April 29, 2024

Warning: Undefined array key "tv_link" in /home/admin/web/timetvusa.com/public_html/wp-content/themes/time-tv/template-parts/header/mobile-topbar.php on line 53
বদর যুদ্ধঃ শহীদ হওয়া সৌভাগ্যবান সাহাবীগণ

বদর যুদ্ধঃ শহীদ হওয়া সৌভাগ্যবান সাহাবীগণ

বদর যুদ্ধঃ শহীদ হওয়া সৌভাগ্যবান সাহাবীগণ

বদর যুদ্ধঃ শহীদ হওয়া সৌভাগ্যবান সাহাবীগণ

বদর যুদ্ধকে পৃথিবীর ইতিহাসে মুসলিম ও কাফেরদের মধ্যে এক অসম যুদ্ধের পর্যায়ে অবতরণ বলা চলে। সে যুদ্ধে মুসলমানদের বাহ্যিক শক্তি খুবই কম ছিল। তারপরেও শক্তিশালী কাফের বাহিনীর বিরুদ্ধে মুসলমানদের অভূতপূর্ব বিজয়ই বলে দেয় বাহ্যিক এবং লোক দেখানো শক্তি কার্যত আল্লাহর পক্ষের শক্তির কাছে কিছুই নয়। ইসলামের ইতিহাসে ‘বদর যুদ্ধ ‘ একটি অবিস্মরণীয় ঘটনা, আল্লাহর  শক্তির এক অপূর্ব প্রকাশ। আল্লাহ বিজয় দাতা, তার উপর ভরসা রেখে মুসলমানদের এগিয়ে যেতে হবে। এই নিবন্ধটি আমাদেরকে  এই সত্যটি মনে করিয়ে দেওয়ার জন্য লিখা।

১৭ই রমজান। এই দিনে বদর যুদ্ধ সংঘটিত হয়। ইসলামের ইতিহাসে দিনটির বিশেষ গুরুত্ব বিদ্যমান । ২ হিজরির ১৭ রমজানে মদিনার মুসলমান ও মক্কার অমুসলিমদের মধ্যে এই যুদ্ধ সংঘটিত হয়। যুদ্ধের আগে বেশ কয়েকটি সংঘর্ষ হয়েছিল। কিন্তু বদরের যুদ্ধ ছিল দুই পক্ষের মধ্যে প্রথম বড় মাপের যুদ্ধ।

ইসলামের এই প্রথম সামরিক যুদ্ধে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর নেতৃত্বে মুসলিম বাহিনী জয়লাভ করে। এই বিজয় অন্যদের কাছে বার্তা দেয় যে মুসলমানরা আরবে নতুন শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ফলে  জনমানুষের  মহান নেতা হিসেবে হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর অবস্থান সুদৃঢ় হয়।

 প্রেক্ষাপট

মুসলমানরা মক্কা ত্যাগ করলেও মক্কার কুরাইশরা তাদের শত্রুতা ত্যাগ করেনি। মদীনার ইহুদীদের সাথে ষড়যন্ত্র করে তারা মদীনায় আক্রমণ সংগঠিত করতে থাকে। বদর যুদ্ধ হজরত মুহাম্মদ (সা.) নিজেই পরিচালনা করেছিলেন। আল আরিশ পাহাড়ের পাদদেশে মুসলিম বাহিনীর ক্যাম্প স্থাপন করা হয়। তাই পানির কূপগুলো তাদের নিয়ন্ত্রণে ছিল। আর রাসুল (সাঃ) সৈন্য সমাবেশের জন্য এমন একটি স্থান বেছে নিয়েছিলেন, যেখানে সূর্যোদয়ের পর যুদ্ধে কোনো মুসলিম সৈন্যের চোখে সূর্য পড়বে না।

প্রাচীন আরব প্রথা অনুযায়ী প্রথমে মল্লযুদ্ধ  হয়। অমুসলিমদের বাহিনী ছিল এক হাজার। আর সেখানে একশত ঘোড়া, ছয়শত বর্ম ও অসংখ্য উট ছিল। অমুসলিমদের সেনাপতি ছিলেন উতবা ইবনে রাবিয়া। যুদ্ধে ৭০ জন অমুসলিম নিহত হয় এবং ৭০ জন বন্দী হয়।

মুসলিম বাহিনীর শক্তি ছিল ৩১৩ জন। মুহাজির ছিলেন ৮২, বাকিরা আনসার। আওস  গোত্রের   ৬১  জন এবং খাজরাজ গোত্রের ১৭০ জন। মুসলমানদের উট ও ঘোড়ার সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৭০ ও ২টি। যুদ্ধে ১৪ জন মুসলিম সৈন্য শহীদ হন।

এই যুদ্ধের একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা ছিল নবী (সা.)-এর প্রধান শত্রু আবু জাহেলকে হত্যা করা। এ প্রসঙ্গে দুই কিশোরের অসম সাহসিকতার বীরত্বগাথা রয়েছে।

কোরআনে আছে, যারা আক্রান্ত হয়েছে তাদের যুদ্ধের অনুমতি দেওয়া হলো, কারণ তাদের প্রতি অত্যাচার করা হয়েছে। আল্লাহ তাদের সাহায্য করতে অবশ্যই সক্ষম। (সুরা হজ, আয়াত: ৩৯)

পবিত্র কোরআনে আরও বলা হয়েছে, ‘আর যারা তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে, তাদের বিরুদ্ধে আল্লাহর পথে যুদ্ধ কর। তবে সীমালঙ্ঘন করো না। আল্লাহ সীমালংঘনকারীদের পছন্দ করেন না।’ (সূরা বাকারা, আয়াত ১৯০)

১৭ রমজান ১৪৪৪ হিজরি বদরের  সেই ঐতিহাসিক দিন। ইসলামের ইতিহাসে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বদরের যুদ্ধ দ্বিতীয় হিজরি মাসের রমজানের এই দিনে সংঘটিত হয়। এই ঐতিহাসিক যুদ্ধে মুসলমানদের বর্ণাঢ্য বিজয় এবং কাফেররা শোচনীয়ভাবে পরাজিত হয়।

বদর যুদ্ধ ইসলামের ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়। কারণ এই যুদ্ধে ৩১৩ জন মুসলমানের একটি নিরস্ত্র দল তৎকালীন যুদ্ধে দক্ষ সুসজ্জিত কাফির বাহিনীর সাথে অসম যুদ্ধে লিপ্ত হয় এবং ইসলামের বিজয় ছিনিয়ে আনে।

এ সম্পর্কে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেছেন, “বদরের যুদ্ধে যখন তোমরা হীনবল ছিলে, আল্লাহ তো তোমাদের সাহায্য করেছিলেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহকে ভয় করো, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।” (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং- ১২৩)।

বদর যুদ্ধের প্রাক্কালে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আজ যে ব্যক্তি সওয়াবের আশায় ধৈর্য্য ধরে কাফেরদের সাথে যুদ্ধ করবে, সে শহীদ হবে এবং আল্লাহ তাকে জান্নাত দান করবেন।” ।

এ ধরনের আশ্বাস পেয়ে অল্প সংখ্যক মুসলমান কাফেরদের বিরুদ্ধে ন্যায়-অন্যায়ের যুদ্ধে লিপ্ত হয়। বদর যুদ্ধে ৭০ জন কাফির নিহত ও ৭০ জন বন্দী হয়। অপরদিকে ১৪ জন মুসলমান শাহাদাতের গৌরব অর্জন করেন। তাদের মধ্যে ছয়জন ছিলেন মুহাজির এবং আটজন আনসার।

মুহাজির ছয়জন সাহাবী হলেন

১. হযরত মাহজা ইবন সালিহ (রা.)

২. হযরত উবায়দাহ ইবন হারিস (রা.)

৩. হযরত ওমায়ব ইবন আবি ওয়াককাস (রা.)

৪. হযরত আকিল ইবন বুকায়র (রা.)

৫. হযরত যুশ শুমালাইন ওমায়র ইবন আবদ আমর ইবন নাদলাহ জাঈ (রা.)

৬. হযরত আম্মার ইবন যিয়াদ ইবন সাকান ইবন রাফে (রা.)

আনসার আটজন সাহাবী হলেন

১. হযরত সাদ ইবন খায়সামাহ (রা.)

২. হযরত ইবন আবদিল মুনজির ইবন যুবায়ের (রা.)

৩. হযরত ইয়াজিদ ইবন হারিস (রা.)

৪. হযরত ওমায়র ইবন হাম্মাম (রা.)

৫. হযরত রাফে ইবন মুয়াল্লা (রা.)

৬. হযরত হারিস আনসারি আউসি নাজ্জারি (রা.)

৭. হজরত আউস ইবন হারিস ইবন আফরা (রা.)

৮. হযরত মুআওয়িজ ইবন আফরা (রা.)

এই যুদ্ধে মুসলমানদের সাথে ছিল মাত্র সত্তরটি উট। বিখ্যাত ইতিহাসবেত্তা ইবনে ইসহাক বলেন, মুসলিম সেনাবাহিনীতে মাত্র দুজন অশ্বারোহী ছিল। একজন হলেন মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ। তার ঘোড়ার নাম ছিল আইজা,মতান্তরে সাবহা। দ্বিতীয়জন হলেন যুবায়ির ইবনে আওআম।। তার ঘোড়ার নাম ছিল ইয়াসুব। মুসলিম বাহিনীর পতাকা ছিল মুসআব ইবনে উমায়েরের হাতে। এ ছাড়া মুহাজির ও আনসারের দুটি ভিন্ন পতাকা ছিল। মুহাজিরদের পতাকাবাহক ছিলেন আলী ইবনে আবু তালিব (রা.) এবং আনসারদের পতাকাবাহক ছিলেন সাদ ইবনে উবাদা (রা.)। আবু বকর সিদ্দিক (রা.) ছিলেন মুহাজিরদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা এবং সাদ ইবনে মুআয (রা.) ছিলেন আনসারদের মধ্যে প্রধান উপদেষ্টা।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published.

    X