একই ধান থেকে দুই দফায় লাভ করছে মিল মালিক নামক মধ্যসত্ত্ব ভোগীরাঃ ভোক্তাকেই পেতে হচ্ছে শেষ দণ্ড
একই ধান থেকে দুবার মুনাফা আদায় করছেন দেশের মিল মালিকরা। একদিকে তারা ধান থেকে চাল তৈরি করে মোটা মুনাফায় বিক্রি করে। অন্যদিকে ধানের তুষ, তুষ ও চাল উপজাত হিসেবে বিক্রি করেও বাড়তি মুনাফা করেছেন তারা।
কিন্তু মিল মালিকরা বছরের পর বছর এই মুনাফা লুকিয়ে রেখেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের ১৯৫টি রাইস মিলের গবেষণা প্রতিবেদনে চাল মিল মালিকদের এমন উচ্চ মুনাফার চিত্র উঠে এসেছে।
এক কেজি চাল বানাতে দেড় কেজি ধান লাগে। প্রকারভেদে দেড় কেজি আমনের দাম ৩৭ টাকা থেকে ৪২ টাকা। আর সরু জাতের দাম ৪৫ টাকা। একই পরিমাণ বোরো ধানের দাম ৩৭ টাকা থেকে ৪৬ টাকা।
আমন মৌসুমে মিল মালিকরা এই চাল বিক্রি করেন ৪৩ টাকা থেকে ৫৪ টাকায়। আর বোরো মৌসুমে ৪৩ থেকে ৬৩ টাকা। এতে তাদের প্রতি কেজি চাল আয় ৫ দশমিক ৬৪ থেকে ৯ দশমিক ০৬ টাকা। বোরোর ক্ষেত্রে লাভের অঙ্ক ৫.৬৪ টাকা থেকে ৯.০৫ টাকা।
ধান উৎপাদনের সময় উপজাত বা উপজাত হিসেবে উৎপাদিত ভুসি, তুষ ও কুড়া থেকে মিল মালিকরা সর্বোচ্চ সাত থেকে সাড়ে নয় টাকা আয় করেন। উপজাতের এই মুনাফা যোগ করলে মিল মালিকদের লাভ হয় প্রতি কেজি চালে আট থেকে সাড়ে ১৩ টাকা।
বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট সম্প্রতি অনিয়ন্ত্রিত চালের বাজার সম্পর্কে ১৯৫টি রাইস মিলের উপর একটি গবেষণা প্রতিবেদন তৈরি করেছে। তাদের তথ্য বলছে, খুদ, তুষ ও কুড়া থেকে মিল মালিকরা তাদের লাভের পরিসংখ্যান বরাবরই গোপন করে আসছে। তারা একই পণ্য দুইবার পাচ্ছে।
তবে মিল মালিকদের দাবি, তারা এই প্রতিবেদনের তথ্য বুঝতে পারছেন না। তারা জানান, তারা বরাবরই খুদ, তুষ ও কুড়ার উপজাত পণ্য খোলা বাজারে বিক্রি করে আসছেন। এসব পণ্য থেকে আয়ের সঙ্গে চালের দামের কোনো সম্পর্ক নেই। যুগ যুগ ধরে এভাবেই চলে আসছে।
বাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, এই ধান থেকে দ্বিগুণ লাভের বিষয়টি মিল মালিকরা বিবেচনা না করলে কিছু করার নেই। মিল মালিকদের অতিরিক্ত মুনাফার পর যে চাল বাজারে আসে তা ভোক্তাদের কাছে না পৌঁছানো পর্যন্ত
আবার তা পাইকারি ও খুচরা বিক্রেতাদের লাভের সঙ্গে যোগ হয়।
অর্থাৎ দিন শেষে সবচেয়ে বেশি দণ্ড পেতে হয় ক্রেতা বা ভোক্তাকেই। আর চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় ভোক্তার কিছু করার নেই। সরকারের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সময়ে নানা ব্যবস্থা ও নজরদারি করা সত্ত্বেও চালের বাজার লাগাম টেনে ধরা যায়নি, এটি মিল মালিকরা ভক্ষকরাই নিয়ন্ত্রণ করছে।