July 27, 2024

Warning: Undefined array key "tv_link" in /home/admin/web/timetvusa.com/public_html/wp-content/themes/time-tv/template-parts/header/mobile-topbar.php on line 53
রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আটকে আছে কূটনৈতিক জটিলতায়

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আটকে আছে কূটনৈতিক জটিলতায়

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আটকে আছে কূটনৈতিক জটিলতায়

রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আটকে আছে কূটনৈতিক জটিলতায়

দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে গিয়ে পথেই মৃত্যু হয়েছে অনেক রোহিঙ্গার । ২৫শে আগস্ট ২০১৭ থেকে শুরু করে.মায়ানমারের বৈধতা নাগরিক রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী হতবাক অনিশ্চিত যাত্রায় যারা তাদের জন্মভূমির মায়া ত্যাগ করে নাফ নদীর কাদা পাড়ি দিয়ে বেঁচে ছিল। সেই হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া মুহূর্তগুলোর ছয় বছর পর লাখ লাখ রোহিঙ্গার দিন-রাত কাটছে ছন্দহীন বেদনায় , স্বাভাবিক জীবনে ফেরার স্বপ্ন দীর্ঘায়িত হচ্ছে তাদের। তবে বারবারই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন আটকে আছে কূটনৈতিক জটিলতায়।

তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হওয়ায় বৃহৎ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী এদেশের জন্যও বোঝা হয়ে উঠছে। কূটনৈতিক জটিলতায় আটকে আছে প্রত্যাবাসন। তবে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে ২০১৭ সালের শেষের দিকে বাংলাদেশের সঙ্গে একটি চুক্তি করে মিয়ানমার সরকার। কিন্তু সেই প্রত্যাবাসন এখনো শুরু হয়নি। এতে রোহিঙ্গা সংকট দীর্ঘায়িত হচ্ছে।

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্পের আশেপাশে প্রায়ই খুনের ঘটনা ঘটছে। মাদক ব্যবসা, চোরাচালান, অপহরণ ও চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিভিন্ন মহল সংঘর্ষে লিপ্ত রয়েছে। তারাও  দীর্ঘ অনিশ্চয়তার ভয় পায়। এছাড়া তিন দফায় রেশন কমে যাওয়ায় হতাশা থেকে রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ছে।

বাংলাদেশ সরকার বলছে, হতাশাগ্রস্ত রোহিঙ্গারা বিভিন্ন অপরাধে জড়িত, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতার আশঙ্কাও রয়েছে। স্থানীয় পরিবেশও হুমকির মুখে।

রোহিঙ্গা নেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে ব্যর্থ হওয়ায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বিশেষ করে প্রত্যাবাসনে কোনো অগ্রগতি হচ্ছে না। এ ছাড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনী বরাবরই রোহিঙ্গাদের প্রতি চরম বৈরী আচরণ করে আসছে। ফলে মিয়ানমারের সামরিক শাসনামলে এ সমস্যার সমাধান নিয়ে তারা চিন্তিত। তবে রোহিঙ্গারা তাদের দেশে ফিরতে চায়।

বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের কবে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হবে, সে বিষয়ে স্পষ্ট কোনো উত্তর নেই কারও কাছে। কারণ অনেক দেশেরই তাদের চারপাশে ‘স্বার্থের সংঘাত’ রয়েছে। কক্সবাজার ও আশপাশের জনপদে মানবিক স্থানে আশ্রয় দিতে গিয়ে নিরাপত্তা ঝুঁকি বেড়েছে। আবার বাংলাদেশ সরকারকে রোহিঙ্গাদের আশেপাশে নিরাপত্তা ব্যবস্থার জন্য বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে। এরপরও ঠেকানো যাচ্ছে না অপরাধী চক্র। রোহিঙ্গা ক্যাম্পে অন্তত ১১টি সশস্ত্র গ্রুপ সক্রিয় রয়েছে। নিজেদের মধ্যে দ্বন্দ্ব ছাড়াও মাঝেমধ্যে তারা রোহিঙ্গা মাঝিদের (রোহিঙ্গা নেতাদের) হত্যা করছে। ছয় বছরে ক্যাম্পে ১৭৬ জন নিহত হয়েছে। যার মধ্যে  গত এক বছরেই খুন হয়েছেন ৪৬ জন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সক্রিয় কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে দ্রুত রোহিঙ্গাদের মর্যাদার সঙ্গে ফিরিয়ে নেওয়া প্রয়োজন। এটি করা না হলে ভবিষ্যতে নতুন সংকট তৈরি হবে। ক্যাম্পের আশপাশে অপরাধের পাশাপাশি সন্ত্রাসের ঝুঁকিও বাড়বে।

গত মে মাসে টেকনাফ থেকে রোহিঙ্গাদের প্রতিনিধি দল মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে প্রত্যাবাসনের সহায়ক পরিবেশ ও শর্ত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে যায়। প্রতিনিধি দলের সঙ্গে থাকা রোহিঙ্গা নেতারা  বলেন, মিয়ানমারে অনেক নিপীড়নের শিকার হওয়ায় আমরা বসবাসের জন্য বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি। ছয় বছর কেটে গেছে এখানে। আশ্রয়  শিবিরের অবস্থা দিন দিন খারাপ হচ্ছে। ফলে বাচ্চাদের পড়াতে পারি না। আমরা আমাদের দেশে ফিরে যেতে চাই।

রেশন কমে যাওয়ায় ক্যাম্পের পরিস্থিতি খারাপ হচ্ছে উল্লেখ করে তারা বলেন, দাতা সংস্থার রেশন কমে যাওয়ায় অনেকেই হতাশ হয়ে নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। এটা নিয়ন্ত্রণ করা জরুরী।

তারা আরও  কয়েক মাস আগে প্রত্যাবাসনের জন্য আমাদের মিয়ানমারে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে গিয়ে দেখলাম আমাদের জন্য ক্যাম্প প্রস্তুত করা হয়েছে। আমি মায়ানমারে নির্মিত ক্যাম্পে ফিরতে চাই না, নিজ  বসত ভূমিতে ফিরে গেলে  আমরা যাব। মিয়ানমার সরকারের নির্যাতনের কারণে আমরা শরণার্থী হিসেবে ক্যাম্পে রয়েছি। নিজ জন্মভূমিতে নিজের বসবাসের স্থানে কখনোই আমরা গিয়ে উদ্বাস্তু হতে চাই না। রাখাইনের পরিত্যক্ত  বসত ভূমিতে রোহিঙ্গাদের পুনর্বাসন না করা পর্যন্ত বাংলাদেশের শরণার্থী শিবিরে থাকা কোনো রোহিঙ্গাই ফিরতে রাজি হবে না।

আরও পড়ুন

প্রত্যাবাসনে রাজি হওয়া রোহিঙ্গাদের খাবার দিচ্ছেনা জাতিসংঘ

জাতিসংঘ, এখনই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন চায় না

ওআইসি,রোহিঙ্গাদের সম্মানজনক প্রত্যাবাসন চায়

শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয় অনুসারে, চীনের মধ্যস্থতার মাধ্যমে ২০২২ সালের জানুয়ারিতে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল। প্রত্যাবাসনের জন্য মিয়ানমারে পাঠানো ৮ লাখ রোহিঙ্গার তালিকার মধ্যে পাইলট প্রকল্পের আওতায় প্রথম ধাপে ১ হাজার ১৪০ জন রোহিঙ্গাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল। এর মধ্যে ৭১১ জন রোহিঙ্গাকে প্রত্যাবাসনে মিয়ানমারের সম্মতি পাওয়া গিয়েছিল। অবশিষ্ট ৪২৯ জন রোহিঙ্গার বিষয়ে মিয়ানমারের আপত্তি ছিল। বাংলাদেশ সরকারের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে গত মার্চে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধি দল টেকনাফে আসে ৪২৯ জন রোহিঙ্গা এবং তাদের পরিবারে জন্ম নেওয়া ৫১ শিশুর তথ্য সংগ্রহ করতে। এরপর গত মে মাসে একটি রোহিঙ্গা প্রতিনিধি দল রাখাইনের পরিস্থিতি দেখতে যায়। বর্তমানে উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি ক্যাম্পে নিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা সাড়ে ১২ লাখ। এর মধ্যে আট লাখ এসেছে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর কয়েক মাসে।  রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশের ছয় বছর পরও একজন রোহিঙ্গাকেও মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো যায়নি। এর আগে দুইবার প্রত্যাবাসনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও রোহিঙ্গাদের মায়ানমারের অমানবিক ও অমানুষিক সামরিক বাহিনীর  ভয়ে  অনীহা সৃষ্টির কারণে তা হয়নি।

রোহিঙ্গারা রাখাইনে তাদের বাড়িতে যেতে চায়। তাদের নিরাপত্তা ও নাগরিকত্বের দাবিও রয়েছে। রাখাইনে গড়ে ওঠা মডেল গ্রামে যেতে একেবারেই চায় না তারা। মিয়ানমার সরকার সম্প্রতি কিছু রোহিঙ্গাকে তাদের বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে সম্মত হয়েছে। এখন বাংলাদেশ যত দ্রুত সম্ভব রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া শুরু করতে চাইলেও বারবার আটকে যাচ্ছে কূটনৈতিক জটিলতায়। যদিও রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে প্রত্যাবাসনের বিকল্প নেই

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X