একজন মুসলিম বর্তমান ইউক্রেনের নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী
রাশিয়ার যইউক্রেন যুদ্ধ একটি অনিশ্চয়তার দিকে এগোচ্ছে। আর সেদিকে লক্ষ্য রেখেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট তার প্রতিরক্ষা বিভাগকে নতুন আঙ্গিকে সাজানোর লক্ষ্যে ; একজন সৎ দক্ষ এবং যোগ্যতা সম্পন্ন দায়িত্বশীল খুজছিলেন । পেয়েও গেলেন দক্ষতা সম্পন্ন যোগ্যতায় সেরা সাহসী এই তাতার সুন্নি মুসলিমকে তার নাম রুস্তম উমেরভ ।
রাশিয়ার সঙ্গে দেড় বছরেরও বেশি সময় যুদ্ধের পর ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী নিয়োগ করছেন। এই পদের জন্য তিনি দেশটির অন্যতম মুসলিম রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারী রুস্তেম উমেরভকে বেছে নেন। তার নিয়োগের পর, জেলেনস্কি বলেছিলেন যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ে তার একটি নতুন দৃষ্টিভঙ্গি দরকার।
এর আগে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রেজনিকভের বিরুদ্ধে ঘুষের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ওঠে। রবিবার রাতে একটি ভিডিও বার্তায়, জেলেনস্কি বলেছেন যে তিনি প্রতিরক্ষামন্ত্রীর পদ থেকে রেজনিকভকে সরিয়ে দিয়েছেন। জেলেনস্কি বলেন, “রাশিয়ার বিরুদ্ধে ৫৫০ দিনেরও বেশি সময় ধরে চলা যুদ্ধের সময় রেজনিকভ প্রতিরক্ষা মন্ত্রী ছিলেন।” ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেছেন, “আমি উমেরভকে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী করেছি। কারণ এখন যুদ্ধের জন্য একটি নতুন সাজানো প্রতিরক্ষা প্রয়োজন। সেনাবাহিনী ও সমাজের সঙ্গে নতুন যোগাযোগের প্রয়োজন।
ইউক্রেনের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ওলেক্সি রেজনিকভকে বরখাস্ত করেছেন প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি রুস্তম উমেরভকে নতুন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মনোনীত করেন। রুস্তম এতদিন ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি তহবিলের পরিচালক হিসাবে কাজ করেছেন।
রবিবার রাতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে জেলেনস্কি এসব সিদ্ধান্তের কথা জানান। তিনি বলেন, আমি মনে করি প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় পুনর্গঠনের প্রয়োজন আছে।
যুদ্ধের এই সময়ে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী হিসাবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত এই রুস্তম উমেরভ কে?
নির্বাসিত একজন তাতার মুসলিম রুস্তমের বয়স এখন ৪১ বছর। তিনি ক্রিমিয়ান তাতার বংশোদ্ভূত। এই তাতাররা সুন্নি মুসলমান। তাদের পূর্বপুরুষরা ক্রিমিয়ান উপদ্বীপে বাস করতেন। রাশিয়া ২০১৪ সালে ইউক্রেন থেকে উপদ্বীপটি দখল করে নেয়।
রুস্তমের পূর্বপুরুষরা একসময় ক্রিমিয়ায় বসবাস করতেন। যাইহোক, ১৯৪৪ সালে, সোভিয়েত ইউনিয়নের তৎকালীন নেতা জোসেফ স্ট্যালিনের নির্দেশে ১৮০,০০০ তাতারকে ক্রিমিয়া থেকে উজবেকিস্তানে নির্বাসিত করা হয়েছিল। ফলে রুস্তমের পরিবারকেও চলে যেতে হয়।
রুস্তমের জন্ম উজবেকিস্তানের সমরকন্দে। পরবর্তীতে, ১৯৮০ -এর দশকের শেষের দিকে এবং ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে, তাতারদের ক্রিমিয়াতে পুনর্বাসিত করা হয়েছিল। এরপর রুস্তম ও তার পরিবার ক্রিমিয়ায় ফিরে আসেন।
রুস্তম একটি অভিজাত আবাসিক স্কুলে পড়াশোনা করেন। তার মোট পাঁচটি ভাষা আছে। তারা ইউক্রেনীয়, তাতার, রাশিয়ান, তুর্কি এবং ইংরেজী।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্ট অফ স্টেটের ফিউচার লিডারস এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রামের অংশ হিসাবে ১৯৯৮ সালে তাকে পড়াশোনা করার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পাঠানো হয়েছিল। এরপর তিনি ইউরোপীয় যুব সংসদে যোগ দেন।
রুস্তম তার কর্মজীবন শুরু করেন বেসরকারি খাতে কাজ করে। ২০০৪ সালে, তিনি ইউক্রেনের একটি শীর্ষস্থানীয় টেলিকমিউনিকেশন কোম্পানিতে যোগ দেন।
২০১৩ সালে, রুস্তম ASTEM নামে তার নিজস্ব বিনিয়োগ ফার্ম খোলেন। তিনি অর্থনীতিতে স্নাতক এবং ফিন্যান্সে স্নাতকোত্তর করেছেন।
পরের বছর যখন রাশিয়া ক্রিমিয়াকে অধিভুক্ত করে, তখন রুস্তম ক্রিমিয়াতে তাতারদের প্রতিনিধিত্বকারী কর্তৃপক্ষ ক্রিমিয়ান তাতার মজলিসের নেতা মুস্তাফা জেমিরেভের উপদেষ্টা ছিলেন।
দুর্নীতিবিরোধী আইন প্রণেতা , ২০২০ সাল থেকে রুস্তম উমেরভ ইউক্রেন সরকারের একটি টাস্ক ফোর্সের সদস্য। এই টাস্কফোর্স ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার দখলদারি শেষ করার কৌশল নিয়ে কাজ করছে।
পরবর্তীতে ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে, রুস্তম ইউক্রেনের প্রো-ইউরোপিয়ান হলোস পার্টির একজন আইন প্রণেতা ছিলেন। সে সময় তিনি দেশের রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি তহবিলের প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হন। এই সরকারি সংস্থা বেসরকারি বিনিয়োগকারীদের কাছে রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি বিক্রির তদারকি করে।
রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি তহবিলে দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেখান থেকে কোম্পানির ভাবমূর্তি বাঁচাতে বড় ভূমিকা রাখেন রুস্তম। রাষ্ট্রীয় সম্পত্তি তহবিল যুদ্ধের সময়ও তাঁর অধীনে রেকর্ড অগ্রগতি করেছিল।
আরও পড়তে
কর্ণাটক বিধানসভা পেল প্রথম মুসলিম স্পিকার
যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের প্রথম মুসলিম বিচারক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নুসরাত
দক্ষ মধ্যস্থতাকারী রুস্তমের কাছের লোকেরা তাকে একজন উজ্জ্বল মধ্যস্থতাকারী বলে। গত বছর যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর ইউক্রেনের একটি প্রতিনিধিদল মার্চে রাশিয়ার সঙ্গে আলোচনা করে। রুস্তম ওই দলের সদস্য ছিলেন।
এ ছাড়া রুস্তম বিভিন্ন বিষয়ে মধ্যস্থতায় মুখ্য ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি কৃষ্ণ সাগরের মধ্য দিয়ে ইউক্রেনীয় শস্যবাহী জাহাজ চলাচল অব্যাহত রাখার জন্য আলোচনায় অংশ নেন। ইউক্রেন ও রাশিয়ার মধ্যে বন্দি বিনিময় আলোচনায়ও তিনি ভূমিকা রেখেছিলেন। এছাড়াও রুস্তম ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনীর একটি আধাসামরিক গোষ্ঠী আজভ ব্যাটালিয়নের যোদ্ধাদের মুক্তির বিষয়েও আলোচনা করেছিলেন, যারা গত বছর মারিউপোল শহরে আটকা পড়েছিল।
ভলোদিমির জেলেনস্কি গত মে মাসে সৌদি আরব সফর করেন। তখন ইউক্রেনের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে ছিলেন রুস্তম। এর আগে গত মার্চে জেলেনস্কির স্ত্রী ওলেনা জেলেনস্কি সংযুক্ত আরব আমিরাতে গিয়েছিলেন। সেদেশে তার সঙ্গীদের মধ্যে রুস্তমের ছিলেন অন্যতম।
