ইতিহাসের পরাকাষ্ঠায় রয়ে যাওয়া বিশ্বাসঘাতক খলনায়িকা,নবাব সিরাজউদ্দৌলার আপন খালা
ঘসেটি বেগম

ঘসেটি বেগমের আসল নাম ছিল মেহেরুন্নেসা। তিনি ছিলেন নবাব আলীবর্দী খানের তিন কন্যার মধ্যে সবার বড় এবং নবাব সিরাজউদ্দৌলার আপন খালা। নবাব আলীবর্দী খান তার তিন কন্যার বিয়ে তার বড় ভাই হাজী আহমেদের তিন পুত্রের সাথে দিয়েছিলেন। ঘসেটি বেগমের বিয়ে হয়েছিল ঢাকার নায়েব নাজিম নওয়াজিস মুহাম্মদ শাহমত জংয়ের সাথে।
অর্থাৎ, মেহেরুন্নেসা ওরফে ঘসেটি বেগমের তার স্বামীর সাথে ঢাকায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকার জন্য, এই দম্পতি তৎকালীন বাংলার রাজধানী মুর্শিদাবাদে বসবাস শুরু করেন। নবাবের কন্যা হিসেবে তিনি প্রচুর সম্পদ সঞ্চয় করেছিলেন। নিঃসন্তান নওয়াজিস-ঘসেটি দম্পতি সিরাজউদ্দৌলার ছোট ভাই ইকরামউদ্দৌলাকে তাদের পালিত পুত্র হিসেবে গ্রহণ করেছিলেন।
কিন্তু ইকরামউদ্দৌলা গুটিবসন্তে মারা যান। নওয়াজিস সেই শোকে ভেঙে পড়েন। কিছুক্ষণ পরে নওয়াজিস মারা গেলে, ঘসেটি বেগমও তার মৃত স্বামীর বিশাল সম্পদের উত্তরাধিকারী হন।
যখন বৃদ্ধ নবাব আলীবর্দী খাঁ তার কনিষ্ঠ কন্যা আমেনা বেগমের পুত্র সিরাজউদ্দৌলাকে তার উত্তরসূরী মনোনীত করেন, তখন ঘসেটি বেগম এই মনোনয়নের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র শুরু করেন।
আলিবর্দী খানের মৃত্যুর পর ঘেষেটি বেগম তার দ্বিতীয় বোনের ছেলে শওকত জংকে সিংহাসনে বসাতে চেয়েছিলেন; কিন্তু নবাব আলীবর্দী খানের ইচ্ছায় সিরাজউদ্দৌলা ক্ষমতায় আরোহণ করেন। ঘেষেটি বেগম এটা মেনে নিতে পারেননি। তাই তিনি গোপনে সেনাপতি মীর জাফর, ব্যবসায়ী জগৎ শেঠ এবং উমিচাঁদের সাথে ষড়যন্ত্র করে ব্রিটিশদের সাথে হাত মিলিয়ে পলাশীর যুদ্ধে সিরাজউদ্দৌলাকে পরাজিত করেন।
ব্রিটিশরা মীর জাফরকে নবাব করে; কিন্তু মীর জাফর ব্রিটিশদের পুতুল হওয়ায়, ঘসেটি বেগমের ক্ষমতায় প্রভাব বিস্তারের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হয়নি। প্রতিশ্রুত অর্থ পরিশোধ না করার কারণে তিনি মীর জাফর এবং তার পুত্র মিরানের সাথেও বিরোধে জড়িয়ে পড়েন। ভবিষ্যতে তিনি বিপজ্জনক হতে পারেন এই ভেবে, মিরন ঘসেটি বেগমকে বন্দী করেন এবং তার নির্দেশে, নৌকায় করে মুর্শিদাবাদে নিয়ে যাওয়ার সময়, তিনি নৌকাটি ডুবিয়ে দেন এবং ঘসেটি বেগমকে জরাজীর্ণ অবস্থায় কবর দেন।
তিনি সিরাজউদ্দৌলার পরিবর্তে তার দ্বিতীয় বোনের পুত্র শওকত জংকে সিংহাসনে বসানোর চেষ্টা করেন। তার দাদার মৃত্যুর পর, সিংহাসনে আরোহণের পর সিরাজ ঘসেটি বেগমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেন। তিনি তাকে তার নিজস্ব মতিঝিল প্রাসাদে বন্দী করেন।
সিরাজের বিরুদ্ধে শুরু হওয়া ষড়যন্ত্রে তিনি প্রচুর অর্থ ঢালেন। ষড়যন্ত্র সফল হলে, পলাশীর যুদ্ধের পর পরাজিত নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিহত হন। এরপর মীর জাফর বাংলার নতুন নবাব হন। ক্ষমতা পরিবর্তনের পর, ১৭৫৮ সালে নবাব আলীবর্দী খানের দুই কন্যা, ঘসেটি বেগম এবং আমেনা বেগমকে সিরাজউদ্দৌলার পরিবারের সাথে ঢাকার জীর্ণ জিঞ্জিরা প্রাসাদে পাঠানো হয়।
কিন্তু মীর জাফরের পুত্র মীরন বন্দী অবস্থায়ও ঘসেটি বেগমকে একজন বিপজ্জনক শত্রু হিসেবে বিবেচনা করতে থাকেন।
মীরানের ষড়যন্ত্রের কারণে, ১৭৬০ সালে ঘসেটি বেগম এবং আমেনা বেগমকে রাজধানী মুর্শিদাবাদে ফিরিয়ে আনার জন্য একটি নৌকায় করে নিয়ে যাওয়া হয়। বুড়িগঙ্গা ও ধলেশ্বরীর মিলনস্থলে পৌঁছলে নৌকা ফুটো করে ডুবিয়ে দেওয়া হয় এবং এইভাবে, ঘসেটি বেগম এবং আমেনা বেগমকে নৌকাডুবিতে জীবন নাশ করা হয়।
বাংলার বিশ্বাসঘাতকতার অপর নাম "ঘসেটি বেগম"। তার বিশ্বাসঘাতকতা এবং ষড়যন্ত্রের পরিণতি ছিল ভয়াবহ। চরম কষ্টের কারণে ঘসেটি বেগম বুড়িগঙ্গায় নৌকাডুবিতে প্রাণ হারান
পটুয়াখালীর বাউফলে ঘসেটি বেগমের নির্মিত মসজিদটি আজ ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। ঘসেটি বেগম নির্মাণ করেছেন সেই কারণেই হয়তোবা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে, এই ঐতিহাসিক স্থাপনাটি হারিয়ে যাওয়ার পথে।
বাউফল উপজেলা পরিষদের তথ্য অনুযায়ী, প্রায় ৩৫০ বছর আগে পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া ইউনিয়নের শৌলা গ্রামে।
আরও পড়তে- মিথ্যা বললে তা বুঝা যাবে ব্যক্তির ‘পা’ দেখে: এফবিআই
লাইফ স্টাইল এর আরো খবর

নিঃসন্তান দম্পত্তির জন্য সুখবর নিয়ে হাজির কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা / ১৮ বছর ধরে ব্যর্থ দম্পতি অবশেষে AI এর মাধ্যমে গর্ভধারণ করলেন!

‘অনলাইন প্রতারককে’ চিনবো যেভাবে

সহজ উপায়ে শিশু উন্নয়ন / শিশুর বুদ্ধিমত্তা ও মেধা বিকাশে কার্যকরী উপায়

২০২৪ সালে শিশুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা 'ভয়াবহ পর্যায়ে' পৌঁছেছে: জাতিসংঘ

তাকবীরে তাশরিক: পড়ার সময় ও নিয়ম
