রমজানের আগমন বা যেকোনো ধর্মীয়/ সামাজিক অনুষ্ঠান বা দেশের যেকোনো সংকট ও কঠিন মুহূর্তকে পুঁজি করে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করে একদল অমানুষ । তারা পণ্য স্টক/মজুত করে। তাদের কাজ ইসলামের দৃষ্টিতে হারাম। এটা গর্হিত অপরাধ। তাদের কর্মফল ভাল না। আল্লাহ পবিত্র কোরানে বলেন- যে সীমালংঘন করে এবং অন্যায় করতে চায়, আমি তাকে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেব। এক অর্থে তারা অভিশপ্ত। দারিদ্র কক্ষনোই তাদের পিছু ছাড়বে না।
অধিক লাভের আশায় খাদ্যপণ্য মজুদ করে তারা।
অধিক মুনাফার চিন্তায় দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য মজুদ করাকে ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় ‘ইহতিকার’ বা মজুদ করা বলে। অস্বাভাবিক লাভের আশায় মজুদ করা অভিশাপ বা পাপ।
মজুতদারির পাপের কারণ হলোঃ
- এর ফলে সমাজের অর্থনৈতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়
- মানুষ দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা মেটাতে হিমশিম খায
- অর্থনৈতিক হয়রানির শিকার হয়
- সব শ্রেণীর মানুষই খাদ্য সংকটে ভুগে
এজন্য ইসলামী শরীয়তে মজুতদারি নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) মজুতদারকে পাপী, অভিশপ্ত এবং সবচেয়ে নিকৃষ্ট ।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একটি হাদীসে মজুতদারদেরকে গুনাহগার বলেছেন এবং বলেছেন, “যে ব্যক্তি পণ্য মজুত করে এবং বেশি দামে বিক্রি করে সে অবশ্যই গুনাহগার।” (বায়হাকী ও মিশকাত)
অন্য হাদিসে মহানবী (সা.) মজুতদারকে অভিশপ্ত ঘোষণা করে বলেছেন, “যে ব্যক্তি মূল্য বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে (অধিক মুনাফা লাভের জন্য) ৪০ দিন ধরে খাদ্যশস্য মজুদ করে। সে আল্লাহর দায়িত্ব থেকে মুক্ত এবং আল্লাহ তার প্রতি অসন্তুষ্ট হন। (ইবনে মাজাহ, বায়হাকী ও মিশকাত)
মজুতদার হল সমাজের নিকৃষ্ট ব্যক্তি। হাদিসে বলা হয়েছে, “মজুতদার ব্যক্তি খুবই নিকৃষ্টতম ব্যক্তি।যদি নিজিসপত্রের মূল্য কমে যায় তারা চিন্তিত হয়। দাম বাড়লে তারা খুশি হয়।’
মানুষকে অন্যায়ভাবে হয়রানি করার উদ্দেশ্যে সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির উদ্দেশ্যে পণ্য মজুদ করা একটি অপরাধ। একাজের কারণে আল্লাহ তায়ালা বিশ্বকে মহামারী দিয়ে শাস্তি দেন। হাদিসে উল্লেখ আছে-
“যদি কেউ মুসলমানদের কাছ থেকে তার খাদ্যশস্য আটকে রাখে, তবে আল্লাহ তায়ালা তার পরে মহামারী ও দারিদ্র্য চাপিয়ে দেন ।”
মজুতদারি জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে দুর্ভিক্ষ বা কৃত্রিম অভাব সৃষ্টির প্রভাব ফেলে। চিহ্নিত মজুতদারদের দমন করা রাষ্ট্র বা সরকারের দায়িত্ব ও কর্তব্য।
ব্যবসায় নিষেধাজ্ঞা নেই। তবে তা সীমার মধ্যে হওয়া উচিত। সততার হওয়া উচিত। অন্যথায় পরকালে তাকে এর জন্য জবাবদিহি করতে হবে। নবী করিম (সাঃ) বলেছেন, কেয়ামতের দিন অসৎ ব্যবসায়ীদেরকে বড় অপরাধী হিসেবে উত্থাপন করা হবে। সুন্দর সমাজ ও দেশ গড়ার লক্ষ্যে দেশের মানুষকে অন্যায় মজুদদারি বা কালোবাজারি থেকে মুক্তির উদ্দেশ্যে সমাজ এবং রাষ্ট্রীয় কর্মকর্তাদের এই বিষয়ে যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করার প্রয়োজন ।