাজ করলে সর্বোচ্চ ১০ লাখ টাকা ঋণ দিতে পারতেন। এই পদের উপরে পরিচালকদের ২০লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদনের ক্ষমতা ছিল। এবং বিভিন্ন আঞ্চলিক প্রধান বা জোনাল প্রধানদের ঋণ অনুমোদনের সীমা ছিল ৭০ লাখ পর্যন্ত। সারাদেশে ইসলামী ব্যাংকের ৩৯৪ টি শাখা রয়েছে। প্রতিটি শাখার অধীনে কয়েকটি উপ-শাখা রয়েছে।

ঋণ অনুমোদন কর্তৃপক্ষ সংক্রান্ত চিঠিতে বলা হয়েছে, এমডি যেকোনো ধরনের নতুন ঋণ অনুমোদন করবেন বা ঋণের সীমা ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত বাড়াবেন। ৫০ লাখ টাকার বেশি ঋণ বা ঋণের সীমা বৃদ্ধির অনুমোদন দেবে ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি। তবে ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত কৃষি ঋণের ক্ষেত্রে আগের ক্ষমতাই থাকবে শাখা ব্যবস্থাপকদের হাতে।

আর খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এমডি বাংলাদেশ ব্যাংকের পুনঃঅর্থায়নের আওতায় ৫০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারেন। বেশি হলে তা নির্বাহী কমিটি ও পরিচালনা পর্ষদের কাছে যাবে। ফলে শাখা পর্যায় থেকে কৃষিঋণ ছাড়া অন্য কোনো ঋণ মঞ্জুর করা যাবে না। তবে ব্যাংকের কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, কৃষিঋণ অনুমোদনের কর্তৃপক্ষ সরানো না হলেও তা এখনো বন্ধ রয়েছে।

কেন এমন সিদ্ধান্ত নিতে হলো?

ইসলামী ব্যাংকের চিঠিতে বলা হয়েছে, বৈশ্বিক সরবরাহ ব্যবস্থাপনায় ব্যাঘাত, জ্বালানি ও ভোগ্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ ঋণ বিতরণের সক্ষমতা ও ওপেন লেটার অব ক্রেডিট (এলসি) নিয়ে নতুন সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

ব্যাংকের ২০২২ সালের তথ্য অনুযায়ী, তাদের ঋণের ৫৩ শতাংশ শিল্প খাতে, ৩২ শতাংশ ব্যবসা বা বাণিজ্য খাতে এবং ৬ শতাংশ আবাসন খাতে গেছে। ৩ শতাংশ ঋণ গেছে ভোক্তা ও কৃষি খাতে। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ব্যাংকটি তাদের বেশিরভাগ ঋণ শাখা পর্যায়ে বিতরণ বন্ধ করবে।

ইসলামী ব্যাংকের এমডি মুহাম্মদ মুনিরুল মাওলা বলেন, ব্যাংকের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনে পরে পুনরায় চালু করা হবে। অনেক বেসরকারি ও বিদেশী ব্যাংকের শাখা ও বিভাগীয় পর্যায়ে ঋণ মঞ্জুর করার ক্ষমতা নেই।

জানা যায়, ২০১৭ সালে ব্যাংকটির মালিকানা চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপের কাছে যাওয়ার পর বিভিন্ন শাখা থেকে নামে-বেনামে ঋণের নামে টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। এর মধ্যে বেশিরভাগ ঋণের আকার ৯০০ কোটি টাকার মধ্যে। কারণ, ব্যাংকের নির্বাহী কমিটি ৯০০ কোটি টাকা পর্যন্ত ঋণ অনুমোদন করতে পারে।

আরও পড়ুন

ইসলামী ব্যাংকের আমানতকারীরা এক বছরে ১৮ হাজার কোটি টাকা তুলে নিয়েছে

কর্মীদের বড় অঙ্কের বেতন বাড়াচ্ছে টয়োটা-হোন্ডা কোম্পানি

এর বেশি ঋণ থাকলে তা অনুমোদনের জন্য পরিচালনা পর্ষদে পাঠানোর কথা ছিল। এই সময়ে ব্যাংকটির নির্বাহী কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন যথাক্রমে সাবেক সেনা কর্মকর্তা আব্দুল মতিন ও চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মো. সেলিম উদ্দিন। জুনে ইসলামী ব্যাংকের চেয়ারম্যান পদে যোগ দেন এস আলমের ছেলে আহসানুল আলম, আর গ্রুপটির মালিকানাধীন ইউনিয়ন ব্যাংকের চেয়ারম্যান করা হয় সেলিম উদ্দিনকে।

বর্তমানে তারল্য সংকটে ভুগছে ইসলামী ব্যাংক। ঋণের চেয়ে আমানত বেশি। ফলে ঋণ-আমানতের অনুপাতের  সীমা ছাড়িয়ে গেছে। এ অবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা ধার নিয়ে কার্যক্রম স্বাভাবিক রাখার চেষ্টা করছে ব্যাংকটি। বাংলাদেশ ব্যাংকে প্রয়োজন মতো টাকা জমা দিতে না পারায় নিয়মিত জরিমানা দিচ্ছে ব্যাংকটি। তবে জমাকৃত আমানত কেন্দ্রীয় ব্যাংকে জমা হয় না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ইসলামী ব্যাংকের কিছু হলে পুরো ব্যাংকিং খাতে প্রভাব পড়বে এবং ঝুঁকি তৈরি হবে। সরকারের সবুজ সংকেত না থাকায় কিছুই করা যাচ্ছে না।

ইসলামী ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ব্যাংকিং খাতে দেশের আমদানি, রপ্তানি ও প্রত্যাবাসন আয়ের প্রায় ৩০ শতাংশই এই ব্যাংকের মাধ্যমে। দুই কোটি গ্রাহক প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা রেখেছেন। এসব আমানতকারীর বেশির ভাগই জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের।

অন্যদিকে সৌদি আরবের কোম্পানি আরবসাস ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিস্ট এজেন্সি ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির ব্যবস্থাপনা থেকে সরে এসেছে। তবে কোম্পানিটি এখনো শেয়ার বিক্রি করেনি। এর আগে ইসলামী ব্যাংকের পুরো শেয়ার ছেড়ে দিয়ে ব্যবস্থাপনা থেকে সরে আসে সরকারি প্রতিষ্ঠান ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)।

এর আগে বেশ কয়েকটি বিদেশি কোম্পানি ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার বিক্রি করেছে। যখন  ২০১৭ সালে, চট্টগ্রামের এস আলম গ্রুপ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নেয় তখন থেকেই  এই শেয়ার বিক্রি শুরু করে। এস আলম গ্রুপ এসব শেয়ার কিনে ব্যাংকের একক নিয়ন্ত্রণ নেয়। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, নানা অনিয়মের কারণে ব্যাংকটি এখন কঠিন তারল্য সংকটে ভুগছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X