৪ মাস গাজা সংঘাত গাজায় ইসরায়েলি সহিংসতা থামছে না:মৃতের সংখ্যা ২৭৫০০ ছাড়িয়েছে
অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি তাণ্ডব থামছে না। ইসরায়েলি সেনারা চার মাস ধরে সেখানে নিরীহ মানুষের ওপর হামলা চালিয়ে যাচ্ছে। গত ৭ অক্টোবর ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাস ইসরায়েলের সীমান্তে ঢুকে হামলা চালায়। সেই হামলার প্রতিশোধ হিসেবে গাজায় ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হচ্ছে। ইসরায়েলি বাহিনীর চলমান হামলায় এ পর্যন্ত ২৭,৫০০ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে। আল জাজিরার এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার, গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে যে 7 অক্টোবর থেকে ইসরায়েলের হামলায়২৭৫৮৫ জন নিহত হয়েছে। আহত হয়েছেন ৬৬ হাজার ৯৭৮ ফিলিস্তিনি। মৃতদের মধ্যে প্রায় ১১,৫০০ শিশু এবং ৮০০০ মহিলা রয়েছে। অন্যদিকে, অধিকৃত পশ্চিম তীরে ইসরায়েলি হামলায় প্রায় ৮০০ মানুষ নিহত হয়েছে।
গাজা কর্তৃপক্ষ আজ জানিয়েছে যে গত 24 ঘন্টায় গাজা উপত্যকায় ১২৭ জন নিহত হয়েছে। এ সময় দক্ষিণে খান ইউনিসে সবচেয়ে ভয়াবহ হামলা হয়। সেখানে রাতভর বোমাবাজি ও স্থল হামলা চলছে। স্থানীয় ফিলিস্তিনি ও চিকিৎসাকর্মীরা জানিয়েছেন, খান ইউনিসের নাসের ও আল-আমাল হাসপাতাল ঘিরে রেখেছে ইসরায়েলি ট্যাঙ্ক। হাসপাতাল চত্বরেও বোমা ছোড়া হয়।
রাফাও আজ হামলার শিকার হয়েছে। এতে সেখানে আরও ভয়াবহ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে আশ্রয় নেওয়া লাখ লাখ মানুষের মধ্যে রোগ ছড়ানোর আশঙ্কা রয়েছে। উত্তর গাজা শহরে আজকের হামলায় বেশ কয়েকটি ভবন ধ্বংস হয়েছে।
শিক্ষা ব্যবস্থাও ভেঙে পড়েছে
গাজার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গাজা উপত্যকায় চলমান সংঘাতে ৪,৮৯৫ শিক্ষার্থী নিহত হয়েছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়েছে ৬ লাখ ২০ হাজার মানুষ। একই সময়ে গাজায় ২৩৯ জন শিক্ষক নিহত হয়েছেন। জাতিসংঘের ফিলিস্তিনি শরণার্থী সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ জানিয়েছে, গত চার মাসে গাজায় তাদের ৬৫টি স্কুল এবং ২৮৬টি পাবলিক স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
ইসরায়েলি হামলায় গাজার অবকাঠামোও ধ্বংস হয়ে গেছে। জাতিসংঘ এবং গাজা কর্তৃপক্ষের দেওয়া তথ্য অনুসারে, ৭ অক্টোবর থেকে ইসরায়েলি হামলায় উপত্যকায় ৩৬০,০০০ এরও বেশি বাড়ি ধ্বংস হয়েছে। ৩৫ টি হাসপাতালের মধ্যে শুধুমাত্র 13টি আংশিকভাবে চালু রয়েছে। গাজার ২২১টি মসজিদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। প্রায় ১৯মিলিয়ন মানুষ তাদের জীবন বাঁচাতে তাদের ঘর ছেড়েছে।
ইসরায়েলি হামলা ও অবরোধের ফলে মানুষ খাদ্য, পানি, জ্বালানি ও চিকিৎসা সামগ্রীর অভাবের জন্য চরম সংকটে পড়েছে। জাতিসংঘের মানবিক সহায়তা সংস্থা ওসিএইচএ জানিয়েছে যে জানুয়ারিতে গাজায় যে ত্রাণ সহায়তার পরিকল্পনা করেছিল তার ৬৬ শতাংশ ইসরায়েলের অবরোধের কারণে পূরণ হয়নি। এতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে গাজার শিশুরা।
OCHA এর মতে, গাজায় শিশুদের মধ্যে ডায়রিয়ার ঘটনা বাড়ছে। সন্তানদের অভিভাবকরাও সংকটে পড়েছেন। সংকটের কারণে তারা শিশুর জরুরি ফর্মুলা দুধ দিতে পারছেন না।
ফিলিস্তিনি শরণার্থীদের জন্য জাতিসংঘের সাহায্য সংস্থা ইউএনআরডব্লিউএ বলেছে, সেখানে কিছুই অবশিষ্ট নেই। সংস্থাটির পরিচালক টমাস হোয়াইট বলেছেন, ইসরায়েলি বাহিনী জাতিসংঘের খাদ্য সহায়তা বহনকারী ট্রাকে হামলা চালায়।
গাজার হামাস-নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) জানিয়েছে যে অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলি বাহিনী ও হামাসের মধ্যে লড়াই শুরু হওয়ার পর থেকে ইসরায়েলি বাহিনীর হাতে ২৭,৫৮৫ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছে।
মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে জানানো হয়েছে যে গত 24 ঘন্টায় ১০৭ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া সংঘর্ষের শুরু থেকে এ পর্যন্ত ৬৬ হাজার ৯৭৮ জন আহত হয়েছেন।
এদিকে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে কার্যকর যুদ্ধবিরতি এবং স্থায়ী সমাধানের জন্য আবারও মধ্যপ্রাচ্য সফর শুরু করেছেন। সফরের অংশ হিসেবে তিনি কাতার, ইসরায়েল ও মিশর সফর করবেন। এর আগেও একই ইস্যুতে মধ্যপ্রাচ্যের বেশ কয়েকটি দেশ সফর করেছেন তিনি
সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সৌদি আরবের রিয়াদে ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমানের সঙ্গে দেখা করেন ব্লিঙ্কেন। মঙ্গলবার তার মিশর যাওয়ার কথা রয়েছে। সেখান থেকে তিনি কাতারের আমিরের সঙ্গে দেখা করতে যাবেন। ইসরায়েল সফরের মধ্য দিয়ে শেষ হবে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সফর।
যুদ্ধ শুরুর পর মধ্যপ্রাচ্যে এটি ব্লিঙ্কেনের পঞ্চম সফর। গত কয়েকদিন ধরে গাজার রাফাহ শহরে ইসরায়েলি বাহিনী তাণ্ডব চালাচ্ছে। উপত্যকার অর্ধেকের বেশি মানুষ নিরাপদ ভেবে ওই এলাকায় আশ্রয় নিয়েছিল।
সম্প্রতি ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব আনা হয়। ইসরাইল সেই প্রস্তাবে রাজি হয়েছে। তবে মধ্যস্থতাকারী দেশ কাতার ও মিশর জানিয়েছে, হামাসের পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত কোনো ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। যুদ্ধবিরতি প্রক্রিয়া এগিয়ে নিতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বর্তমানে পঞ্চমবারের মতো মধ্যপ্রাচ্যে রয়েছেন। তিনি আজ সৌদি আরব সফর করেছেন। এছাড়াও ইসরায়েল ভ্রমণের আগে কায়রো এবং দোহা পরিদর্শন করুন।