November 21, 2024
মহানবীর(সা.) শিখানো হাসি ও কান্না দুটি ইবাদত

মহানবীর(সা.) শিখানো হাসি ও কান্না দুটি ইবাদত

https://timetvusa.com/wp-admin/

মহানবীর(সা.) শিখানো হাসি ও কান্না দুটি ইবাদত

হাসি কান্না মানুষের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। এই পার্থিব জীবন হাসি-কান্নায় পরিপূর্ণ। মানুষের সংসার, হাসি-কান্না নিয়ে বেঁচে থাকা। মানুষ হাসি-কান্নার মধ্য দিয়ে বেড়ে ওঠে এবং বেঁচে থাকে। একটি নবজাতক শিশুও কাঁদে এবং হাসে; কারণে বা অকারণে। সে হাসি কান্নাও এবাদতে পরিণত হয় যদি ইখলাস-পূর্ণ  নিয়তের সাথে এবং আল্লাহকে রাজি খুশি করানোর জন্য হাসি দেওয়া হয় ।  এবং তার দরবারে,আল্লাহর ভয়ে কান্না হয়।  তবে সেটা অবশ্যই সওয়াবের অংশ হয়।  তাই আমরা সুন্নাত তরিকা নিয়ে হাসি করি। যেভাবে আমাদের নবীজীর সুন্নত হাসিমুখে পূর্ণ হয়। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে হারেস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) হাসতেন। (তিরমিযী)।

হাসি সৌন্দর্যের প্রতীক। কখনো কখনো হাসি অনেক দুঃখ-বেদনা ভুলিয়ে  দেয়। সবাই হাস্যোজ্জ্বল মানুষকে ভালোবাসে। আন্তরিকতা এবং বন্ধুত্ব হাসির মাধ্যমে তৈরি হয়। একটু হাসি দুজনের সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ করতে পারে।

আবার একজন মুমিনের কান্না আল্লাহর কাছে প্রিয়, তাই কান্নাও একজন মুমিনের কাছে প্রিয় কাজ।  পার্থিব জীবনে আল্লাহর ভয়ে মুমিনের অন্তর নরম থাকে।

আপনি যদি আবার হাসেন, আপনি আপনার ভাল কাজের জন্য পুরস্কৃত হবেন। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, ‘তোমার ভাইয়ের (সাক্ষাতে) হাসিও একটি সদকা’ (তিরমিযী)।

এবং আমরা উচ্চস্বরে হাসব না। কারণ উচ্চস্বরে হাসি অন্তর আত্মাকে হত্যা করে। পরকাল সম্পর্কে উদাসীনতা দেখা দেয়। আমাদের নবীন হাসতেন কম আর কাঁদতেন বেশি। তিনি মানুষকে কম হাসতে এবং বেশি কাঁদতে পরামর্শ দেন।

আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “আমি যা জানি তা যদি তোমরা জানতে, তবে তোমরা খুব কম হাসতে এবং খুব বেশি কাঁদতে।” (সহীহ বুখারী।)

আবার অযথা হাসির ব্যাপারে সতর্কবাণী উচ্চারিত হয়েছে। দুনিয়াতে উচ্চস্বরে হাসলে আখেরাতে তার ফল হবে ভয়াবহ। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন, “সুতরাং তারা অল্প হাসে এবং তারা যা করেছে তার প্রতিদান হিসাবে তারা অনেক কাঁদবে।” (সূরা: তওবা, আয়াত: ৮২)।

মুমিনের বৈশিষ্ট্য: মুমিনের বৈশিষ্ট্য হলো তার চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত হবে। আল্লাহর স্মরণে তাদের অন্তর গলে যাবে। আল্লাহর শাস্তির ভয়ে তাদের অন্তর কেঁপে উঠবে। কেননা যে আল্লাহর ভয়ে কাঁদে তার জন্য রয়েছে উচ্চ মর্যাদা। পরকালে একটি মর্যাদাপূর্ণ স্থান এবং একটি সুখী জান্নাত আছে তার জন্য ।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহর ভয়ে ক্রন্দনকারীর জাহান্নামে যাওয়া এমন অসম্ভব, যেমন দোহনকৃত দুধ পুনরায় ওলানে ফিরে যাওয়া অসম্ভব। আর আল্লাহর পথের ধুলা ও জাহান্নামের ধোঁয়া কখনও একত্রিত হবে না।’(তিরমিযী)।

অশ্রুবিন্দু আল্লাহর কাছে প্রিয়: আল্লাহর ভয়ে নির্গত অশ্রুবিন্দু তার কাছে প্রিয়: আবু উমামা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহর কাছে দুটি ফোঁটা ও দুটি নিদর্শনের চেয়ে প্রিয় আর কিছুই নেই।

১. আল্লাহর ভয়ে ফোঁটা ফোঁটা অশ্রু

২.  আল্লাহর পথে(জিহাদে) প্রবাহিত রক্তের ফোঁটা । (তিরমিযী)।

অন্য হাদীসে হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে বলতে শুনেছি, জাহান্নামের আগুন দুটি চোখ স্পর্শ করবে না।

১. যে চোখ আল্লাহর ভয়ে কাঁদে।

২. যে চোখ আল্লাহর পথ(জিহাদের ময়দানে)  পাহারা দিয়ে  রাত কাটায়। (তিরমিযী)।

কান্না হৃদয়কে কোমল করে। হৃদয়ে প্রশান্তি আনে। দুঃখ লাঘব করে। তিনি তাদের ভালোবাসেন যারা আল্লাহকে ভয় করে। তাকে হাশর ময়দানের ভয়াবহতা থেকে তাদের মুক্তি দিবেন । যেখানে ছিন্ন হবে পৃথিবীর সব সম্পর্ক, যেখানে মানুষ হাবুডুবু খাবে ঘামের সাগরে।এমন কঠিন পরিস্থিতিতে আরশের নিচে সাত শ্রেণীর মুমিনদের আশ্রয় দেয়া হবে। তাদের একদল সম্পর্কে রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি নির্জনে আল্লাহকে স্মরণ করে, তার চোখ থেকে অশ্রু প্রবাহিত হয়।’ (বুখারী)

আরও পড়ুন

নান্দনিক সৌন্দর্যের প্রতীক; কুমিল্লার ‘সাত গম্বুজ মসজিদ’

তুরস্কে ১০০১ কুরআনের হাফেজকে দেয়া হলো বিশেষ সম্মাননা

অতীতে যেসব জাতি আল্লাহর গজব দ্বারা ধ্বংস হয়েছিল যেমন আদ, সামুদ ও লুত প্রভৃতি তাদেরকে ধ্বংসের স্থান অতিক্রম করার সময় কাঁদতে বলা হয়েছিল যেন তাদের উপর যে গযব এসেছিল অনুরূপ গযবে যেন কেউ না পড়ে। রাসূল (সা.) বলেন, তোমরা এসব আযাবপ্রাপ্ত সম্প্রদায়ের লোকালয়ে ক্রন্দনরত অবস্থা ব্যতীত প্রবেশ করবে না। যদি কান্না না আসে তাহলে সেখানে প্রবেশ কর না, যাতে তাদের উপর যা আপতিত হয়েছিল তা তোমাদের উপর আপতিত না হয়’। (বোখারী)।

ছোট্ট পরিসরের জীবন দিয়ে সাজানো শেষ নবীর উম্মত।  সেই জীবনে অনর্থক হাসি দিয়ে আমরা যেন আখেরাতকে না খোয়াইয়ে বসি । এবং নির্জনে মহান রবকে ডেকে কাঁদতে থাকি। আমাদের হাসি আমাদের কান্না সকল কিছুই হবে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কে রাজি খুশি করানোর জন্য।  তার রাসুলের (সা.) বাতলানো পন্থায় । আল্লাহ আমাদেরকে সে মোতাবেক হাসি এবং কান্না করার  তৌফিক দান করুন।  আমিন।

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X