November 25, 2024
মানসিক অস্থিরতা কমাতে কিছু আমল

মানসিক অস্থিরতা কমাতে কিছু আমল

মানসিক অস্থিরতা কমাতে কিছু আমল

মানসিক অস্থিরতা কমাতে কিছু আমল

সুস্বাস্থ্য-অসুখ, সুখ-দুঃখ, প্রফুল্লতা-অতৃপ্তি মানুষের জীবনের অংশ। জীবনের এই বৈচিত্র্য জীবনকে আরও সুন্দর ও আনন্দময় করে তোলে। আল্লাহর নৈকট্য অর্জনে সহায়তা করে। বান্দা যদি সব অবস্থায় আল্লাহর উপর ভরসা করতে পারে তবে বান্দার প্রতিটি অবস্থাই সর্বশক্তিমান আল্লাহর নিয়ামত হয়ে যায়।

পবিত্র কোরআনে দোয়ার গুরুত্ব উল্লেখ করা হয়েছে, ‘আমার বান্দারা যখন আপনার কাছে আমার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করে, আমি (তাদের কাছে) থাকি, যখন আহ্বানকারী আমাকে ডাকে আমি তার ডাকে সাড়া দেই; তাই তাদের উচিত আমার নির্দেশ মেনে চলা এবং আমার প্রতি ঈমান আনা, যাতে তারা হেদায়েত পায়।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)এ কারণে মুমিনের উচিত অস্থিরতা অনুভব করলে তা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করা।

নিম্নে কুরআন-হাদিসের আলোকে মানসিক অস্থিরতা দূর করার কিছু করণীয়-আলোচনা করছিঃ
ইখলাস বা সঠিক নিয়ত:

মানসিক প্রশান্তি লাভের অন্যতম রহস্য হল ইখলাস বা আন্তরিকতা। অন্যের অকৃতজ্ঞতা দেখে মানুষ আরও অস্থির বোধ করে। তার অবদানকে তুচ্ছ করা দেখে। কিন্তু তিনি যখন জীবের কাছ থেকে বিনিময়ে কিছু আশা না করে একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য সবকিছু করেন, তখন তার অস্থিরতা অনেকাংশে কমে যায়। কারণ সে আমলটি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য করেছে, এর উত্তম প্রতিদান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন দেবেন।

আল্লাহকে স্মরণ বা যিকির করা:

যিকির অন্তরে প্রশান্তি আনে। কেননা একজন মুমিন মুসলমানের অন্তরের খোরাক হলো যিকির, ইবাদত, কোরআন তেলাওয়াত ও নামাজ। সর্বশক্তিমান আল্লাহ এই বিষয়টিকে কুরআনে উল্লেখ করেছেন এভাবে:

যারা ঈমান আনে তা দের অন্তর আল্লাহর স্মরণে শান্তি পায়। আল্লাহ বলেন,  আল্লাহর স্মরণে (মানুষের) অন্তর শান্ত হয়।’ (সূরা রাদ: আয়াত ২৮)

কোরআন তেলাওয়াত করা:

কুরআন তিলাওয়াত মানুষের মনের অস্থিরতাও দূর করে। কোরআন তেলাওয়াতের ফলে অন্তরে জান্নাতের পরিবেশ তৈরি হয়। এই কুরআন মানসিক সহ বহু রোগের নিরাময় ও রহমত। আল্লাহ বলেনঃ

“আমরা কোরআনে নাজিল করেছি যা রোগের নিরাময় এবং মুমিনের জন্য রহমত।” এটা পাপীদের ক্ষতিই বাড়িয়ে দেয়।’ (সূরা বনি ইসরাঈল: আয়াত ৮২)

নামাজে মনোযোগ দেয়া:

যখন অস্থির বোধ করেন তখন প্রার্থনায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করুন। কারণ নামাজ মানুষের মনের অস্থিরতা দূর করে। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অস্থির থাকতেন তখন নামাযের মাধ্যমে শান্তি পেতেন। কুরআন ও সুন্নাহতেও এটা স্পষ্ট। অস্থিরতা দূর করতে নামাযের ভূমিকা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন:

নিশ্চয়ই মানুষ ভীরুরূপে সৃজিত হয়েছে। যখন তাকে অনিষ্ট স্পর্শ করে, তখন সে হা-হুতাশ করে (মনে অস্থিরতা তৈরি হয়)। আর যখন কল্যাণপ্রাপ্ত হয়, তখন কৃপণ হয়ে যায়। তবে তারা স্বতন্ত্র, যারা নামাজ আদায়কারী। যারা তাদের নামাজে সার্বক্ষণিক কায়েম থাকে।’ (সুরা মাআরিজ : আয়াত ১৮-২৩)

হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন অস্থির হয়ে যেতেন তখন নামাযে দাঁড়াতেন।’ (আবু দাউদ)

শুধু তাই নয়, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত বেলাল রাদিয়াল্লাহু আনহুকে বলতেন, হে বেলাল-أনামাজের ইকামত দাও; এর মাধ্যমে আমাকে প্রশান্তি দাও।’ (আবু দাউদ)

আল্লাহর নেয়ামতের কথা চিন্তা করা:

মানুষ প্রতি মাইক্রো সেকেন্ডেও  সর্বশক্তিমান আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামত উপভোগ করে। সে আল্লাহর অসংখ্য নেয়ামতের মধ্যে নিমজ্জিত। আমরা যদি হিসাব দেখি তাহলে বোঝা যাবে যে, আল্লাহ আমাদেরকে যে নিয়ামত দিয়েছেন তা আমাদের জন্য যে কষ্টগুলো এসেছে তার চেয়ে বহুগুণ বেশি। সমস্যার চেয়ে পাওয়ার  কথা চিন্তা করলে অস্থিরতা বেশি শুকরিয়া আসবে। পবিত্র কোরানে বলা হয়েছে, আপনি যা চেয়েছেন তিনি আপনাকে সব দিয়েছেন (আপনার যা প্রয়োজন তা আপনি পেয়েছেন) এবং আপনি যদি আল্লাহর অনুগ্রহ গণনা করতে চান তবে আপনি কখনই তাদের সংখ্যা নির্ধারণ করতে সক্ষম হবেন না। মানুষ অবশ্যই খুব নিষ্ঠুর, খুব অকৃতজ্ঞ। (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত ৩৪ )

আল্লাহর উপর ভরসা করা:

আল্লাহর উপর ভরসা ও ভরসা অস্থিরতা কাটিয়ে উঠতে কার্যকর। কারণ আল্লাহ যার সাথে আছেন, দুনিয়ার কোন কিছুই তার ক্ষতি করতে পারে না। মুসলিম  জাতির পিতা ইব্রাহিম (আ.)-কে যখন আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আল্লাহই আমার জন্য যথেষ্ট…।

এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে উল্লেখ করা হয়েছে, “যাদেরকে লোকেরা বলেছিল: ‘নিশ্চয়ই লোকেরা তোমার বিরুদ্ধে একত্রিত হয়েছে। সুতরাং তাদের ভয় করো।’ কিন্তু এতে তাদের ঈমান বেড়ে যায় এবং তারা বলে, ‘আল্লাহই আমাদের জন্য যথেষ্ট এবং তিনিই উত্তম পথপ্রদর্শক!’ অতঃপর তারা আল্লাহর অনুগ্রহ ও অনুগ্রহ নিয়ে ফিরে আসে, কোন মন্দ তাদের স্পর্শ করেনি, তারা আল্লাহর সন্তুষ্টির অনুসরণ করেছে এবং আল্লাহ সবচেয়ে দয়ালু। (সূরা আল ইমরান, আয়াত ১৭৩ -১৭৪)

ধৈর্য ধারণ:  

যারা ধৈর্য ধরে আল্লাহর সাহায্য চায়, সর্বশক্তিমান আল্লাহ তাদের সাহায্য করেন, তাই তাদের অস্থির হওয়ার কোন কারণ নেই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, হে ঈমানদারগণ, ধৈর্য্য ও নামাযের মাধ্যমে আমার সাহায্য প্রার্থনা কর, নিশ্চয়ই আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সাথে আছেন। (সূরা বাকারা, আয়াত .১৫৩)

সৎকাজ করাঃ সৎকর্মের মাধ্যমে উত্তম জীবন লাভ করা যায়। জীবনে কল্যাণ আসে। তাই মুমিনের উচিত অশান্তির সময়ে নেক কাজের প্রতি মনোনিবেশ করা। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিন পুরুষ ও নারীদের মধ্যে যারাই সৎকাজ করবে, আমি অবশ্যই তাদের সুখী জীবন দান করব এবং তাদের সর্বোত্তম কাজের প্রতিদান দেব। (সূরা: নাহল, আয়াত: ৯৭)

আরও পড়ুন

ডিপ্রেশন বা হতাশা থেকে বাঁচতে যেসব আমল করবেন
দরুদ পাঠঃ রাসূল (সা.)কে ভালোবাসার অন্যতম নিদর্শন
অলস সময় ব্যয় করবেন না:

অলসতা একটি মারাত্মক রোগ। এটি এমন একটি রোগ যা বিভিন্ন বিভ্রান্তিকর এবং অস্বস্তিকর চিন্তা, অস্থিরতা এবং উদ্বেগ নিয়ে আসে। যার কারণে মন অস্থির হয়ে ওঠে। তাই যখনই মন অস্থির হয়ে ওঠে তখন অলস বসে না থেকে মনের ইচ্ছার বিরুদ্ধে হলেও যিকির করা, কোরআন তেলাওয়াত করা বা নামাজ পড়া শুরু করা  বা কোন ভালো কাজে লেগে যাওয়া জরুরি। ফলে এই সময়ের মধ্যে মনের সমস্ত অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যাবে।

মনের অস্থিরতা দূর করার দুআ,

হজরত আসমা বিনতে উমায়েস রাদিয়াল্লাহু আনহা বর্ণনা করেন যে, আল্লাহর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছেন, ‘আমি কি তোমাকে এরকম কিছু শব্দ শিখিয়ে দেব না; দুশ্চিন্তার সময়ে কী পড়বেন? তারা হল-

اَللهُ اَللهُ رَبِّىْ لَا اُشْرِكُ بِهِ شَيْئًا

উচ্চারণ: ‘আল্লাহু আল্লাহু রব্বি; লা উশরিকু বিহি শাইয়া।’
অর্থ: ‘হে আল্লাহ! তুমিই আমার প্রভু, আল্লাহ, আমি তোমার সঙ্গে কাউকে শরিক করি না। (আবু দাউদ)

তাই একজন মুমিন মুসলমানের মনে কোনো অশান্তি থাকলে তার উচিত কুরআন-সুন্নাহর আমলসহ হাদীসে বর্ণিত দুআগুলো পাঠ করা। হাদিসে বর্ণিত প্রিয় নবীর শেখানো দোয়া পাঠ করে মনের অস্থিরতা ও দুশ্চিন্তা দূর করার চেষ্টা করা।

মানসিক অস্থিরতা যেকোনো কাজের জন্য একটি মারাত্মক ব্যাধি। মনের অস্থিরতা দূর করতে কার্যকরী আমল ও দোয়া রয়েছে। ইসলামের নির্দেশনা মেনে চললে মনের অস্থিরতা নিঃসন্দেহে দূর হবে, ইন শা আল্লাহ।

আল্লাহ তায়ালা মুসলিম উম্মাহকে কুরআন-সুন্নাহর আলোকে মনের অস্থিরতা দূর করার তাওফীক দান করুন। হাদীসের উপর আমল করার তাওফিক দান করুন। আমীন।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X