May 16, 2024

Warning: Undefined array key "tv_link" in /home/admin/web/timetvusa.com/public_html/wp-content/themes/time-tv/template-parts/header/mobile-topbar.php on line 53
ইতেকাফ

ইতেকাফ

ইতেকাফ

ইতেকাফ

রোজাদার মুমিন মুসলমানরা ইতিকাফের প্রস্তুতি নিয়ে ২০ রমজানের ইফতারের ( সূর্যাস্তের ) আগে মসজিদে হাজির হবেন।

 কিন্তু রোজাদার কেন ইতিকাফে বসবে?

রমজানের শেষ দশ দিনের একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত হল ইতিকাফ। লাইলাতুল কদর ও আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের জন্য এ দশকে ইতিকাফ অপরিহার্য। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মৃত্যু পর্যন্ত ইতিকাফ করতেন।

ইতিকাফের পরিচিতি

ইতিকাফের অর্থ হল আঁকড়ে ধরা, অর্থাৎ উদ্দেশ্যকে দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরা এবং তার সাথে মনকে সংযুক্ত রাখা। ইসলামী শরীয়তে, ই’কাফ হল আল্লাহ তায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য মসজিদে অবস্থান করা।

ইতিকাফে বসার কারণ

মুসলিম উম্মাহ লাইলাতুল কদর অর্জনের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য রমজানের শেষ দশ দিনে ইতিকাফে বসে। কারণ, পূর্ববর্তী সকল নবী ও তাদের উম্মত শত বছর/হাজার বছরের হায়াত (জীবন) পেয়েছিলেন। তারা বছরের পর বছর আল্লাহর ইবাদত করতেন। সেই হিসেবে আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে অল্প আয়ু দান করেছেন। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা উম্মাহকে মহিমান্বিত লাইলাতুল কদর দান করেছেন মুহাম্মাদদের জন্য। এই লাইলাতুল কদর অর্থাৎ একটি রাতকে কুরআনে হাজার মাসের চেয়েও উত্তম ঘোষণা করা হয়েছে। রমজানের শেষ দশকের যে কোনো রাতকে ‘লাইলাতুল কদর’ হিসেবে গণ্য করা হয়। ইতিকাফে বসা সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন-

‘ আর স্মরণ কর, যখন আমি কাবাকে মানুষের জন্য মিলনকেন্দ্র ও নিরাপদ স্থান বানালাম এবং (আদেশ দিলাম যে,) ‘তোমরা মাকামে ইবরাহীমকে সালাতের স্থানরূপে গ্রহণ কর’। আর আমি ইবরাহীম ও ইসমাঈলকে দায়িত্ব দিয়েছিলাম যে, ‘তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ‘ইতিকাফকারী ও রুকূকারী-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র কর’।  (সূরা বাকারা, আয়াত: ১২৫)।

ইতিকাফ তিন প্রকার।

১. সুন্নাহ: রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করা।

২. নফলঃ যে কোন সময় ইতিকাফ করা।

৩. ওয়াজিব: মানাতে ইতিকাফ।

রমজানের শেষ ১০ দিনে ইতিকাফ

রমজানের শেষ ১০ দিনের ইতিকাফ হল সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ কিফায়া। যদি একজন ব্যক্তি ইতিকাফ করে তবে তা সমগ্র সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে  আদায় হয়ে যাবে । আর কেউ ইতিকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবে।

রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদা কিফায়া। একজন ইতিকাফ করলে পুরো মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে এটি আদায় হয়ে যাবে। আর কেউই ইতিকাফ না করলে সবাই গুনাহগার হবে।

শেষ ১০ দিনের এই ইতিকাফের গুরুত্ব অপরিসীম। নবী (সা.) ইতিকাফ করেছেন, সাহাবিরাও করেছেন, হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, ‘ইন্তেকাল পর্যন্ত রাসুলুল্লাহ (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, এরপর তাঁর স্ত্রীরাও ইতিকাফ করেছেন।’ (মুসলিম, হাদিস: ২০০৬)

হজরত আয়েশা (রা.) বর্ণনা করেছেন যে রাসুলুল্লাহ (সা.) এরশাদ করেছেন, ‘যখন রমজানের শেষ ১০ রাত আসত, তখন নবী করিম (সা.) বেশি ইবাদতের প্রস্তুতি নিতেন এবং রাত জেগে থাকতেন। আর পরিবার-পরিজনকেও তিনি জাগিয়ে দিতেন।’ (বুখারি, হাদিস: ১০৫৩)।

রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘আমি কদরের রাতের সন্ধানে প্রথম ১০ দিন ইতিকাফ করলাম। এরপর ইতিকাফ করলাম মধ্যবর্তী ১০ দিন। এরপর অহির মাধ্যমে আমাকে জানানো হলো যে তা শেষ ১০ দিনে। সুতরাং তোমাদের যে ইতিকাফ পছন্দ করবে, সে যেন ইতিকাফ করে।’ এরপর মানুষ তাঁর সঙ্গে ইতিকাফে শরিক হয়। (মুসলিম, হাদিস: ১৯৯৪)

ইতিকাফের মাসাইল

১.  ইতিকাফের উদ্দেশ্যে ২০ রমজানে সূর্যাস্তের আগে অর্থাৎ ইফতারের আগে মুমিনদের জন্য মসজিদে পৌঁছানো বাধ্যতামূলক।

৩. ইতিকাফের নিয়ত করা আবশ্যক। একসাথে দশ দিন নিয়ত না করলে সুন্নতে ইতিকাফ হবে না, বরং নফল হয়ে যাবে।

৩. মাসনুন ইতিকাফের নিয়ত করলে অবশ্যই তা পূর্ণ করতে হবে। কারণ  ছাড়া তা ভাঙা জায়েয নয়।

৪. ইতিকাফকারীর জন্য ইতিকাফ অবস্থায় স্ত্রীর সাথে সহবাস করা হারাম। আল্লাহ বলেনঃ

আর ইতিকাফ অবস্থায় যতক্ষণ মসজিদে থাকবেন ততক্ষণ নারীদের সাথে মিশবেন না। এটা আল্লাহর নির্ধারিত সীমা।’ (সূরা বাকারা: আয়াত ১৮৭ ) এমনকি স্ত্রীকে চুম্বন করা এবং আলিঙ্গন করাও জায়েজ নয়।

৫.মাসনুন ইতেকাফ শুরু করার পর কোনো ব্যক্তির যদি দু’একদিন ভঙ্গ হয়ে যায়, তখন ভঙ্গ দিনের ইতেকাফ পরে কাজা করে নিতে হবে।

৬. পারিশ্রমিক বা ইফতার-সেহরির বিনিময়ে ইতিকাফ করা জায়েয নয়।

৭.  ইতিকাফের সময় কুরআন তেলাওয়াত করা, তাসবীহ করা, ধর্মীয় বিষয়ে আলোচনা করা, জ্ঞান অর্জন করা এবং অন্যকে শিক্ষা দেওয়া ভাল এবং বৈধ।

৯. ইতিকাফের স্থানকে ব্যবসার স্থান বানানো মাকরূহ। ওয়াজিব ইতেকাফ যদি  বাতিল হয়ে যায় তবে এর কাজা আদায় করা ওয়াজিব। ইতেকাফকারী নিজের কারণে ফাসিদ/বাতিল হোক অথবা হায়েজ (ঋতুস্রাব) বা নিফাসের (রক্তস্রাব) কারণে বাতিল হোক। পরবর্তীতে তা আদায় করা ওয়াজিব।

১০.ঋতুস্রাব শুরু হয়ে যাওয়ার কারণে এতেকাফ  ভঙ্গ হলে  পরে শুধু  একদিনের এতেকাফ কাজ করবে।

১১. মহিলারা তাদের ঘরে ইতিকাফের স্থানটি একটি কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখবে, যাতে বেগানা পুরুষসহ যে কেউ আসলে ইতেকাফের স্থান প্রবেশ  না করতে পারে ১২. এতেকাফ   অবস্থায় সব রকমের গোসল করা যাবে।   তবে গোসলে একেবারেই কম সময়ে ব্যবহার করবে।  মনে করুন  ওযু করতে যতটুক সময় লাগে পারলে সেই পরিমাণ   সময় ব্যয় করে  গোসল করে ফেলবে।  আর ফরজ গোসল হলে  ভালোভাবে গোসল করবে।

ইতিকাফ সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য

রমজানে ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা শর্ত। রমজান ছাড়া অন্য সময়ে ইতিকাফের জন্য রোজা রাখা আবশ্যক নয়। রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করা। ন্যূনতম শেষ তিন দিন ইতেকাফ করা। রমজানের বাইরে ইতিকাফের কোনো নির্দিষ্ট সময় নেই।

ইতিকাফ বৈধ হওয়ার শর্ত

১. মুসলিম হওয়া;

২. প্রাপ্তবয়স্ক হতে হবে ; ইতিকাফের জন্য প্রাপ্তবয়স্ক হওয়া শর্ত নয়, তবে জ্ঞানী নাবালকের জন্যও ইতিকাফ বৈধ।

৩. জানাবাত (অপবিত্রতা), হায়েজ (ঋতুস্রাব) এবং নিফাস থেকে পবিত্রতা।

৪. মহিলাদের ইতিকাফের জন্য স্বামীর অনুমতির শর্ত। স্বামী অনুমতি দেওয়ার পর ইতেকাফ থেকে বারণ বা বিরত রাখা যাবে না।

ইতিকাফের স্থান

১. ইতিকাফ একটি মসজিদে করা হয় যেখানে জামাতে নামাজ অনুষ্ঠিত হয়।

২. ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম স্থান হল মসজিদুল হারাম (বায়তুল্লাহ)।

৩. তারপর মসজিদে নববী (মদিনা)।

৪. তারপর বায়তুল মুকাদ্দাস (মসজিদ আকসা)।

৫. যেকোনো মসজিদ।

৬. যে মসজিদে মুসল্লির সংখ্যা বেশি।

৭. মহিলারা তাদের বাড়ির একটি নির্দিষ্ট স্থানে ইতিকাফ করবে। মহিলাদের জন্য মসজিদে ইতিকাফ  নয়।

ইতিকাফের আদব

১. ইতিকাফের সময় ভালো কথা ছাড়া অপ্রয়োজনীয় কথা বলবেন না। ইতিকাফের জন্য সর্বোত্তম মসজিদ নির্ধারণ করা।

২. ইতিকাফে থাকা অবস্থায় কোরআন তেলাওয়াত ও অধ্যয়ন, হাদিস অধ্যয়ন, ধর্মীয় জ্ঞান শেখা ও শেখানো।

সর্বোপরি পার্থিব কাজকর্ম থেকে বিরত থাকা এবং আল্লাহর নৈকট্য লাভ ও ইবাদতে মশগুল থাকা ইতিকাফের আদব।

আল্লাহ তায়ালা আমাদের সকল মুসলিম উম্মাহকে ইতিকাফের বিষয়গুলো যথাযথভাবে পালন  করে লাইলাতুল কদর পাওয়ার তাওফিক দান করুন। আমীন।

    Leave a Reply

    Your email address will not be published.

    X