ফরজ গোসল করবো কিভাবে?
মানুষের সব সময়ই ফরজ গোসলের প্রয়োজন হয় না। বিশেষ কিছু কারণেই ফরজ গোসলের প্রয়োজন হয়। কিন্তু সে ক্ষেত্রে সঠিক নিয়মে গোসল না করলে সে গোসল দিয়ে শরীর পবিত্র হয় না । পবিত্র না হইলে নামাজের মত অনেক এবাদতই করা যায় না । তাই সতর্কতা স্বরূপ ফরজ গোসল করবো কিভাবে? সংক্ষেপে সে বর্ণনা নিম্নে করার চেষ্টা করছি।
মানব জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই ইসলামের বিধি-বিধান রয়েছে। নিয়ম লঙ্ঘন হলে, কিছুই সঠিকভাবে হয় না। ফরয গোসলেরও পদ্ধতি রয়েছে।
তাই সঠিকভাবে গোসল করতে হবে। ইসলামে পবিত্রতা অর্জন একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ আল্লাহ নিজে পবিত্র, তিনি বান্দাদের পবিত্রতাও পছন্দ করেন। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা বলেন- ‘তোমরা অপবিত্র অবস্থায় থাকলে (গোসল করে) শরীরকে পবিত্র কর’ (সূরা মায়েদা: ৬)
গোসল ফরজ হয় যে সব কারণেঃ-
১. স্বপ্নদোষ বা উত্তেজনাবশত বীর্যপাত হলে।
২. নারী-পুরুষ মিলনে (সহবাসে বীর্যপাত হোক আর নাই হোক) ।
৩. মেয়েদের হায়েয-নিফাস শেষ হলে।
৪. ইসলাম গ্রহণ করলে (নব-মুসলিম হলে) ।
পবিত্রতার ব্যাপারে কুরআন ও হাদিস
আল্লাহ বলেন; “নিশ্চয়ই আল্লাহ তাওবাকারীদের ভালবাসেন এবং অধিকতর পবিত্রতা অর্জনকারীদের ভালবাসেন” (সূরা বাকারা:২২২) ।
হযরত মালিক আশআরী (রাঃ) বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, পবিত্রতা ঈমানের অঙ্গ। (মুসলিম)।
ফরজ গোশালের সঠিক নিয়মঃ-
আমরা জানি গোসলের তিনটি ফরজ।
১) কুলি করা ।
২) নাকে পানি দেওয়া ।
৩) সারা শরীরে পানি পৌঁছে দেওয়া।
এর একটি বাদ দিলেও পবিত্রতা অর্জিত হবে না। অর্থাৎ ব্যক্তি অপবিত্র থাকবে। তবে দেখা যায় অনেকের নাকে পানি যাচ্ছেনা। এমনকি কুলিও হচ্ছেনা। আবার অসাবধানতার কারণে সারা শরীর ভিচ্ছেও না। এরূপ গোসল করার পর যেসব ইবাদতে পবিত্রতা শর্ত, সেসব ইবাদত কবুল হবে না বরং গুনাহের আশঙ্কা রয়েছে। না জানলে হয়তো আল্লাহ মাফ করে দিবেন। জেনেশুনে কোনো ফরজকে অবহেলা করা জায়েয নয়।
সঠিকভাবে গোসল করার জন্য নিম্নলিখিত পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবেঃ-
- প্রথম প্রস্রাব। এতে বিশেষ পদার্থ ইত্যাদি সম্পূর্ণরূপে বের হওয়া সহজ হয়।।
- তারপর ভিতরে এবং বাইরে গোপন এলাকা পরিষ্কার করতে হবে।
- উভয় হাত কব্জি পর্যন্ত ধৌত করতে হবে। সাবান বা এই জাতীয় কিছু দিয়ে ধোয়া ভাল; না হলে সমস্যা নেই।
- গরগরা দিয়ে ভালো করে কুলি করা ।
- বাম হাতের কনিষ্ঠা আঙুল দিয়ে নাকের ছিদ্রের ভিতর পানি দিতে হবে।
- হাত ভিজিয়ে কানের ছিদ্র মুছে দিন।
- নাভির ভিতরে পানি দিয়ে পরিষ্কার করা ।
- মহিলাদের জন্য কান ও নাকের ছিদ্র স্পর্শ করে অযু করা জরুরী যাতে পানি ছিদ্রে পৌঁছায়।
- পুরুষদের দাড়ি, চুল ও দাড়ির গোড়া ভালো করে পানিতে ভিজিয়ে ধুইতে হবে। কারো হাতে ঘড়ি বা আংটি থাকলে তা ঝাঁকিয়ে ভেতরে পানি পৌঁছাতে হবে।
- মহিলাদের চুল বাঁধা থাকলে চুলের গোড়া না খুলেই যদি পানি পৌঁছানো সম্ভব হয়, তাহলে না খুলেই গোড়ায় পৌঁছানোই যথেষ্ট। আর চুল খোলা থাকলে পুরুষের মত পুরো চুল ধোয়া ফরজ।
- নেলপলিশ, পেইন্ট বা সুপার গ্লু ইত্যাদি যা শরীরে পানি পৌঁছাতে বাধা দেয়, তা সরিয়ে পানি তলদেশে পৌঁছাতে দেওয়া আবশ্যক, তা না হলে গোসল হবে না।
- তারপর পানি দিয়ে মাথা ভিজিয়ে নিতে হবে ।
- তারপর নামাযের অযুর মত পূর্ণাঙ্গ ওযু করা উত্তম।
- তারপর প্রথমে শরীরের ডান পাশে তারপর বাম পাশে পানি ঢালুন। তারপর সারা শরীরে পানি ঢেলে দিন। মনে রাখবেন, শরীরের বাহ্যিক লোমের এলাকা শুকনো থাকলে ফরজ গোসল হবে না।
আরও পড়ুন
এক মাদ্রাসা থেকেই ১০ লাখ কুরআনের হাফেজ
যেসকল আমলে বরকত বৃদ্ধি পায়
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যেভাবে গোসল করতেনঃ-
হাদিসে বর্ণিত আছে, মায়মুনা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)-এর জন্য গোসলের পানি রেখেছিলাম। এর দ্বারা সে জানাবাতের (অপবিত্রতা থেকে পবিত্রতা) গোসল করেন । আল্লাহর রাসুল (সাঃ) পাত্রটি হাতে নিয়ে ডান হাতে কাত করে দুই বা তিনবার ধুয়ে ফেললেন। অতঃপর সে তার গোপনাঙ্গে পানি ঢেলে বাম হাতে ধৌত করেন ।অতঃপর মাটিতে হাত ঘষে পানি দিয়ে ধুয়ে নেন । অতঃপর ওযু করে নাক পরিষ্কার করেন । তারপর মুখ ও হাত ধুয়ে নিলেন। অতঃপর তিনি তার মাথায় এবং সমস্ত অংশে পানি ঢেলে দেন। অতঃপর সে স্থান থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে উভয় পা ধৌত করেন । (আবু দাউদ)
উল্লেখ্য, রমজান মাসে রোজা রেখে সেহরি খাওয়া সুন্নত। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, ফরজ গোসলের পর খাওয়া-দাওয়া ও অন্যান্য কাজের আগে নিজেকে পবিত্র করা উত্তম কিন্তু জরুরি নয়। গোসল না করেও খাওয়া যায়। কারণ সেহরি খাওয়ার জন্য পবিত্রতা ফরজ নয়, সুন্নত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে এভাবেই বর্ণিত হয়েছে। তাই গোসল ন করেও সেহরি খাওয়া যায়।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে সঠিক উপায়ে আল্লাহর রাসূলের শিখিয়ে দেওয়া পদ্ধতিতে পবিত্রতা অর্জন করার তাওফিক দান করুন। আমীন।