ফিলিস্তিনের সমর্থনে যুক্তরাষ্ট্রে ও ভারতে ছাত্রদের বিক্ষোভ: চলছে ধরপাকড়
গাজায় ইসরাইলে বর্বর হামলার প্রতিবাদে সারা বিশ্বের মত যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে ছাত্রদের মিছিল হয়েছে। বিক্ষোভ হয়েছে। এবং সেখান থেকে ধরপাকড় চলছে বেশ।
ফিলিস্তিনি গাজা উপত্যকায় ইসরায়েলের হামলার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ চলছে। বিক্ষোভ দমনে পুলিশ ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করে। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
সোমবার, কানেকটিকাটের ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয় এবং নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনিপন্থী বিক্ষোভকারীদের গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। এ সময় বেশ কয়েকজনকে আটক করা হয়।
গত সপ্তাহে, শিক্ষার্থীরা কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির নিউইয়র্ক সিটি ক্যাম্পাসে তাঁবু ফেলে বিক্ষোভ করে। এই ঘটনায়, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সোমবার সাসারির ক্লাস বন্ধ ঘোষণা করেছে। পরে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের আটক করে।
বিক্ষোভকারীরা সোমবার কানেকটিকাটের নিউ হ্যাভেনে ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসের চারপাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেয়। তারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে অস্ত্র প্রস্তুতকারকদের থেকে দূরে থাকার দাবি জানান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-চালিত সংবাদপত্র দ্য ইয়েল ডেইলি নিউজ জানিয়েছে যে ৪৫ জনেরও বেশি বিক্ষোভকারীকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। কলম্বিয়া ইউনিভার্সিটির শতাধিক ফ্যাকাল্টি আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।
ফিলিস্তিনের সমর্থনে ভারতে বিক্ষোভ, গ্রেফতার ২০০
হামাস ও ইসরায়েলের মধ্যে হামলা-পাল্টা হামলা চলছে। এই পরিস্থিতিতে ফিলিস্তিনের সমর্থনে প্রতিবাদ করায় ভারত দুই শতাধিক বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করেছে। ভারতীয় সংবাদ মাধ্যম পিটিআই ও ইন্ডিয়া টুডে সোমবার এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রাজধানী নয়াদিল্লিতে বিক্ষোভ চলাকালে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
খবরে বলা হয়, জওহরলাল নেহেরু, জামিয়া মিলিয়া এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের শত শত শিক্ষার্থী ইসরায়েলি দূতাবাসের নির্দেশে ফিলিস্তিনের উপর নির্বিচার হামলার প্রতিবাদে বিক্ষোভ করেছে। কয়েকটি ছাত্র সংগঠন এই প্রতিবাদ কর্মসূচির আয়োজন করে।
শিক্ষার্থীদের দাবি, গাজা উপত্যকায় আগ্রাসন দ্রুত বন্ধ করতে হবে। একইসঙ্গে মানবিক বিপর্যয় রোধে অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়নের আহ্বানও জানান তারা। কিন্তু দূতাবাসের প্রধান ফটকে পৌঁছার আগেই শিক্ষার্থীরা পুলিশের অবরোধের মুখে পড়ে। সেখানে অনেক লোক বসে যায় । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গ্রেফতার অভিযান চালানো হয়। যদিও পরে তাদের মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হয়।
কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, শিক্ষার্থীরা ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ করছিল এবং ইসরায়েলি দূতাবাসে পৌঁছানোর চেষ্টা করছিল। এরপরই পুলিশি ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
অল ইন্ডিয়া স্টুডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন (আইএসএ) দিল্লি ইউনিটের সভাপতি অভিষ্যান জানিয়েছেন, ছাত্রদের গ্রেপ্তার করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
একজন পুলিশ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, বিক্ষোভ চলাকালে দূতাবাসের সামনে যাওয়ার চেষ্টা করায় প্রায় ২০০ শিক্ষার্থীকে আটক করা হয়েছে। তাদের বিভিন্ন থানায় নিয়ে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, পুলিশ তাদের মারধর করেছে। যদিও পুলিশ এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
জেএনইউ ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ দাবি করেছেন, পুলিশের অভিযানে বহু ছাত্র আহত হয়েছে। তিনি অভিযোগ করেন, বিক্ষোভ শুরুর আগেই বেশ কয়েকজন বিক্ষোভকারীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তারা অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, বিক্ষোভের কোনো অনুমতি নেই।
বিক্ষোভকারীরা ফিলিস্তিনপন্থী স্লোগান দেয়। এক বিক্ষোভকারী বলেন, ফিলিস্তিনিদের সঙ্গে সংহতি প্রকাশের জন্যই এই বিক্ষোভ।
এদিকে ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় বলছে, গাজার স্বাস্থ্য ব্যবস্থা বর্তমানে ইতিহাসে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় রয়েছে। সোমবার গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ইসরাইলি হামলায় ২৪ ঘণ্টায় ৪৩৬ জন নিহত হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮২ জন শিশু। এ নিয়ে মোট মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৫ হাজার ৮৭ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে ২ হাজার ৫৫ জন শিশু। ১ হাজার ১১৯ জন নারী, ২১৭ জন বয়স্ক। আহত হয়েছেন ১৫ হাজার ২৭৩ জন।
এর আগে, বেসরকারি দাতব্য সংস্থা সেভ দ্য চিলড্রেন বলেছিল যে ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজা উপত্যকায় প্রতি ১৫ মিনিটে একজন শিশু নিহত হয়। মানবিক সংকটের কথা বিবেচনা করে সংগঠনটি অবিলম্বে গাজায় হামলা বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।