গৃহবন্দী অবস্থাতে ঈদ সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়ার
বাংলাদেশের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী,এবং মুসলিম বিশ্বের প্রথম মহিলা প্রধানমন্ত্রী, তিনবারের প্রধানমন্ত্রী এবং বাংলাদেশের জনসাধারণের নিকট আপসহীন নেত্রী, রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা বেগম খালেদা জিয়া। তাকে আলাদাভাবে পরিচয় করে দেওয়ার সাহস বা দুঃসাহস বাংলার কোন মানুষের না থাকাই উচিত। শুধুমাত্র ক্ষমতার হাতিয়ারকে ব্যবহার করে বছরের পর বছর কারাবন্দি সহকারে গৃহবন্দী করে রাখা হয়েছে এই মানুষটিকে।
কথিত দুর্নীতির মামলায় সেই আপসহীন নেত্রী বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া এখনও গৃহবন্দী। ছেলে, ছেলের বউ আর নাতনিরা আশেপাশে নেই। টানা চারবার কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে একা ঈদ উদযাপন করার পর গত কয়েক ঈদ কখনো হাসপাতালে আবার কখনো গৃহবন্দি অবস্থায় কাটিয়েছেন তিনি। এবারও গৃহবন্দি এই নিজ বাড়িতে ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন বিএনপি চেয়ারপারসন।
সরকারের বিশেষ আদেশে মুক্তির পর থেকে তিনি বেসরকারি চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে বাড়িতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তবে বেশ কয়েকবার তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। বেগম জিয়া অসুস্থ হয়ে পড়লে আবারও তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। হাসপাতালে দুইবার ঈদ কাটিয়েছেন। তবে এবার হাসপাতালে না থাকলেও গৃহবন্দী অবস্থায়ই ঈদুল ফিতর উদযাপন করবেন তিনি।
সূত্র জানায়, বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়া গত ষোল বছর ধরে ছেলে, ছেলের স্ত্রী ও নাতনিকে ছাড়াই ঈদ উদযাপন করছেন। পরিবারের পাশে না থাকলেও বেগম জিয়া পরিবারের অন্য সদস্যদের পাশাপাশি দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঈদের দিন কাটাতেন। পরে তিনি টেলিফোনে ছেলে, নাতনি, ছেলের স্ত্রীর সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করতেন। কারাগারে থাকায় চারবার সেই সুযোগ হয়নি। ছোট ছেলের স্ত্রী ও দুই নাতনিকে নিয়ে গত ঈদুল ফিতর। কিন্তু এবার সে একা। এবারও তিনি শারীরিকভাবে সুস্থ না থাকায় পরিবারের কয়েকজন সদস্য ও দলের সিনিয়র দুই নেতা ছাড়া অন্য কারো সঙ্গে দেখা করবেন না বলে জানা গেছে।
বেগম খালেদা জিয়া দীর্ঘদিন ধরে বাত, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। তার দুই হাঁটু ও দুই চোখই অপারেশন করতে হয়েছে। তাকে সবসময় একজন যোগ্য চিকিৎসকের নিয়মিত পর্যবেক্ষণে থাকতে হয় । দেশের বাইরে বিশেষায়িত হাসপাতালে তাকে যথাযথ চিকিৎসা না দেওয়া হলে তার শারীরিক অবস্থার গুরুতর অবনতি হতে পারে বলে মনে করেন বিএনপি নেতারা এবং খোদ ডাক্তাররাও । তবে সরকার বলছে, দেশের মধ্যেই বেগম জিয়ার চিকিৎসা করাতে হবে।
বিএনপি থেকে জানা যায় , ২০০৭ সালের ওয়ান ইলেভেনের অবৈধ সরকারের পর থেকে দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে ছেলে ও পরিবারের সদস্যদের ছাড়াই ঈদ উদযাপন করে আসছেন ২০ দলীয় জোটের এই শীর্ষ নেতা। এদিকে কাউকেই কাছে পাচ্ছেন না তিনি। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের শাসনামলে তাকে নানা শারীরিক ও মানসিক যন্ত্রণা সহ্য করতে হয় বলে অভিযোগ বিএনপির।
কারাগারের বাইরে ঈদ কাটালেও যেহেতু তিনি গৃহবন্দী, তাই টেলিফোনে ছেলে ও ছেলের স্ত্রী ও নাতনিদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ পাবেন সীমিত। বেগম জিয়াকে চিকিৎসকের দেওয়া নিয়ম মেনে চলতে হবে। ফজরের নামাজের পর চিকিৎসার জন্য বিদেশে থাকা ছেলের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন বেগম জিয়া। ছেলের স্ত্রী ও নাতনিদের সঙ্গে কথা বলেন । এবারও তার ব্যতিক্রম হবে না।
ওয়ান ইলেভেনের রাজনৈতিক পরিবর্তনের পর ২০০৭ সালের ৩ সেপ্টেম্বর গ্রেপ্তার হন খালেদা জিয়া। এ সময় তার বড় ছেলে তারেক রহমান, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান ও ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোকেও আটক করা হয়। সংসদ ভবন এলাকার বিশেষ কারাগারে ৩৭২ দিন আটক থাকার পর ২০০৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর মুক্তি পান খালেদা জিয়া। এর মধ্যে ২০০৭ সালের দুটি ঈদ তিনি কারাগারে কাটিয়েছেন। প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার পর তারিক রহমান চিকিৎসার জন্য যুক্তরাজ্যে যান। তিনি এখন সেখানে আছেন। সঙ্গে রয়েছেন স্ত্রীর ড. জোবাইদা রহমান ও মেয়ে ব্যারিস্টার জাইমা রহমান। প্যারোলে মুক্তি পেয়ে থাইল্যান্ডে গিয়েছিলেন আরাফাত রহমান কোকোও। সঙ্গে ছিলেন তার স্ত্রী শর্মিলা রহমান, দুই মেয়ে জাফিয়া রহমান ও জাহিয়া রহমান। তিনি ২৪ জুন, ২০১৫ তারিখে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান। তাই, ২০০৭ সাল থেকে বেগম জিয়ার দুই ছেলে একসাথে হয়নি। বরং ছেলে, পুত্রবধূ ও নাতনিদের দূরে রেখে ২৯ টি ঈদ একাই কাটিয়েছেন। এবারের ঈদও পরিবারের কয়েকজন সদস্যের সঙ্গে একান্তেই কাটাবেন বলে জানানো হয়েছে ।
বাংলাদেশের ক্ষেত্রে ক্ষমতা এমন এক পরাশক্তির নাম যার মাধ্যমে জীবন মৃত্যু ছাড়া মনে হয় সবকিছুই করা সম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। এবং সেখানে প্রতিহিংসার রাজনীতি এতটা বেশি বেড়ে যায় যে, রাজনৈতিক ব্যক্তিগুলো ক্ষমতা ধরে রাখতে দিক বিদিক জ্ঞানও হারিয়ে ফেলে। আর সেখানে ভালোমন্দ দেখার কেউই থাকে না।