দেশে অনলাইন সহিংসতার শিকার ৬৩ শতাংশই নারী
দেশের ৬৩.৫১ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতা ও হয়রানির শিকার। বেশিরভাগ নারী মনে করেন, বিদ্যমান অভিযোগের প্রক্রিয়াগুলো কার্যকর নয়। ফলে অনেকে (২৮.৮৭%) কোনো অভিযোগ জমা দিতে আগ্রহ দেখাননি। সামাজিক কলঙ্ক, ভুক্তভোগী দোষারোপ ও গোপনীয়তা হারানোর ভয়ে ৭৫.৭৭ শতাংশ নারী অনলাইনের মাধ্যমে বেনামে অভিযোগ জানাতে চান।
একশনএইড বাংলাদেশের সমীক্ষায় এ চিত্র উঠে এসেছে। ১৬ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ পক্ষ উদযাপন উপলক্ষে রোববার রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টারে ‘অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা :বাধা এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক এ সমীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয়। সাতক্ষীরা, সুনামগঞ্জ, পটুয়াখালী, বান্দরবান, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাটে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৩৫৯ জন নারী জরিপে অংশ নেন।
সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ২০২২ সালে বিভিন্ন ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের মধ্যে নারীরা বেশিরভাগই ফেসবুকে (৪৭.৬০%), মেসেঞ্জারে (৩৫.৩৭%), ইনস্টাগ্রামে (৬.১১%), ইমোতে (৩.০৬%), হোয়াটসঅ্যাপে (১.৭৫%) এবং ইউটিউবে (১.৩১%) সহিংসতার শিকার হন। ৪.৮০ শতাংশ নারী বলেছেন, তাঁরা ভিডিও কল, মোবাইল ফোন ও এসএমএসের মাধ্যমে হয়রানির শিকার হয়েছেন। সর্বোচ্চ ৮০.৩৫ শতাংশ নারী অনলাইন সহিংসতার মধ্যে ঘৃণ্য এবং আপত্তিকর যৌনতাপূর্ণ মন্তব্য, ৫৩.২৮ শতাংশ নারী ইনবপে যৌনতাপূর্ণ ছবি গ্রহণ এবং শারীরিক সম্পর্ক স্থাপনের প্রস্তাব, ১৯.১৭ শতাংশ নারী বৈষম্যমূলক মন্তব্যের শিকার হয়েছেন।
১৭.৪৭ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁদের নামে অন্য কেউ অনলাইনে নকল আইডি তৈরির ফলে হয়রানির শিকার হয়েছেন। ১৬.১৬ শতাংশ জানিয়েছেন, তাঁদের কার্যকলাপ সাইবার স্পেসে অনুসরণ করা হয়। আর ১৩.১০ শতাংশ উত্তরদাতা সমকামীদের অধিকার নিয়ে কথা বলার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমণের শিকার হয়েছেন। এ ছাড়া ১১.৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁদের ব্যক্তিগত ছবি অনুমতি ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট করা হয়েছে এবং ১১.৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা যৌন নিপীড়নের হুমকি পেয়েছেন।
৩.০৬ শতাংশ উত্তরদাতা জানিয়েছেন, যৌন নিপীড়নের সময় তাঁদের ছবি তোলা বা ভিডিও রেকর্ড করা এবং সেগুলো পরে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করা হয়েছে। ২.৬২ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁদের অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ছবি গোপনে পোস্ট করা হয়। পরে তাঁদের ব্যক্তিগত তথ্য প্রকাশের হুমকি দিয়ে অর্থের জন্য ব্ল্যাকমেইল করা হয়। ১.৭৫ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তাঁদের ছবি বিকৃত করে পর্নোগ্রাফি সাইটে প্রকাশ করা হয়।
সমীক্ষায় আরও উঠে এসেছে, অনলাইন সহিংসতার কারণে ৬৫.০৭ শতাংশ নারী মানসিক আঘাত পেয়েছেন। মতামত প্রকাশে আস্থা হারিয়েছেন ৪২.৭৯ শতাংশ, ২৫.৩৩ শতাংশ নারী ট্রমার শিকার এবং ২৪.৮৯ শতাংশ নারী আত্মমর্যাদা হারিয়েছেন।
অ্যাকশনএইড বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর ফারাহ কবির বলেন, প্রযুক্তির যুগে অনলাইনে নারীর প্রতি সহিংসতা বাড়ছে। বিশেষ করে ১৮ বছরের কম বয়সী কিশোরী ও মেয়েরা বেশি শিকার হয়। সবাই মিলে কাজ করলে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমানো সম্ভব।