মাঠে সিজদা করতে গিয়েও কেন থেমে গেলেন ভারতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ শামি!
মোহাম্মদ শামি আহমেদঃ (জন্ম ৯মার্চ ১৯৯০) উত্তর প্রদেশের আমরোহা জেলায় জন্মগ্রহণকারী একজন ভারতীয় ক্রিকেটার। তিনি ভারতীয় ক্রিকেট দলের হয়ে টেস্ট এবং একদিনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলেন। এছাড়াও, ঘরোয়া ক্রিকেটে বাংলার হয়ে খেলেন। মূলত তিনি ডানহাতি ফাস্ট বোলার হিসেবেই খেলেন। সুইং এবং সীম সহ ১৪০ কিমি/ঘন্টা গড় গতিতে বল বোলিং করে যা একজন আদর্শ ফাস্ট বোলারের দ্বারাই পসিবল।)
তিনি কি স্রষ্টার প্রতি কৃতজ্ঞতায় সিজদা করতে চেয়েছিলেন? শেষ মুহূর্তে সিজদাহ করতে গিয়েও করলেন না কেন? নাকি ক্লান্ত হয়ে বসে ছিলেন শামি? তবে তিনি কিছুই প্রকাশ করেননি। ভারতের তারকা বোলার কিছু না বললেও তিনি কী করতে চেয়েছিলেন তা হয়তো অজানাই থেকে যাবে।
তবে ম্যাচের পর শামিকে নিয়ে আলোচনা এখন তুঙ্গে। সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেক সমর্থক লিখেছেন, “সিজদা করতে গিয়েছিলেন শামি।” কিন্তু শেষ পর্যন্ত উগ্রপন্থীদের তোপের আগুনে পড়ার ভয়ে তিনি প্রার্থনা করেননি।” শামির এভাবেসিজদা মুখি হয়ে বসে পড়াকে ঘিরে পাকিস্তানি মিডিয়া ও সমর্থকরা তোলপাড়।
বিশ্বকাপে বেঞ্চ থেকে নেমে দারুণ সময় কাটাচ্ছেন মোহাম্মদ শামি। বল হাতে বেশ কয়েকটি রেকর্ড ভেঙেছেন তিনি। এই ডানহাতি পেসারকে কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার মোহাম্মদ কাইফ একজন ‘প্রকৃত ম্যাচ বিজয়ী’ বলেছেন। বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে দলে জায়গা পাননি শামি। এই বিষয়ে একটি ক্রিকবাজ আলোচনায় প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার পার্থিব প্যাটেল বলেন, ‘আপনার যদি শামি, বুমরাহ, সিরাজ থাকে তবে আপনি অতিরিক্ত ব্যাটসম্যানের প্রয়োজন বোধ করার দরকার নেই’, যেখানে দুই বছর আগে এই একই পারফরম্যান্স করা শামিকে তার ধর্মপন্থী আচরণের জন্য ভারতীয়দের কাছ থেকে বিদ্বেষপূর্ণ কথা শুনতে হয়েছিল। , যার বেশিরভাগই ছিল ধর্মীয়ভাবে বিদ্বেষমূলক।
বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে পাঁচ উইকেট নিয়েছেন মোহাম্মদ শামি। লঙ্কানদের চার উইকেট হারানোর পর বল করতে আসেন ভারতীয় পেসার। শেষ ৬ উইকেটের মধ্যে ৫টিই নিয়েছেন নিজের নামে। পঞ্চম উইকেট নেওয়ার পর মাটিতে মাথা রাখতে গিয়েও (সিজদা করতে গিয়ে) থেমে যান শামি। থামলে কেন? সর্বশক্তিমানের কাছে নিজেকে সমর্পণ করার আগে শামি কী ভেবেছিলেন? এ নিয়ে ভারতীয় ও পাকিস্তানি গণমাধ্যমে তুমুল আলোচনা চলছে। কিন্তু ২০২১ সালের দিনগুলো কি এখনো ভুলতে পারছেন না শামি?
২০২১ সালে সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে ১০ উইকেটের বিশাল ব্যবধানে জয় পায় পাকিস্তান।এরপরই অনলাইনে মোহাম্মদ শামিকে আক্রমণ করেন ভারতীয় নেটিজেনরা। যেখানে তাদের মূল বক্তব্য ছিল শামিকে পাকিস্তানে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হোক । যদিও সেই সময়ে শামির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন ভারতের সাবেক ও বর্তমান ক্রিকেটাররা। তৎকালীন অধিনায়ক বিরাট কোহলি সংবাদ সম্মেলনে শামিকে রাখার কথা বলেছিলেন এবং দলের পরাজয়ের দায় পুরো দলের ওপর বলে মন্তব্য করেছিলেন। কিংবদন্তি ভারতীয় ক্রিকেটার শচীন টেন্ডুলকার এবং ইরফান পাঠানের পাশাপাশি পাকিস্তানি ক্রিকেটাররাও শামির পাশে দাঁড়িয়েছিলেন। তিনি ভারতীয় দর্শকদের শামিকে সম্মান দেখাতে বলেছেন। সেই তীব্র তীব্র ইসলামবিদ্বেষে জর্জরিত শামি এখন ভারতের ক্রিকেট সাফল্য এবং সুখী সময়ের কেন্দ্রবিন্দু। তবে শামির ওপর যে ক্ষোভ এখনও রয়ে গেছে তা এই বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই প্রকাশ পেয়েছে।
মোহাম্মদ শামি ক্রিকেটের বাইরে ব্যক্তিগত জীবনেও এমন ধর্মীয় কটূক্তির শিকার হয়েছেন। ২০১৬ সালে তার তৎকালীন স্ত্রীর সাথে তোলা ছবিতে সুন্দর কিছু সুন্দর মুহূর্ত লিখেছিলেন। সেই ছবিতে তিনি আক্রমণও করেছিলেন। কিছু লোক সেখানে শামির মন্তব্যকে ‘ইসলাম অনুসরণ করার’ নির্দেশ দিয়েছিল এবং তার স্ত্রীকে হিজাব এবং শালীন পোশাক পরতে বলেছিল। তবে এই বিশ্বকাপের মাঠেই সব কিছুর জবাব দিচ্ছেন মোহাম্মদ শামি। তিন ম্যাচ খেলে ১৪ উইকেট নেওয়াটা কোনো ছোট কৃতিত্ব নয়। আর ইতিমধ্যেই শামিকে মাথায় নাচছেন ভারতীয়রা।
বিশ্বকাপের প্রথম তিন ম্যাচে প্রথম একাদশে জায়গা করে নিতে পারেননি তিনি। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়ে ভারতীয় দলে ফিরে আসেন। সেখান থেকে তাকে সরানো যায়নি। একের পর এক দুর্দান্ত স্পেল দিয়ে নিজেকে ভারতীয় দলের অবিচ্ছেদ্য অংশে পরিণত করেছেন তিনি। ইদানীং শামি নিজেকে ভারতীয় ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশ করে নিয়েছেন।
বিশ্বকাপে ভারতের হয়ে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর তালিকায় জাভাগাল শ্রীনাথ ও জহির খানকে ছাড়িয়ে গেছেন মোহাম্মদ শামি। সাবেক দুই পেসারের সংগ্রহ ৪৪ উইকেট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ম্যাচের আগে শামির ৪০ উইকেট ছিল। এরপর নিজের স্পেলে ৫ উইকেট নিয়ে ইতিহাস গড়েন শামি।
লঙ্কান ক্রিকেটার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের স্ট্যাম্প মুছে ৪৪ উইকেটের মাইলফলকও স্পর্শ করলেন শামি। এরপর কাসুন রাজিথার উইকেট নিয়ে শ্রীনাথ ও জহির খানকে ছাড়িয়ে যান শামি।
মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়ে স্টেডিয়ামে লঙ্কানদের ৫৫ রানে গুটিয়ে দিয়ে ভারত ৩০২ রানে জিতেছে। মাত্র ১৮ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দলের জয়ে বড় অবদান রেখেছেন শামি। ম্যাচ সেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনি। মোহাম্মদ শামি। (মুসলিম ক্রিকেটার ) মোহাম্মদ শামি আহমেদ ।
আরও পড়ুন
ভারতে আয়োজিত বিশ্বকাপে ক্রিকেটারদের খাবারের মেনুতে নেই গরুর মাংস
হার্ভার্ডের শিক্ষককে কোরআন উপহার দিয়েছেন পাকিস্তানের তারকা ক্রিকেটার রিজওয়ান