ইসলামের আলোঃ রোজা ভঙ্গের কারণ
“আমরা উল্লেখিত নিবন্ধে রোজা ভঙ্গের কারণ সমূহ উল্লেখ করছি. এরপরেও যদি কোন বিষয়ে রোজা ভাঙ্গার মত কোন কিছু প্রতীয়মান হয়, তাহলে অবশ্যই বিজ্ঞ কোন আলিমের কাছে জিজ্ঞেস করে নেওয়া প্রয়োজন। কেননা রোজা একটি অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ আমল।”
কোরআনে থেকে রোজা ভঙ্গের কারণ গ্রহণঃ রোজা ও তা ভঙ্গ সম্পর্কে কোরআনের ঘোষণা হলো, ‘রোজার রাতে তোমাদের জন্য স্ত্রীদের সহবাস হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পোশাক এবং তোমারা তাদের পোশাক. আল্লাহ জানেন যে, তোমরা নিজেদের প্রতি অবিচার করছিলে। অতঃপর তিনি তোমাদের প্রতি ক্ষমাশীল হয়েছেন এবং তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করেছেন। সুতরাং এখন তোমরা তাদের সঙ্গে সংগত হও এবং আল্লাহ যা তোমাদের জন্য বিধিবদ্ধ করেছেন তা কামনা করো। আর রাতের কালো রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা দেখা না দেওয়া পর্যন্ত তোমরা খাও ও পান কর। অতঃপর রাত না আসা পর্যন্ত রোজা পূর্ণ কর।’ (সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৭)
উল্লেখিত আয়াতে মহান আল্লাহ রোজাদারকে তিনটি জিনিস থেকে বিরত থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন –
১. স্ত্রী-মিলন, ২. খাদ্য গ্রহণ, ৩. পান করা
কিছু শর্ত ও বাধ্যবাধকতা পূরণ করে রোজা পালন করতে হয়। এসব শর্ত ও বিধিনিষেধ পূরণ না হলে রোজা ভেঙ্গে যায় এবং তা বাতিল বলে গণ্য হয়। শরিয়ত অনুমোদিত কারণ ছাড়া কোনো ব্যক্তির জন্য রোজা ভঙ্গ করা গুনাহ। ইসলামী শরীয়তে রোজা ভঙ্গ করার প্রতিকার হলেও এর শতভাগ পূরণ করা সম্ভব নয়। আবু হুরায়রা (রাঃ) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “যে ব্যক্তি কোন কারণ (শরীয়ত অনুমোদিত) বা রোগ ছাড়া রমজান মাসে রোজা ভঙ্গ করবে, তার সারা জীবন রোজা রাখার দ্বারা এর ক্ষতিপূরণ হবে না। যদিও সে সারাজীবন রোজা রাখে।’ (সুনানে তিরমিযী)
রোজা ভাঙার প্রতিকার: রোজা ভাঙার কারণ দুই ধরনের
এক. যার কারণে রোজা ভেঙ্গে যায় এবং কাযা ও কাফ্ফারা (ক্ষতিপূরণ) উভয়ই আদায় করতে হবে।সেটা হল
ক. ইচ্ছাকৃত খাদ্য গ্রহণ বা পান করা।প্রতিকার হিসেবে ব্যক্তিকে রোজা ও কাফফারা কাযা করতে হবে।
খ. রমজানের দিনে স্ত্রী সহবাস করলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। তার প্রতিকার হিসেবেও ব্যক্তিকে রোজা ও কাফফারা কাযা করতে হবে।
তবে জোরপূর্বক স্ত্রীর সাথে সহবাস করলে। এক্ষেত্রে স্ত্রীকে শুধু কাজা করতে হবে এবং স্বামীকে কাজা ও কাফফারা উভয়ই করতে হবে।
দুই. যার কারণে রোজা ভঙ্গ হলে ক্ষতিপূরণ হিসেবে শুধু কাযা লাগবে, কাফফার লাগবে না। কারণগুলো হল-
- বমির পর মুখের মধ্যে বেশিরভাগ বমি গিলে ফেলা,
- মেয়েদের ঋতুস্রাব এবং প্রসবের পরে,
- ইসলাম ত্যাগ করলে,পরে আবার ইসলাম গ্রহণ করলে,
- গ্লুকোজ বা টনিক ইনজেকশন বা স্যালাইন, গ্রহণ করলে ,
- কুলি করার সময় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলায় পানি প্রবেশ করলে,
- যদি ওষুধ বা অন্য কিছু মূত্রনালীর মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে,
- যদি কেউ রোজাদারকে কিছু খেতে বাধ্য করে,
- রাত বাকি আছে ভেবে,সুবেহ সাদিকের পরে খাওয়া-দাওয়া করলে,
- সূর্যাস্তের আগে ইফতারের সময় হয়েছে ভেবে রোজা ভেঙ্গে ইফতার করলে ,
- ভুলবশত কিছু খাওয়ার পর , রোযা ভেঙ্গে গেছে ভেবে ইচ্ছাকৃত বেশি করে খেয়ে নিলে,
- বৃষ্টির পানি মুখে পড়ার পর পান করে নিলে ,
- জিভ দিয়ে বের করে দাঁতের ফাঁক থেকে ছোলার আকারের কিছু খেয়ে ফেললে,
- সামান্য বমি করার পর ইচ্ছাকৃতভাবে গিলে ফেলা,
- রোযা রাখাবস্থায় অযুতে নাকে পানি প্রবেশ করলে।
যেসব কারণে রোজা রাখা মাকরূহ
- মুখ দিয়ে কিছু চিবানো।
- রোযা রাখাবস্থায় গুঁড়ো, পেস্ট, কাঠকয়লা বা অন্য কোনো পদার্থ দিয়ে দাঁত পরিষ্কার করা।
- জিহ্বা দিয়ে কিছু আস্বাদন করা। তবে বদমেজাজি স্বামীর জন্য স্ত্রীর তরকারির স্বাদ সাবধানে আস্বাদন করা জায়েজ।
- রোজা অবস্থায় কারো গীবত করলে ।
- মিথ্যা কথা বললে ।
- অশ্লীল কথা বললে ।
- অনর্থক তর্কে লিপ্ত হলে ।
রোজা ভাঙ্গা যায় সেসব কারণে
- হঠাৎ তীব্র পেটে ব্যথা শুরু হওয়া, যা ওষুধ ছাড়া উপশম করা যায় না।
- সাপ, বিচ্ছু প্রভৃতি বিষাক্ত প্রাণী কামড়ালে এবং এর চিকিৎসার জন্য রোজা ভঙ্গ করতে হবে।
- রোজা রেখে খুব তৃষ্ণার্ত হলে দুর্বলতা ও মৃত্যুর ভয়ে।
- যদি গর্ভবতী মহিলার গর্ভপাতের ঝুঁকি থাকে।
- বাচ্চার মা ভয় পেলে যে, বাচ্চা দুধ পাবে না।
- রোজা রাখার কারণে মৃত্যুর আশঙ্কা থাকলে।
- বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা রাখতে না পারলে।
- সফরে রোজা রাখা কঠিন ও কষ্টকর হলে।
- যখন মহিলাদের পিরিয়ড বা নেফাস শুরু হয় (প্রসবোত্তর রক্ত) । ঋতুস্রাবের সর্বনিম্ন সময়কাল তিন দিন, সর্বোচ্চ ১০ দিন এবং নাফাসের সর্বোচ্চ সময়কাল ৪০ দিন।
রোজার কাফফারা বা প্রায়শ্চিত্ত
কাফফারার জন্য বিনা বিরতিতে দুই মাস (৬০) রোজা রাখতে হবে। দুই মাসের মধ্যে যেকোনো দিনে রোজা ভাঙলে আবার দুই মাস রোজা রাখতে হবে। আগের রোজা বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু এর মধ্যে মহিলাদের ঋতুস্রাব শুরু হলে আগের রোজা ভঙ্গ হবে না। পাক হলেই আবার রোজা শুরু করতে হবে এবং ৬০টি রোজা পালন করতে হবে।
রোজা রাখার সামর্থ্য না থাকলে ৬০ জন মিসকীনকে দিনে দুবার বা একজনকে ৬০ দিনের জন্য দুবার তৃপ্তির সাথে খাওয়াতে হবে অথবা ৬০ জন মিসকীনের প্রত্যেককে সদকা হিসেবে ফিতরের মূল্য পরিশোধ করতে হবে।