ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হলে আটকে ছাত্রীকে বিবস্ত্র করে সাড়ে ৪ ঘণ্টা নির্যাতন করে, ছাত্রলীগ নেত্রী
“এই সংগঠনটি এমন এহেন অপকর্ম নেইযে করেনি, অমানবিক আচরণ তাদের নিত্য নৈমত্তিক উল্লাসের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে, টেন্ডারবাজি, নারীবাজি, গণিকাবৃত্তি সহকারে নোংরা চরিত্রের সকল নীচ ও হীন কাজগুলা তাদের মাধ্যমে হয়নি কেউ বলতে পারবেনা।
জানিনা ৩০ বছর যাবত তাদেরকে এই চরিত্রেই দেখেছি। এর পূর্বে যেহেতু বুঝার মতো বয়সে ছিলাম না তাই বলতে পারবো না যে, তারা ৩০ বছরের আগের বছরগুলোতে আল্লাহর অলি ছিলেন কিনা? কিন্তু আমার মনে হয় নাএই অমানুষগুলো কখনোই এই বাংলাদেশের জন্য কোন উপকারে এসেছে । ইতিহাস বিকৃতির চরম নিন্দনীয় লেখ্যপটে তাদের নাম আসা ছাড়া অন্য কোন উপকার তাদের থেকে এ জাতি কক্ষনোই পায়নি। তবে আশ্বাসের ব্যাপার হল এই যে, হয়তোবা পার্থক্যটা দেখা যাবে, তবে সেটা শুধু সময়ের ব্যাপার। “
কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী হলে সাড়ে চার ঘণ্টা আটকে রেখে প্রথম বর্ষের এক ছাত্রীকে নির্যাতনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। তাকে বিবস্ত্র করে ভিডিও ধারণ, গালাগাল ও এ ঘটনা কাউকে জানালে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হয়েছে।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর, হলের প্রভোস্ট ও ছাত্র উপদেষ্টার কাছে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ করেছেন তিনি। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে প্রভোস্ট সামসুল হক।
এই ন্যক্কারজনক ঘটনাটি গত রোববার রাত ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহসভাপতি সানজিদা চৌধুরীর নেতৃত্বে তার অনুসারীরা দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলের গণরুমে ঘটিয়েছে।
এ ঘটনায় অভিযুক্ত সানজিদা চৌধুরী অন্তরা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ সহ-সভাপতি ও পরিসংসখ্যান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। এসময় তার সঙ্গে আরও ৫-৬ জন ছাত্রী জড়িত ছিলেন। তাদের সবার নাম-পরিচয় জানা না গেলেও তাবাসসুম নামে একজনের পরিচয় মিলেছে। তিনি ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী। আর ভুক্তভোগী ফুলপরি খাতুন একই বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।
লিখিত অভিযোগে ভুক্তভোগী জানিয়েছেন, গত ৮ ফেব্রুয়ারী ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে তাবাসসুম সকলের কাছে জানতে চান দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে কারা থাকেন। আমি হাত উঠালে আপু আমাকে বলেন, হলে উঠেছো আমাকে আগে জানাওনি কেনো। এ সময় আপু আমাকে রাত ৮টায় প্রজাপতি-২ রুমে যেতে বলেন। আমি অসুস্থ ছিলাম, তাই যেতে পারি নাই। তা ছাড়া আমি সবকিছু তেমন চিনতামও না।
‘দু’দিন পরে আমি ওই রুমে গিয়ে ফিন্যান্স এ্যান্ড ব্যাংকিং বিভাগের কেউ আছে কিনা জানতে চাই। ওইসময় আপু ঘুমিয়ে থাকায় আমি চলে আসি। পরের দিন ক্লাসে আসলে আপু আমাকে খুবই ঝাড়ি দেয়, বলেন তুমি বড়দের সম্মান করতে জানো না, আমাদেরকে আপু বলো না, তুমি উপরে থাকো বলে নিচে সাপের পাঁচ পাও দেখেছো এরকম কথা বলে ধমক দেয়’’।
ভুক্তাভোগী উল্লেখ করেছেন, আমি বলি আপু আপনারা এরকম করলে আমি হল প্রধানকে বলবো। এতে তারা ক্ষিপ্ত হয়ে আমাকে অন্তরা আপুর কাছে নিয়ে যায়। ওইদিন রাত ৯টা থেকে ১২টা পর্যন্ত আমি অন্তরা আপুর রুমে ছিলাম। এসময় আপুর পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছি। পরে আপুরা আমাকে হল থেকে তাড়িয়ে দেয়ার হুমকি র করে দেয়।
‘পরে হলের স্যাররা আমাকে অন্তরা আপুর দায়িত্বে দিয়ে আসেন। এসময় আপু আমাকে ৩০৬ নম্বর রুমে যেতে বলেন। আমি ৩০৬ নম্বর রুমে চলে যাই। পরে রাত ১১টার সময় অন্তরা আপু আমার রুমে গিয়ে আমাকে গণরুমে যেতে বলেন। গণরুমে গেলে আপু আমাকে মারধর করেন, পায়ে পিন ফুটান। অনেক বাজে বাজে ভাষায় কথা বলেন।’’
ঘটনার বর্ণনায় ভুক্তভোগী লিখেন, এক পর্যায়ে আপু আমাকে জোর করে আমার জামা খুলিয়েছেন। পরে বিবস্ত্র অবস্থায় আমার ভিডিও ধারণ করেন। প্রভোস্ট স্যারের বিরুদ্ধে লিখে আমাকে তা মুখে বলিয়ে নিয়ে রেকর্ড করেছেন। রাতভর তারা আমাকে বেধড়ক মারধর করেছেন। পরের দিন সকালে কোনোভাবে হল থেকে পালিয়ে বাসায় চলে আসি।
ফুলপরি খাতুন অভিযোগ করে বলেন, এসময় তারা বলেছে, মুখে মারিস না, গায়ে মার। যাতে কাউকে দেখাতে না পারে। আমাকে তারা খুবই ভয় দেখিয়েছে এবং এসব কথা বাইরে বললে আমাকে একেবারেই মেরে ফেলার হুমকি দিয়েছে। তারা আরও বলেছে, তোকে হল থেকে উলঙ্গ করে বের করে দেবো। সাড়ে চার ঘণ্টা ধরে তারা আমাকে শুধু মেরেছে। অন্তরাসহ ৫-৬ জন মিলে আমার সঙ্গে এসব করেছে।অভিযোগের ব্যাপারে সানজিদা চৌধুরী বলেন, অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই। একটি কুচক্রী মহল আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালাচ্ছে।
ইবি প্রক্টর শাহাদাত হোসেন বলেন, উপাচার্যের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে শিক্ষকরা কথা বলছেন। এ বিষয়ে পরে কথা বলতে পারব।