ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? মহামারীর ভয়
ডেঙ্গুতে মৃত্যু ৮০০ জন ছাড়িয়ে গেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই। আগের সব রেকর্ড ভেঙে গেছে অনেক আগেই। একের পর এক নতুন রেকর্ড গড়ছে বাংলাদেশ । মশাবাহিত রোগ ‘ডেঙ্গু’ নতুন রেকর্ড গড়ার নিরিখে কোথায় ইতিহাস গড়ছে সেই প্রশ্নের উত্তর কারোরই জানা নেই। তাদের মতে, ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? তাদের আশঙ্কা ‘ডেঙ্গু’ মহামারীর দিকে যাচ্ছে।
দেখা গেছে, ২০০০ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে সবচেয়ে বেশি ২৮১ জনের মৃত্যু হয়েছে। চলতি বছরের আগস্টে সেখানে মারা যান ৩৪২ জন। কিন্তু সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিন আগস্টের ভয়াবহতাকে ছাড়িয়ে গেছে ।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, আগস্টের প্রথম ১৫ দিনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা ছিল ৩৮ হাজার ৪৩ জন। তবে সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা বেড়েছে ১১৩ জন। অগাস্ট অর্থাৎ ৩৮ হাজার ১৫৬ জন রোগী শনাক্ত হয়েছে। আগস্টের তুলনায় সেপ্টেম্বরের প্রথম ১৫ দিনে মৃত্যুর সংখ্যাও বেশি ছিল। আগস্টের প্রথম ১৫ দিনে ১৭৫ জন ডেঙ্গুতে মারা যায়, সেপ্টেম্বরে ১৯৭ জন মারা যায়। শনিবার আরও ১৪ জনের মৃত্যুর খবর জানিয়েছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এই মাসে আর ১৪ দিন বাকি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এই দিনে ডেঙ্গু কেমন হবে তা কল্পনাতীত।
দেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ শনাক্ত হওয়ার পর থেকে প্রায় প্রতিবছর সেপ্টেম্বরে ডেঙ্গুর প্রকোপ সবচেয়ে বেশি। ফলে এই সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ ডেঙ্গু পরিস্থিতি কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে তা নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন চিকিৎসকরা।
পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে?
জাহাঙ্গীনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ও কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বলেন, অন্যান্য সময়ের তুলনায় এবার রোগীর সংখ্যা উদ্বেগজনক। তাই আগামী দিনে সতর্ক না হলে পরিস্থিতি খুবই ভয়াবহ হতে পারে। তিনি বলেন, ‘হটস্পট ব্যবস্থার ব্যর্থতার কারণে ডেঙ্গুর প্রকোপ নিয়ন্ত্রণে আসছে না। যেসব এলাকায় বেশি ডেঙ্গু রোগী আসে সেখানে সক্রিয় ভূমিকা নিতে হবে। প্রয়োজনে উড়ন্ত মশা মারতে ক্র্যাশ প্রোগ্রাম চালাতে হবে । তাহলে এক রোগী থেকে অন্য রোগীর সংক্রমণ হওয়ার আশঙ্কা থাকে না। এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসনকে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। এটি না হলে সংক্রমণ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে না। তিনি আরও বলেন, ঢাকার সব এলাকায় ডেঙ্গু রোগীর হার সমান নয়। যেসব এলাকায় ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি সেখানে দ্রুত মশা নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা নিতে হবে। মাইকিং, জনসচেতনতা, ওষুধ ছিটানো- সবকিছুই একসঙ্গে করতে হবে। তা করতে না পারায় এখন পর্যন্ত জ্যামিতিক হারে বাড়ছে ডেঙ্গু।
কেন এমন অবস্থা? জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা: লেলিন চৌধুরী বলেন, ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে ডেঙ্গু ছড়াবে। ঢাকা এবং ঢাকার বাইরে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করতে সাধারণ জনগণকে সম্পৃক্ত করে একটি সমন্বিত অভিযান প্রয়োজন। সেই পরিকল্পনা করা হয়নি, শুরুও হয়নি। বর্তমান কীটনাশক কতটা কার্যকর তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। সব মিলিয়ে একটা বিষয় পরিষ্কার যে, ডেঙ্গুর এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে ডেঙ্গুর বাহক এডিস মশা দমন বা নির্মূলে ব্যর্থতার কারণে।
আরও জানতে
ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশে
ডেঙ্গু প্রতিরোধে করণীয় ; ডেঙ্গুর বংশবৃদ্ধি ধ্বংস করতে না পারলে এডিস মশা নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না। ডেঙ্গু প্রতিরোধে আমাদের সবাইকে সম্পৃক্ত হতে হবে। প্রতিটি বাড়ির মালিককে নিশ্চিত করতে হবে যে তার বাড়ির কোথাও কোনও পানি জমে না। আমরা যদি প্রত্যেকের অবস্থান থেকে এটি নিশ্চিত করতে পারি, তাহলে এডিস মশার বিস্তার কমবে। মশার বংশবৃদ্ধি কমাতে পারলেই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। অন্যথায় এটি নিয়ন্ত্রণ করা বেশ কঠিন।
মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংস করতে হবে ; কারণ এই মশা জনগোষ্ঠীতে প্রবেশ করলে তা পুরোপুরি নির্মূল করা যায় না। যেহেতু সামনে আরও নগরায়ন হবে, আরও উন্নয়ন হবে, তাই আমাদের প্রথমেই মশার প্রজনন ক্ষেত্র ধ্বংসের কথা মাথায় রাখতে হবে। এ ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয় অংশগ্রহণ অপরিহার্য।
‘ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ করা যায়। দুই শতাব্দীরও বেশি সময় ধরে আমাদের দেশে এটি নিয়ন্ত্রণে কোনো কাজ হয়নি। ২০০০ সালে দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব দেখা দিলেও তা নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণে পর্যাপ্ত বরাদ্দ দেওয়ার পাশাপাশি যথাযথ কর্মপরিকল্পনা থাকতে হবে।
ডেঙ্গুর পরিস্থিতি সম্পর্কে অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। এক শ্রেণির মানুষ এখনও ভুল ধারণায় আটকে আছে। রাজধানী ঢাকায় যারা থাকেন তাদের মধ্যে যারা ছয় বা সাত তলায় থাকেন তাদের ধারণা ভিন্ন। বিশেষ করে যারা উপরের তলায় থাকেন তারা মনে করেন উপরের তলায় মশা আসে না।
1 Comment