বেপরোয়া উত্তেজিত সিলেট ছাত্রলীগ: রাতভর পুরো শহরে সশস্ত্র মহড়া
মোদের জন্মের আগে যখন ‘৭১ সাল ছিল ওই পর্যন্ত ছাত্রলীগ আল্লাহর অলি ছিলেন। এরপর থেকে ছাত্রলীগের যত ঘটনা শুনেছি সবই অপকর্ম দিয়ে ভাজি করা। এবং এখন পর্যন্ত অপকর্মে শুধু বাংলাদেশে নয় হয়তোবা সারা বিশ্বে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার যোগ্যতা তারাই রাখতে পারেন। তাই ছাত্রলীগের বেপরোয়া হওয়া আর সশস্ত্র মহড়া কোন ব্যাপারই না । এরপরও সিলেটবাসী বাংলাদেশী ও প্রবাসীদের নিয়ে এই ঘটনাটি তুলে ধরার সময়-ক্ষেপণ প্রচেষ্টা মাত্র ।
সিলেট নগরীর অন্তত ১০-১২ পয়েন্টে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা রাতভর সশস্ত্র মহড়া দিয়েছে। এ সময় জিন্দাবাজার এলাকায় দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। বিক্ষুব্ধ কর্মীরা পয়েন্টে দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। কয়েকজন কর্মীকে পিটিয়ে আহত করা হয়। পরে অপর অংশের নেতারা নগরীর দাড়িয়াপাড়া এলাকায় ছাত্রলীগের উপ-গ্রুপের একটি আস্তানা তছনছ করে। রাতভর শহরে উত্তেজনা বিরাজ করায় স্থানীয়দের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। তবে অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে ভোর পর্যন্ত নগরীতে টহল দেয় পুলিশ। সিলেট ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা জানান, ছাত্রলীগের বড় নেতা রুহিতকে ঘিরে নগরীতে এ উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। আর এই উত্তেজনাপূর্ণ মহড়ায় ছাত্রলীগের সকল গ্রুপের কর্মীরা অংশ নেন। যাহোক; কে কোন অংশের জন্য মহড়া দিয়েছে বলা মুশকিল।
কেউ কেউ বলেছেন; রাতে ভুল বোঝাবুঝির কারণে এক পক্ষ মহড়া দেয়, অন্যপক্ষের বিরুদ্ধে শোডাউন দেয় ।
তারা বলেছিল; ছাত্রলীগের মেজরটিলা গ্রুপের ছাত্রলীগ নেতা মজিবুর রহমান রুহিত টিলাগড়ের একজন পরিচিত নেতা। তিনি স্থানীয় কাউন্সিলর ও জেলা যুবলীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলমের ভাগ্নে। মাজরাতে রুহিতের নেতৃত্বে ছাত্রলীগের একটি বলয় রয়েছে। এ নিয়ে নগরীর জল্লারপাড়ের পীযূষ গ্রুপের কর্মী রাশেদের সঙ্গে তার কথা কাটাকাটি হয়। এই বিরোধের জের ধরে রশিদ মেজরটিলা গ্রুপের নেতা রুহিতকে গালিগালাজ করে। আর জিন্দাবাজারে এলে দেখাবে বলে হুমকি দেয়। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে জিন্দাবাজার এলাকার প্রাণকেন্দ্র রুহিত নগর তার আধিপত্য দেখাতে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক রাহেল সিরাজ গ্রুপের নেতা পিয়াংয়ের সমর্থন চান। এ ব্যাপারে রাহেল সিরাজ রনজিত বল এর নেতৃবৃন্দের সহযোগিতা কামনা করেছেন জেলা ছাত্রলীগ রনজিত বলের নেতৃবৃন্দ। এ অবস্থায় শুক্রবার মধ্যরাতে দুটি মোটরসাইকেল নিয়ে জিন্দাবাজারে আসেন পূর্বাঞ্চলের নেতা রুহিত। তার সঙ্গে জিন্দাবাজারে আসেন ছাত্রলীগ নেতা পিয়াং। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তারা রুহিতকে সঙ্গে নিয়ে জিন্দাবাজার মোড়ে চা খেতে যায়। এমন সময় খবর আসে ছাত্রলীগের সুরমা গ্রুপের নেতা জনি শত শত নেতাকর্মী নিয়ে জিন্দাবাজারে আসছেন। একই সময়ে পীযূষের বলয়ের নেতা রাশেদ ও তার লোকজন জল্লারপাড় থেকে জিন্দাবাজারে আসছিল। এ দুই পক্ষ জিন্দাবাজার পয়েন্টে আসার পর উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে দুটি মোটরসাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। প্রায় ২০ মিনিট ধরে উভয় পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হয়। আতঙ্কে দোকানপাট বন্ধ করে দেন ব্যবসায়ীরা। পরে কোতোয়ালি থানার তিনটি দল এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।
এদিকে; এ ঘটনার পর শহরে তীব্র উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। নগরীর সুরমা মার্কেটের সামনে থেকে মহড়া শুরু করেন সুরমা গ্রুপের কর্মীরা। ‘অতর্কিত’ হামলা ও গ্রুপের নেতা জনিকে মারধরের পর বেলা দেড়টার দিকে তারা জিন্দাবাজারে আসেন। এ সময় পূর্ব-জিন্দাবাজারে অবস্থান করছিলেন ছাত্রলীগের আরেকটি চক্রের নেতারা। সুরমা গ্রুপের কর্মীরা শহরের দাড়িয়াপাড়া এলাকায় গিয়ে হামলাকারী ছাত্রলীগ কর্মীদের আস্তানা তছনছ করে। তাদের ওই এলাকা থেকে তাড়িয়ে দেয়। পরে অবশ্য নগর ছাত্রলীগের একাংশের নেতারা দাড়িয়াপাড়া থেকে বহিষ্কৃত নেতাদের নিয়ে পুরাতন মেডিকেল এলাকায় মহড়া দেন। মির্জা জঙ্গল এলাকায় ছিল পীযূষ গ্রুপের কর্মীদের অবস্থান। আর রাহেল সিরাজের অংশের নেতারা পূর্ব-জিন্দাবাজারে অবস্থান করেন। সংঘর্ষের খবর শুনে তেলিহাওয়ার ব্লকের নেতারাও নিজেদের এলাকায় অবস্থান নেন। তাদের একটি দলও তালতলায় অবস্থান করে মহড়া দেয়।
অন্য দিকে; নগরীর টিলাগড় থেকে নাইওরপুল এলাকা পর্যন্ত মহড়া দিয়েছেন জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি নাজমুল গ্রুপের কর্মীরা। তারা কুমারপাড়া হয়ে শাহী ঈদগাহ পর্যন্ত মিছিল করেন। নগরীর জিন্দাবাজার, জল্লারপাড়সহ কয়েকটি এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীরা জানান, জিন্দাবাজারের ঘটনার পর রাতভর শহরে সশস্ত্র মহড়া চলে। ছাত্রলীগের কর্মীদের অবস্থান ছিল পয়েন্ট বাই পয়েন্ট। কেউ কেউ মোটরসাইকেল নিয়ে অনুশীলনও করেছেন।
এদিকে ছাত্রলীগের উত্তেজনার মধ্যে রাতে নগরীর পরিচ্ছন্নতা পরিদর্শনে বের হন মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। জিন্দাবাজার এলাকায় এসে তিনি ছাত্রলীগের যুদ্ধ চর্চা ও উত্তেজনা মজা করে দেখেন। এ সময় তিনি বিক্ষুব্ধ একদল নেতাকর্মীকে শান্ত থাকার পরামর্শ দিয়ে নিজ বাড়িতে চলে যান। সিলেট কোতোয়ালি থানার ওসি মো. মঈন উদ্দিন শিপন গতকাল দুপুরে বলেন ; জিন্দাবাজার এলাকায় ধাওয়া পাল্টা ধাওয়ার সময় একটি মোটরসাইকেল পুড়িয়ে দেওয়া হয়। পরে পুলিশ গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। এ ঘটনায় কোনো পক্ষই থানায় মামলা করেনি।
আরও জানুন
জাবিতে স্বামীকে আটকে রেখে স্ত্রীকে গণ-ধর্ষণ করল ছাত্রলীগ নেতা