February 16, 2025
গাজায় খুব দ্রুত যুদ্ধবিরতি চায় যুক্তরাষ্ট্র

গাজায় খুব দ্রুত যুদ্ধবিরতি চায় যুক্তরাষ্ট্র

গাজায় খুব দ্রুত যুদ্ধবিরতি চায় যুক্তরাষ্ট্র

গাজায় খুব দ্রুত যুদ্ধবিরতি চায় যুক্তরাষ্ট্র

মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্থনি ব্লিঙ্কেন বৃহস্পতিবার মধ্যপ্রাচ্য সফরে গাজা উপত্যকায় যুদ্ধ শেষ করার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়েছেন। এ অবস্থায় স্থানীয় সময় শুক্রবার গাজায় খুব দ্রুত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ চেয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

বিশ্লেষকরা মনে করেন, প্রস্তাবটি একটি স্পষ্ট ইঙ্গিত যে  গাজা বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র ধীরে ধীরে ইসরায়েলের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতা থেকে সরে আসছে। প্রস্তাবটি পাস হবে বলে আশা করা হচ্ছে। কারণ, নিরাপত্তা পরিষদে যেসব যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব উত্থাপিত হয়েছিল তার সবগুলোই যুক্তরাষ্ট্র একাই ভেটো দিয়ে আটকে দিয়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে তারা ভেটো দেয়। বৃহস্পতিবার নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।

নতুন প্রস্তাবে ইসরায়েলের ওপর হামাসের ৭ অক্টোবর  হামলার নিন্দাও করা হয়েছে। প্রশ্ন উঠেছে, এর আগে বেশ কয়েকবার ভেটো দেওয়া যুক্তরাষ্ট্র এখন কেন নিজের থেকে যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব করছে? এর কারণ, মার্কিন কর্মকর্তারা বলছেন, কারণ তারা ভয় পেয়েছিলেন যে এটি জিম্মি মুক্তির আলোচনাকে ব্যাহত করতে পারে। তবে ইতিমধ্যে বাইডেন প্রশাসনের মধ্যে অনেকেই তাদের নীরবতা ভঙ্গ করছে এবং যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গাজায় একটি দুর্ভিক্ষ আসন্ন, যা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে চাপ দিচ্ছে।

খসড়া প্রস্তাবে বলা হয়েছে যে নিরাপত্তা পরিষদ গাজায় যুদ্ধবিরতির পক্ষে। তারা একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি চায়, উভয় পক্ষের বেসামরিক নাগরিকদের রক্ষা করতে এবং তাদের ত্রাণ পেতে অনুমতি দেয়। রেজোলিউশনে সমস্ত জিম্মিদের মুক্তির আহ্বান জানানো হয়েছে এবং আশঙ্কা করা হয়েছে যে সংঘর্ষের ফলে দুর্ভিক্ষ ও মহামারী দেখা দিতে পারে। গত ফেব্রুয়ারিতে জাতিসংঘে যে যুদ্ধবিরতি প্রস্তাব করা হয়েছিল, এবা “খুব দ্রুত এবং স্থায়ী” এর মতো আরও শব্দ শক্তিশালী ভাষা ব্যবহার করা হয়েছে –

ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু সম্প্রতি গাজার রাফাতে স্থল অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছেন। গাজা জুড়ে বাস্তুচ্যুতদের বেশিরভাগই রাফাতে আশ্রয় নিয়েছে। এ কারণে  এত ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় স্থল অভিযানে বিপুলসংখ্যক মানুষ নিহত হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করছে যুক্তরাষ্ট্র। তারা নেতানিয়াহু প্রশাসনকে রাফাতে অভিযান চালানো থেকে বিরত থাকতে বলেছে। কিন্তু ইসরাইল তাতে কর্ণপাত না করায় যুক্তরাষ্ট্র ক্ষিপ্ত হয়। এতে তাদের মধ্যে দূরত্ব বাড়তে থাকে।

বাইডেন প্রশাসন ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের সহায়তা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ মুসলিম আমেরিকানরা বাইডনের আমন্ত্রণে হোয়াইট হাউসে ইফতার ও ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় অনুষ্ঠানে যাবেন না। কাউন্সিল অন আমেরিকান-ইসলামিক রিলেশন্সের সরকারি বিষয়ক পরিচালক রবার্ট ম্যাকক বলেছেন, আমেরিকান মুসলমানরা যুদ্ধের শুরু থেকেই গাজায় যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে আসছে। তারা অন্তত রমজানের আগে  স্থায়ী যুদ্ধবিরতি আশা করেছিল। কিন্তু সেই প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। মুসলিম নেতারা বিশ্বাস করেন যে বাইডেন প্রশাসন গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যা বন্ধ করতে ব্যর্থ হয়েছে।

গাজায় ইসরায়েলের হামলায় প্রতিদিন গড়ে ৩৭ জন মা নিহত হয়। প্রতিদিন  গাজায় অনেক শিশুও মারা যাচ্ছে। আরব দেশগুলোতে ২১শে মার্চ মা দিবস পালিত হয়। রেড ক্রিসেন্ট একই দিনে এমন হৃদয়বিদারক তথ্য জানিয়েছে।

সংস্থাটি বলছে, অক্টোবরে হামাসের হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজায় বিপুল সংখ্যক নারীকে আটক করেছে। নারী বন্দীদের প্রতি সহিংসতাও বেড়েছে। বন্দীদের জিম্মি হিসেবে ব্যবহার করা হয় তাদের স্বামী ও সন্তানদের চাপ দিতে। নারী বন্দীদের মধ্যে সমাজকর্মীও রয়েছেন।

এদিকে, জাতিসংঘের মতে, ইসরায়েলি হামলার ফলে অবরুদ্ধ গাজায় কমপক্ষে ৪৩২০০০ লোক তাদের বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছে। ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় ১৩০০ স্থাপনা ধ্বংস করেছে।

ইসরায়েলের বিমান হামলা গাজা জুড়ে বাড়িঘর, স্কুলে আঘাত হেনেছে। এমনকি তারা গাজার বড় টাওয়ার ব্লক, স্কুল এবং আবাসিক ভবনে হামলা চালাচ্ছে। এতে বেসামরিক মানুষের প্রাণহানি ঘটছে।

জাতিসংঘের মানবাধিকার প্রধান ভলকার তুর্ক বলেছেন, “আন্তর্জাতিক মানবিক আইন স্পষ্টভাবে বলেছে  যে গাজায়  হামলার ঘটনায় বেসামরিক জনসংখ্যা এবং বেসামরিক জিনিসগুলিকে অবশ্যই রক্ষা করতে হবে।”

ইউরো-মেড হিউম্যান রাইটস মনিটরের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইসরায়েলি বাহিনী গাজায় বেসামরিক মানুষকে হত্যা করছে। ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গাজার হাসপাতালে জরুরি চিকিৎসা সহায়তার প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে একটি নিরাপদ করিডোরের আহ্বান জানিয়েছে।

ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী বলছে, ইসরায়েল এবং গাজা উপত্যকার আশেপাশে প্রায় ১৫০০ হামাস যোদ্ধার মৃতদেহ পাওয়া গেছে। তারা গাজা উপত্যকার ২০০ টিরও বেশি স্থানে হামলা চালায়।

ইসরায়েলি বিমান হামলায় গাজার বেসামরিক বাড়িঘর, স্কুল, কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আঘাত হেনেছে। এমনকি হাসপাতালও রেহাই পায়নি। ফিলিস্তিনিরা ভয়াবহ খাদ্য, চিকিৎসা ও জ্বালানি সংকটের সঙ্গে মানবিক সংকটের মুখোমুখি হচ্ছে। এই জন্যই যুক্তরাষ্ট্র গাজায় খুব দ্রুত ও স্থায়ী যুদ্ধবিরতি’ চেয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব দিতে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র।

আরও পড়ুন

গাজায় ত্রাণ লাইনে ফের গুলি চালিয়েছে ইসরাইল: চলছে রমজান

1 Comment

Leave a Reply

Your email address will not be published.

X