হিজাব মুসলিম নারীদের এবং পুরো সমাজের মর্যাদা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা
হিজাব পরলে শুধুমাত্র নারীদেরই সম্মান মর্যাদা ও ইজ্জতের রক্ষা হয় শুধু এতটুকুই নয়। বরং হিজাবের কারণে সমাজের পুরুষরাও তাদের ইজ্জত ও সম্মান বজায় রাখতে পারে। আর নারীরাও সমাজের নষ্ট হয়ে যাওয়া লোলুপ দৃষ্টি থেকে রক্ষা পায় । আর সমাজ থাকে পবিত্র। তাই আজকের আলোচনা আমাদের ইসলামের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ;হিজাব মুসলিম নারীদের এবং পুরো সমাজের মর্যাদা ও সুরক্ষার নিশ্চয়তা সম্পর্কে।
ইসলাম একটি সার্বজনীন ও চিরন্তন পূর্ণাঙ্গ জীবন ব্যবস্থা। ইসলাম নারীদের সম্মান, মর্যাদা ও অধিকারকে স্বীকৃতি দেয় । এবং ইসলামে তাদের সতীত্ব রক্ষা ও তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক কর্মসূচি রয়েছে। তাদের সম্মান, মর্যাদা ও সতীত্ব অক্ষুণ্ণ রাখার জন্য ইসলাম তাদের ওপর হিজাব বা পর্দা করার বিধান আরোপ করেছে। ‘পর্দা ‘ শব্দের উৎপত্তি ফারসি। এর আরবি অর্থ ‘হিজাব’। ওড়না বা হিজাবের বাংলা অর্থ হল ঢেকে রাখা, আড়াল করা, কাপড় দিয়ে সৌন্দর্য ঢেকে রাখা ইত্যাদি। পর্দা অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ফরয বিধান। ইসলামে; এর গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা অনস্বীকার্য।
হাদীস শরীফে নারীদেরকে ‘আওরাত’ বলা হয়েছে। আওরাত শব্দের অর্থ লুকানো বা আবৃত। তাই শব্দের উৎপত্তি দেখেই বোঝা যায় নারীদের জন্য পর্দা কতটা প্রয়োজনীয়। পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় বিবেকের দাবিও তাই। আর এ কারণে শরীয়তে নারীদের জন্য পর্দা ফরজ করা হয়েছে। আসলে ‘হিজাব’ নারীর সৌন্দর্য ও মর্যাদার প্রতীক। নারীর সতীত্ব ও মর্যাদা রক্ষা। নারী ও পুরুষ উভয়ের সতীত্ব রক্ষার একটি খুব সহজ এবং কার্যকরী উপায়। এই নিয়ম মেনে অন্তর ও মনের পবিত্রতা অর্জন করা যায়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তায়ালা বলেন,
ذٰ لِكُمۡ اَطۡهَرُ لِقُلُوۡبِكُمۡ وَقُلُوۡبِهِنَّ
‘এই বিধান তোমাদের ও তাদের অন্তরের অধিকতর পবিত্রতার কারণ।’ (সূরা আহযাব : ৫৩)
ইসলামী শরীয়তে নারীকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এই শরিয়ত নারীর মর্যাদা রক্ষার দায়িত্ব গ্রহণ করেছে। তাঁর মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বকে সমুন্নত করেছেন। নারীর পোষাক ও সৌন্দর্যের উপর যে সকল শর্ত আরোপ করা হয়েছে তা কেবল তাকে রক্ষা করার জন্যই নয় , সৌন্দর্যের প্রকাশের ফলে সৃষ্ট বিপর্যয়ের সকল পথ রুদ্ধ করার জন্য। এটা নারীর স্বাধীনতা খর্ব করার জন্য নয়; বরং, তাকে লোভনীয় চোখ থেকে রক্ষা করতে এবং তার বিশুদ্ধতা ও সৌন্দর্যের মান রক্ষা করতে তার জন্য বড় মাপের অধিকার।
আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি হিজাব আনুগত্য: আল্লাহ ও তাঁর রাসূল মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর প্রতি আনুগত্য করা। কেননা তাদের আনুগত্য প্রত্যেক নর-নারীর উপর আরোপিত। আল্লাহ বলেন,
وَ مَا کَانَ لِمُؤۡمِنٍ وَّ لَا مُؤۡمِنَۃٍ اِذَا قَضَی اللّٰهُ وَ رَسُوۡلُهٗۤ اَمۡرًا اَنۡ یَّکُوۡنَ لَهُمُ الۡخِیَرَۃُ مِنۡ اَمۡرِهِمۡ ؕ وَ مَنۡ یَّعۡصِ اللّٰهَ وَ رَسُوۡلَهٗ فَقَدۡ ضَلَّ ضَلٰلًا مُّبِیۡنًا
কোন মুমিন পুরুষ বা মুমিন নারীর অধিকার নেই যে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল যা আদেশ করেছেন তা নিয়ে দ্বিমত পোষণ করার। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অমান্য করবে, সে প্রকাশ্য গোমরাহীতে নিপতিত হবে। (সূরা আহযাব-৩৬)
আল্লাহ তায়ালা নারীদের পর্দা করার নির্দেশ দিয়েছেন: মুমিন নারীদের বলুন যেন তারা তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের গোপনাঙ্গের হেফাজত করে। সাধারণত: প্রকাশমান স্থান ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে। । (সূরা নূর-৩১)। : তোমরা গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করবে- মূর্খতা যুগের অনুরূপ (বেপর্দা হয়ে) নিজেদেরকে প্রদর্শন করবে না।(সূরা আহজাব-৩৩)। আল্লাহ আরও বলেন, হে নবী! আপনার স্ত্রীদের এবং আপনার কন্যাদের এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। (সূরা আহযাব-৫৯)। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ নারী হল গোপন জিনিস। (তিরমিযী) মানে তাকে ঢেকে রাখতে হবে।
টাইম টেলিভিশনের আরও খবর
ইউনিফর্মে হিজাব অন্তর্ভুক্ত করেছে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজ
মাহরাম কারা? তাদের পরিচয় জানা প্রত্যেক মুসলিমের জন্য অবশ্যই জরুরি
হিজাব পরা নারীদের পবিত্রতা: আল্লাহ্ তাআলা বলেন, হে নবী, আপনি আপনার স্ত্রীগণকে ও কন্যাগণকে এবং মুমিনদের স্ত্রীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে নেয়। এতে তাদেরকে চেনা সহজ হবে। ফলে তাদেরকে উত্যক্ত করা হবে না। (সূরা আহযাব- ৫৯) একজন মহিলা নিজেকে আবৃত করবে। এতে তাকে শুদ্ধ রাখা হবে, তবেই সে কষ্ট পাবে না এবং দুষ্ট বা দুষ্ট লোকেরা তাকে শ্লীলতাহানি করার সুযোগ পাবে না। এখানে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে, একজন নারীর সৌন্দর্য অন্যের কাছে প্রকাশ পেলে তাকে কষ্ট, প্রলোভন ও দুর্ভাগ্যের সম্মুখীন হতে হয়।
হিজাবের পবিত্রতা: আল্লাহ বলেন, তোমরা যদি তাঁর স্ত্রীদের কাছে কিছু চাও, তাহলে পর্দার আড়ালে থেকে চাও। এটা আপনার এবং তাদের অন্তরের জন্য অধিকতর পবিত্রতার কারণ। (সূরা আহযাব-৫৩)। এ আয়াতে মুমিন নর-নারীর অন্তরের পবিত্রতার কারণ হিসেবে পর্দার কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কারণ চোখ যখন পর্যবেক্ষণ করে; হৃদয় তখন চায়। আর সেজন্য না তাকানো অন্তরের পবিত্রতার কারণ এবং ফিতনা থেকে বাঁচার সুস্পষ্ট উপায়। কেননা পর্দার মাধ্যমে দুর্বল চিত্তের মানুষের কুপ্রবৃত্তি ধ্বংস হয়ে যায়। এবং মহিলাদের অন্য পুরুষদের সাথে ভদ্র এবং আকর্ষণীয়ভাবে কথা বলা উচিত নয়। এটি দুর্বল চিত্তের অন্তরে লালসা (কুবাসন) সৃষ্টি করবে। (সূরা আহজাব-৩২)